গর্ভবতী নারীদের যে ৬ টি বিষয়ে সতর্ক থাকা একান্ত উচিত

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর অনুভূতি হচ্ছে মা হওয়ার অনুভূতি। একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন তার কাছে পুরো দুনিয়ার চেয়ে তার অনাগত সন্তান বেশী প্রাধান্য পায়। এটাই চিরন্তন সত্য।

কিন্তু সময় বদলেছে। সেই সাথে বদলে গেছে আমাদের জীবন-যাপন, চিন্তাধারা। এখন আর নারীরা শুধুমাত্র সংসার, সন্তান এই গন্ডিতে আবদ্ধ নন। তারাও পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। আর সব সেক্টরে নারীদের জন্য গর্ভকালীন ছুটি বা সুবিধাও নেই।

6 things that pregnant women should be aware of
6 things that pregnant women should be aware of

এছাড়া অজ্ঞানতা, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি কারণে অনেক নারীই গর্ভকালীন সময়ে কি করণীয় আর কি করণীয় নয় তা জানেন না। আবার অনেকে জানলেও বিভিন্ন কারণবশত সেগুলো মেনে চলেন না।

এজন্য মিসক্যারেজ, অপুষ্ট শিশু বা গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দেয়। একটি প্রাণ পৃথিবীতে আসবে, তার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন, অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।

আজ আমরা এমনি কিছু সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করব যা গর্ভবতী নারীদের মধ্যে অবশ্যই থাকা উচিত৷ সুপ্রিয় পাঠক চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক। গর্ভবতী নারীদের যে ৬ টি বিষয়ে সতর্ক থাকা একান্ত উচিত:-

১. নিয়মিত চেকআপ

গর্ভবতী নারীদের প্রেগনেন্সির শুরুতেই গাইনি চিকিৎসক যে চেকআপ রুটিন দিয়ে দেন, সেই রুটিন অনুসরণ করতে হবে। কারণ গর্ভের বাচ্চার অবস্থান, হার্টবিট, কোন জটিলতা আছে কিনা তা জানতে নিয়ম মেনে চেকআপ জরুরী।

অনেকেই ভাবেন যে ২-৩ বার চেকআপ করালেই যথেষ্ঠ বা অনেক ব্যস্ততা বা সমস্যার কারণে নিয়মিত চেকআপ করান না। এক্ষেত্রে যেকোন সময় জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

কোন কারণে যদি বাচ্চার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়, বাচ্চা উল্টানো অবস্থায় থাকে, বা বাচ্চার মধ্যে কোন অসঙ্গতি থাকে তা চেকআপের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।

আর সঠিক সময়ে শনাক্ত না করা গেলে তা ভয়াবহ জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে যা মা ও শিশু দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।

২. প্রথম তিন মাস বাড়তি সতর্কতা

প্রেগনেন্সিতে প্রথম তিনমাসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ কারণ এ সময়ে বাচ্চার আকৃতি ধীরে ধীরে পূর্নতা পায়। এর আগে খুব ছোট্ট রক্তের পিন্ড থাকে যা অসতর্ক হলেই মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

এ সময়ে ভারী কাজ, সিড়ি দিয়ে ওঠানামা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, আঘাত, অতিরিক্ত মানসিক আঘাত গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তাই প্রথম তিনমাস এসব ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকুন এবং যথাসম্ভব বেড রেস্ট এ থাকুন। তাতে গর্ভপাতের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

৩. সকল ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করতে হবে

ধূমপান,মদপান বা অন্যকোন নেশা করা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শুধু যে ছেলেদের জন্য ক্ষতিকর তাই নয়, নারীদের জন্য আরও বেশী ক্ষতিকর।

যারা ধুমপান করেন তাদের কিডনি, লিভার, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে মিসক্যারেজ এবং গর্ভাবস্থায় বাচ্চার জটিলতা দেখা দিতে পারে।

মায়ের রক্তে সমস্যা থাকলে বা নেশা করার অভ্যাস থাকলে তা গর্ভকালীন সময়ে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই সকল ধরনের ধুমপান,মদপান এড়িয়ে চলুন।

গর্ভাবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকি থেকে নিজেকে এবং শিশুকে রক্ষা করতে নেশাকে একেবারেই না বলুন!

