2023 কালীপূজা: 2023 Kali Puja History & Significance, 2023 কালীপূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন কালী পূজা কেন পালন করা হয়? বিধি কি? কালীপূজার প্রাচীন ইতিহাস
কালীপূজা 2023 (Kali Puja 2023): প্রাচীন গ্রন্থ অনুযায়ী তথ্য পাওয়া যায় যে কালি একটি দানবীর রূপ। মহাভারতে কালীর উল্লেখ রয়েছে, যেখানে যুদ্ধ এবং পশুদের আত্মা বহন করেন যিনি সেই তিনি কালরাত্রি কালী (Kalratri Kali) নামে পরিচিত।
জানা যায় নবদ্বীপের এক প্রান্তে যার নাম কৃষ্ণানন্দ তিনি প্রথম কালী মূর্তি পূজার প্রচলন করেন।
কালী পূজার ইতিহাস 2023:
অনেক দিন আগের কথা, দেবী কে সন্তুষ্ট করতে পশুর রক্ত বা পশুবলি করে উৎসর্গ করা হয়। এছাড়াও প্রসাদ হিসেবে লুচি এবং নানা রকম ফল ভোগ দেওয়া হয় তাকে। শক্তি দেবী হিসেবে শ্যামা মা, কালী মূর্তির আরাধনা করেন শাক্ত বাঙালিরা।
হিন্দু শাস্ত্র মতে বলা রয়েছে তন্ত্র মতে যেসব দেব-দেবীর পূজা করা হয় তাদের মধ্যে কালীপূজা (Kali Puja) অন্যতম। যারা তন্ত্র-মন্ত্র ক্ষমতায় বিশ্বাসী মানুষ, ক্ষমতার অধিকারী হতে চাইলে, নিষ্ঠা সহকারে কালীপূজা করে থাকেন অনেকে।
মা কালীর উৎপত্তির পৌরাণিক ব্যাখ্যা:
সনাতন ধর্ম শাস্ত্র অনুযায়ী মা কালীর আবির্ভাব সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হল পুরাকালের শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামক দৈত্য সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের ভয়ঙ্কর ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। দেবতারা ওই দুই দৈত্যের কাছে যুদ্ধে হার মেনে আত্মসমর্পণ করে, ফলে তাদের দেবলোক হাতছাড়া হয়ে যায়।
তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেব লোক ফিরে পাওয়ার জন্য আদ্যশক্তি বা মা মহামায়ার তপস্যা করতে থাকেন, তখন দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর শরীরের কোষ থেকে অন্য এক দেবীর সৃষ্টি হয় যা কৌশিকী নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত।
দেবী কৌশিকী মা মহামায়ার দেহ থেকে উৎপন্ন হলে কালো বর্ণ ধারণ করেন, যা দেবী কালীর আদিরূপ বলে ধরা হয়। কালী পূজার বিভিন্ন পদ্ধতি তান্ত্রিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ অমাবস্যার রাত্রে মন্ত্র উচ্চারণ এর মাধ্যমে কালী পূজা করা হয়। আগেকার দিনে দেবীকে সন্তুষ্ট করতে বলি দেওয়া হতো।
এক্ষেত্রে অনেক সময় জমিদার বাড়িতে ছাগল, মহিষ, বলি দেওয়া হতো এবং বর্তমানেও অনেক জায়গা গুলিতে বলির মাধ্যমে পূজার প্রচলন দেখা যায়। প্রাচীন সময়ে বিভিন্ন ডাকাতের দল নরবলির মাধ্যমে কালী পূজা করত বলে শোনা যায়।
2023 কালী পূজার শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
কালির একাধিক রূপ:
পুরান মতে দেবী কালীর একাধিক রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় যেমন দক্ষিণাকালী, শ্মশান কালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গ্রহ কালী, চামুন্ডা, ছিন্নমস্তা। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরে আনন্দময়ী, ভবতারিণী, ইত্যাদি নামেও মা কালীর পূজা করতে দেখা যায়।
কালী পূজার প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়:
কালীপূজার কালী শব্দটির কাল শব্দের স্ত্রী রূপ যার অর্থ হলো কৃষ্ণবর্ণ বা গুরু বর্ন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মহামায়া মা দুর্গার অন্য একটি রূপ হল কালী। প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী একটি দানবীর রূপ। মা কালী সাধনা করতেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়।
