আলু বোখারা অতি উচ্চ মানের একটি মসলা জাতীয় ফসল। এটি ব্যবহারে খাবারে স্বাদ ও গন্ধ বেড়ে যায়। এর পাতা ও ফল সাধারনত মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এর অনেক ভেষজ গুন ও রয়েছে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে আলু বোখারা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
এতে করে আপনারা সহজেই আলু বোখারা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন আলু বোখারা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
আলু বোখারা সাধারনত শীতকালীন ফসল। শীতের পর এই গাছে ফুল আসে এবং ফল ধারন হয়। সাধারনত উর্বর বেলে দো আঁশ মাটি আলু বোখারা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মাটি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
মাটিতে বায়ু চলাচল করার ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস থাকতে হবে।
জমি তৈরিঃ
সাধারনত যেসব জমিতে অন্য ফসল ভালো হয় না সেসব জমি আলু বোখারা চাষ করার জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
জমি যেন আগাছা মুক্ত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে যদি পাহাড়ি এলাকা বা বাড়ির আঙিনা বা পুকুড় পাড়ে গাছ লাগানো হয় তবে জমি চাষ করার প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে জায়গা শুধু পরিষ্কার করে নিলেই হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ
আলু বোখারা চাষ করার জন্য সাধারনত মে মাস থেকে অক্টোবর মাস বিশেষ উপযোগী।
রোপন পদ্ধতিঃ
আলু বোখারা সাধারনত সমতল জমিতে রোপন করতে হবে। জমিতে সাধারনত বর্গাকারে বা ষড়ভূজ পদ্ধতিতে চারা রোপন করতে হবে। তবে পাহাড়ি জমিতে রোপন করতে হলে কন্টুর পদ্ধতিতে রোপন করতে হবে।
মাদা তৈরিঃ
চারা রোপন করার ১৫-২০ দিন আগে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদায় গর্ত তৈরি করতে হবে ৩-৪ মিটার দূরত্বে। প্রতি গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে। একটি গর্তে সাধারনত ১৫-২০ কেজি গোবর সার, ৩-৫ কেজি ছাই, টিএসপি ২০০ গ্রাম ও এমওপি ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
গর্তে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপন করতে হবে। প্রয়োজন জল সেচ দিতে হবে।
কলম রোপনঃ
চারা রোপন করার জন্য সাধারনত এক বছর বয়সী সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত চারা বাছাই করতে হবে। গর্ত সার প্রয়োগ করার ১০-১৫ দিন পর সেই গর্তে চারা রোপন করতে হবে।
চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন সোজা থাকে। চারার শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। চারা লাগিয়ে চারার গোড়ার চারদিকে মাটি দিয়ে সামান্য চেপে দিতে হবে।
প্রয়োজনে চারার সাথে খুটি বেধে দিতে হবে। তারপর জল সেচ দিতে হবে ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে প্রয়োজনীয় পরিমানে গোবর সার , ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমান বাড়বে। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
সবটুকু সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে, দ্বিতীয় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে ও তৃতীয় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে মাঘ ও ফাল্গুন মাসে। সার প্রয়োগ করার পর জল সেচ দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান করতে হবে। চারা রোপন করার প্রথম দিকে জমিতে সেচ দিতে হবে। মাটি শুকনা থাকলে মাটিতে সেচ দিতে হবে। জমি বেশি শুকনা হয়ে গেলে ফল ঝরে যাবার আশঙ্কা থাকে তাই শুকনা মৌসুমে জমিতে জল সেচ দিতে হবে।
তাহলে ফল ঝরা কমে যাবে ও ফলন বৃদ্ধি পাবে। সঠিক মাত্রায় সেচ প্রদান করলে ফলের আকার ও গুনগত মান ভালো হয়। তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যাবার জন্য নালা তৈরি করে দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমি নিয়মিত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে থাকে।
ডাল ছাটাইকরনঃ
গাছের কাঠামো সুন্দর রাখতে ডাল ছাটাই করে দিতে হবে। মরা ডাল পাতা, রোগাক্রান্ত ডাল কেটে ছাটাই করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
আলু বোখারা চাষে সাধারনত জাত ভালো হলে জমিতে রোগ বালাই দেখা যায় না। তবে কখনো কখনো পাতার দাগ রোগ ও লিফ স্পট রোগ দেখা যায়।
জমিতে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
ফল ভালোভাবে পরিপক্ক হবার পর তা সংগ্রহ করতে হবে। ফল যখন গাঢ় লাল রঙ বা হালকা খয়েরি রং ধারন করবে তখন ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফল নরম হলে তা সংগ্রহ করতে হবে।
হালকা হলুদ অবস্থায় সংগ্রহ করা যাবে না কারন তখন ফল অত্যন্ত টক বা তেতো স্বাদের হতে পারে।
ফলনঃ
একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যেতে পারে। এক হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৭-১০ টন ফল পাওয়া যেতে পারে।