5 Interesting Places to Visit Near Kolkata – কম খরচে এবং কম সময়ে কীভাবে খুব কাছেই ছুটি কাটিয়ে আসবেন তা নিয়ে আজকের আলোচনা। কলকাতা থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
কাছাকাছি রয়েছে বিশেষ কিছু আকর্ষনীয় স্থান, কিন্তু ১/২ দিন কিংবা দিনের দিন ঘুরে আসবেন কীভাবে এবং কোথায় যাবেন কীভাবে যাবেন সব কিছু নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত ভাবে:
১.গনগনি: গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
এই গনগনির নাম এখন বেশ জনপ্রিয়।যাকে বলা হয় বাংলার গ্রান্ড ক্যানিয়ন।পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় অবস্থিত গনগনি। এখানেই রয়েছে শিলাবতী নদী এই শিলাবতী নদীর জলের স্রোতে কয়েক হাজার বছর ধরে বৃহৎ খাদের সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মতোই শিলাবতী নদীর গনগনি একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের। চারিদিকে কাজু গাছের জঙ্গলে ঘেরা রাস্তা আর তারপরেই দেখা মিলবে শিলাই নদীর।
গনগনি র সূর্যাস্ত যেন আলাদা একটি মায়া রচনা করে। গভীর খাদের বাঁকে বাঁকে সূর্যের কমলা আলো মিশে একাকার হয়ে যায়।
গনগনি নিয়ে লোকমুখে প্রচলিত আছে কিছু ঐতিহাসিক কাহিনী যেমন বলা হয় পান্ডবরা তাদের অজ্ঞাত বাসের সময় এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সেই সময় একদিন যুধিষ্ঠির একজন ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানায় নদীর ওপারে বক রাক্ষস নামে একটি রাক্ষস আছে যার আহার হল গ্রামের মানুষ।
যুধিষ্ঠির এই কথা শুনে ভীমকে পাঠায় তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে।শোনা যায় ভীম ও বক রাক্ষসের যুদ্ধের ফলে ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয়েছে।
কীভাবে যাবেন গনগনি:
হাওড়া থেকে বাঁকুড়া পুরুলিয়ার দিকে যাওয়ার ট্রেনপথে পড়বে গনগনি।খড়গপুর/মেদিনীপুর থেকেও লোকাল ট্রেনে গড়বেতা যাওয়া যাবে।
বাসে বা গাড়িতে যেতে চাইলে ধর্মতলা থেকে বাস ছাড়ে। হাওড়া থেকে জাতীয় সড়ক ৬ হয়ে পাঁশকুড়া,ঘাটাল এবং চন্দ্রকোনা হয়ে গড়বেতা।
গনগনিতে থাকার জন্য আশেপাশে হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে।
দেখার জায়গা:
প্রাচীণ সর্বমঙ্গলা মন্দির,রাধাবল্লভ মন্দির, রাধানাথ সিংহ স্মৃতি মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, শ্যাম ভবনে শ্যামের মন্দির, আমলাগোড়া ও বাগডোবা জঙ্গল ইত্যাদি।
২. বিশ্রামবাগান বাড়ি: টাকি, কলকাতা
গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ট! একটু শান্ত গাছের ছায়ায় বসে ছুটি কাটাতে চাইলে টাকির বিশ্রামবাগান বাড়ি অসাধারণ একটি স্থান।
এখানে রয়েছে পুকুর, বিভিন্ন গাছ,পায়রা অনেক পাখি, মন্দির ইত্যাদি। এছাড়াও ওখানে গিয়ে দেখতে পারেন টাকির ইছামতি নদী, মাছরাঙা দ্বীপ, গোলপাতার জঙ্গল।
কীভাবে যাবেন:
ট্রেনে শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদ যাওয়ার লোকাল ট্রেনে করে টাকি রোড স্টেশনে নামতে হবে। ওখান থেকে টোটো করে যেতে হবে।
৩. ক্ষীরাই: পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি ছোট্ট গ্রাম। ফুলের সৌন্দর্যে ভরপুর এই গ্রাম যেন স্বপ্নের ঠিকানা। কলকাতা থেকে অল্প কিছু দূরে আড়াই ঘণ্টা পেড়িয়ে দেখে আসতে পারেন এই ফুলের গ্রাম।
বিভিন্ন ফুলের চাষ,রঙ বেরঙের ফুল যতদূর আপনার চোখ যাবে ফুলের সমুদ্র যেন। দৈনন্দিন জীবনের কংক্রিটের দমবন্ধ আবহাওয়া থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস এই ক্ষীরাই।
ক্ষীরাই নদীর নামানুসারেই পাঁশকুড়া ব্লকের অধীনস্থ এই জনপদের নামকরণ। মূলত শীতকালে বীজ ছড়িয়ে ফুলের চাষ করা হয় এখানে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে এখানে সবথেকে বেশি ফুলের চাষ করা হয়।
কীভাবে যাবেন:
হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী লোকাল ট্রেনে করে যেতে পারেন। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা মত সময় লাগে।পাশঁকুড়া স্টেশনে এর পরেই ক্ষীরাই স্টেশন। ওখানে নেমে টোটো করে কাঁসাই ব্রিজে যাওয়ার কথা বলবেন।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন ওখানে আশেপাশে বাথরুমে বা হোটেলের ব্যবস্থা নেই। খাওয়ার দোকান জলের সুব্যবস্থা নেই তাই সঙ্গে করে খাবার ও জল অবশ্যই রাখুন।দয়া করে ফুল দূর থেকে দেখুন ফুল ছিঁড়বেন না কারণ ওখানকার মানুষের জীবন জীবিকা এই ফুল চাষ করেই নির্বাপিত হয়।
৪. মুকুটমনিপুর: বাঁকুড়া
ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্ব প্রান্তে বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত মুকুটমনিপুর।যদি আপনি প্রকৃতি প্রেমী হন আর ঘুরতে ভালোবাসেন তবে মুকুটমনিপুর ঘুরে আসুন।
চারিদিকে প্রাকিতিক সৌন্দর্য, জঙ্গল, কংসাবতী নদীর নীল জল, শান্ত পরিবেশ সবুজ পাহাড়ের সারি আপনাকে মুগ্ধ করবেই।কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংযোগস্থলেই এই মুকুটমনিপুর।
ছোট্ট শহর মুকুটমনিপুরে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ড্যাম। এছাড়াও তৈরি করা হয়েছে ব্যারেজ।একে বলা হয় কংসাবতী ড্যাম।নীল জলে সূর্যের আভা আলোকিত হয়ে এক প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে।
সামনে তাকালে দেখা যায় পরেশনাথ পাহাড়। পাহাড় ও জলের এক অদ্ভুত মিলন স্থল এই স্থান।
কী দেখবেন:
এখানে প্রচুর জৈন মন্দির রয়েছে।৪ কিলোমিটার দূরত্বে অম্বিকানগরে জৈন মন্দিরটি অবস্হিত।প্রতিদিন প্রচুর জৈন ভক্ত এখানে আসে।এই মন্দিরে আরতি দেখতেও যাওয়া যায়।
কংসাবতী বাঁধ।১৯৫৬ সালে কংসাবতী নদীতে এই বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। বাঁধের নীচে বোটে করে ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে। ড্যামের নীচ দিয়ে বোটে করে নৌকা ভ্রমণ করতে প্রায় ২৫০/- টাকা মাথাপিছু কম বেশি লাগবে।
এছাড়াও মুকুটমনিপুরে ডিয়ার পার্ক রয়েছে।ইতিউতি হরিন দেখা যায়। সবুজ পাহাড়ের সারি চোখ জুড়িয়ে আসে।
কীভাবে যাবেন:
হাওড়া,সাতরাঁগাছি, শালিমার স্টেশন থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার ট্রেন রয়েছে। যেমন হাওড়া বোকারো প্যাসেঞ্জার, হাওড়া চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার,সাতরাঁগাছি থেকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস ইত্যাদি।কলকাতা থেকেও সরাসরি গাড়িতে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
কোথায় থাকবেন:
মুকুটমনিপুরে বিভিন্ন রেঞ্জের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও অনেক রেসর্ট রয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সোনাঝুরি রেসর্টেও থাকতে পারেন।আলাদা আলাদা কটেজ করে চারদিকে গাছ পালায় ঘরে মনোরম পরিবেশ।
৫. তাজপুর: পূর্ব মেদিনীপুর
যে কোনো ঋতুতেই বা বছরের যে কোনো সময় সমুদ্র সৈকত যাওয়ার বাধা নেই। চারিদিকে বালুকারাশি, সমুদ্রের গর্জন, ঢেউয়ের ছলকানি বাঙালির বরাবর প্রিয় সমুদ্র ভ্রমণ। দীঘার অনতিদূরেই অবস্থিত তাজপুর।
কলকাতা থেকে তাজপুরের দূরত্ব ১৮০ কিমি। সমুদ্রের ধারে হোটেল রেসর্ট, ঝাউবন,ভিড় জমজমাট নেই,নুন তৈরির প্রকল্প,লাল কাঁকড়া, নিরিবিলি সমুদ্রের ধার,ধারে বসে গা এলিয়ে মাছ ভাজা খাওয়ার সুযোগ রয়েছে অনেকটা উদয়পুর বিচের মতো।
কীভাবে যাবেন:
তাজপুর যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো গাড়ি নেই। হাওড়া থেকে দীঘা যাওয়ার ট্রেনে করে রামনগর স্টেশনে নামতে হবে। ওখান থেকে গাড়ি করে তাজপুর বিচে।অথবা গাড়ি বা বাইক ট্যুরও মন্দ নয়।
কোথায় থাকবেন:
দীঘা মন্দারমনির মত এখন তাজপুরেও গড়ে উঠেছে হোটেল রেসর্ট।আপনি অনলাইনে বুকিং করেও যেতে পারেন কিংবা ওখানে গিয়ে হোটেল দেখে বুক করতে পারবেন। খাওয়া দাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।