৪. ডায়েট চার্ট মেনে চলুন

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের মাঝে আরেকটি স্বত্ত্বা বেড়ে ওঠে। এজন্য সাধারণত যে পরিমাণ খাদ্যগ্রহণ করা উচিত তারচেয়ে ৪০০ ক্যালরি বেশী খেতে হবে। খাবার হতে হবে সুষম।

কোন খাদ্য উপাদান অনেক বেশী ব কম না হয়। কারণ সন্তানের পুষ্টি,স্বাভাবিক পুষ্টি ও অন্যান্য সমস্যা এড়াতে যে ধরনের খাবার বেশী প্রয়োজন সেগুলোই বেশী করে খান।

এখন আপনি একা নন, আপনার সাথে আছে আপনার অনাগত বাচ্চা। প্রথমদিকে মাথা ঘুরানো এবং বমি বমি ভাবের জন্য ঠিকমত খেতে পারেন না অনেকেই।

কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে বসে থাকেন এবং ডায়েট মেনে চলেন না। এতে করে প্রিম্যাচ্যুর বাচ্চা জন্মদানের ঝুঁকি বেড়ে যায়, বাচ্চার শারীরিক বিকাশ ঘটে না।

তাই সময়ের খাবার সময়ে খান, ডায়েটে সবরকম ফল-সবজী, মাছ-মাংস, জিংক, পটাসিয়াম, শর্করা, প্রোটিন এগুলো প্রতিদিনকার চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় রাখুন।

৫. উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ আছে তাদের গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশী। এজন্য যে সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে সেগুলো মেনে চলুন।

ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সুগার ও গ্লুকোজ পরিমিত খান। প্রোটিন ও শর্করা সঠিক পরিমাণে গ্রহন করুন। মায়ের যদি গর্ভাবস্থায় কোন বড় অসুখ হয় বা বংশগত কোন অসুখ থাকে তবে তা গর্ভের সন্তানের ক্ষতি করে।

এমনকি সন্তানও সেই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। তাই অসুখ নিয়ন্ত্রণে রেখে গর্ভাবস্থার সমস্ত করণীয় মেনে চলতে হবে।

৬. শারীরিক ও মানসিক যত্ন

গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি ও জটিলতা এড়াতে শারীরিকভাবে ফিট থাকা প্রয়োজন। ভারী কাজ করা নিষেধ হলেও হালকা ব্যায়াম বা অনুশীলন, ইয়োগা এগুলো করা উচিত৷ কারণ কেবল পুষ্টিকর খাবার আর বিশ্রামের ফলে মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর অতিরিক্ত ওজনের মায়েদের বেশী জটিলতা দেখা দেয়। তাই ছোট-খাট কাজ এবং অনুশীলন করুন। আর মানসিক অশান্তি এসময়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করতে পারে।

মিসক্যারেজ, খিচুনি, বাচ্চা ও মায়ের মৃত্যু এগুলো ঘটতে পারে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে। এগুলো যেন একেবারেই না ঘটে সেদিকে পরিবারের সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।

সবসময় যেন মা হাসিখুশি থাকেন,,আপনজনদের সান্নিধ্যে থাকেন তা নিশ্চিত করুন।

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন ও নিয়মিত অবজার্ভেশন। এ সময়ে একটু অবহেলা,অসতর্কতা কেড়ে নিতে পারে দুইটি প্রাণ। আমাদের দেশে এখনো মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশী।

কারণ আমাদের দেশে অর্থ ও সচেতনতার অভাবে অনেক মা গর্ভাবস্থায় নির্যাতনের স্বীকার হন, পর্যাপ্ত খাবার, যত্ন ও চিকিৎসার অভাবে মৃত সন্তান, মিসক্যারেজ অথবা মাতৃমৃত্যুর মত ঘটনা ঘটে। যা একটি পরিবারকে পুরো ধ্বংস করে দেয়।

কিন্তু এগুলো এড়াতে গর্ভাবস্থায় মায়ের নিজের পাশাপাশি পরিবারের সকলের যত্ন ও সহায়তা প্রয়োজন। ডাক্তার, হাসপাতাল, রক্তের যোগান রাখা উচিত যাতে শিশু জন্মের সময় যেকোন জটিলতা এড়ানো যায়।

গর্ভাবস্থায় ঠিকমত পুষ্টি, নেশাজাতীয় দ্রব্য ত্যাগ, মানসিক প্রশান্তি একটি সুস্থ সন্তান ও সুস্থ মা উপহার দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সতর্ক থাকুন। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করুন। আশা করি গর্ভাবস্থায় ৬ টি সতর্কতা বিষয়ক পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।

পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top