কালীপুজো কে জনপ্রিয় করে তোলেন এবং এইভাবে মা কালীর প্রতিমা পূজার প্রচলন শুরু হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার বিভিন্ন ধরনের জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজোর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।
দুর্গাপূজার পরেই যে অমাবস্যা তিথি আছে সেই তিথিতে কালী পূজা হয়ে থাকে। এমনটা হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। মায়ের পায়ের নিচে দেবাদিদেব মহাদেব শুয়ে থাকেন। আর এক হাত জিভ বের করে দাঁড়িয়ে আছেন মহাদেবের বুকের উপরে পা তুলে। এইরূপে সর্বত্র পূজিত হয়ে আসছেন মা কালী। কালী রূপে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনী।
শিবকে কাল বলা হয়, তাই শিবের স্ত্রী হিসেবে তিনি হয়ে উঠেছেন কালী। শাস্ত্র অনুসারে যে কালী সর্ব জনকে গ্রাস করে আর যিনি সেই কালকে গ্রাস করেন তিনি হলেন কালী। উৎপত্তিতে মহাপ্রলয়ের পেছনে রয়েছে এই কাল শক্তি মহাশক্তির ভিতরে বিলীন হয়ে যায়।
কালীর জন্ম কাহিনী:
কালীর জন্ম নিয়ে রয়েছে এক কাহিনী। মনে করা হয় যখন স্বর্গে অসুরের তান্ডব চলছে দেবতাদের স্বর্গরাজ্য দখলের উদ্দেশ্যে। ঠিক তখনই দেবতারা মিলে সৃষ্টি করেন দেবী দুর্গার, আর সেই অসুরের প্রধান ছিল রক্তবীজ সে ছিল দেবতাদের বর প্রাপ্ত।
বর অনুসারে তার এক ফোটা রক্ত মাটিতে পড়লেই তা থেকে জন্ম নিয়েছিল একাধিক অসুর, সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে মা দুর্গা তার দুটো ভ্রুর মাঝখান থেকে জন্ম দেন কালীর।
সেই কালীর ভয়াবহ মূর্তি, আর তার হাতেই একের পর এক অসুর বধ হতে থাকে। অসুরের শরীর থেকে এক ফোটা রক্ত ক্ষরণ হলেও তার জিব বের করে গ্রাস করতে থাকেন কালী। এভাবেই একের পর এক অসুর কে প্রথমে তিনি বধ করেন।
তারপর রক্তবীজ অসুরকে মেরে তার শরীরের সমস্ত রক্ত পান করে নেন কালী। তিনি এমনটা করেছিলেন যাতে এক ফোটা রক্ত নিচে পড়তে না পারে। অসুরের সব রক্ত শুষে নিয়ে তার রক্তশূন্য দেহ ছুঁড়ে ফেলে দেন, আর এই ভাবেই তিনি ধ্বংস করেন অসুরদের।
আমরা যে রূপে কালিকে পুজো করি, সেখানে কালীর পায়ের নিচে শুয়ে থাকেন শিব। আসলে অসুরদের হারিয়ে প্রবল বিজয় পেয়ে নিত্য শুরু করেছিলেন কালী। অসুরের মুন্ড নিয়ে তিনি বানিয়েছিলেন কোমরবন্ধ ও গলার মালা।
কাজেই তখন সবকিছু প্রায় ধ্বংস হতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় কালীকে শান্ত করার জন্য, সেই নৃত্য বন্ধ করার জন্য কালীর সামনে গিয়ে শুয়ে পড়েন শিব। তার পরে নিজের পায়ের নিচে স্বামীকে শুয়ে থাকতে দেখে জিভ কাটেন তিনি। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে সেই সময়কার সেই রূপ পূজিত হয়ে আসছে আজও।
কালী পূজার তাৎপর্য 2023:
অমাবস্যার রাতে দেবী লক্ষ্মীর পূজার পাশাপাশি, কালী পূজার তাৎপর্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। দেবী কালীর ভয়ংকর রূপ এর মধ্যেও সেই প্রেমময় এবং যত্নশীল মাকে দেখা যায়। তিনি তাঁর ভক্তদের চারপাশে থাকা সমস্ত নেতিবাচক শক্তিগুলিকে ধ্বংস করেন।
তিনি সর্বোচ্চ শক্তির প্রকাশ। তিনি তার ভক্তদের মধ্যে থেকে সমস্ত অশুভ, অশুচিতা, নেতিবাচকতা এবং অন্ধকার দূর করেন। দেবী কালীর উপাসনা করার মাধ্যমে একজন ভক্ত চিরকালের আশীর্বাদ লাভ করেন এবং তিনি তাঁর ভক্তদের সমস্ত ধরনের মন্দ কাজ থেকে মুক্তি করেন।
এক কথায় বলতে গেলে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এর জন্যই কালী পূজা করা হয়। প্রাচীন আর্য যুগ থেকেই ভারতে শক্তি উপাসনা প্রচলিত। সেই যুগে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তির পক্ষে ঠিকমত ব্যাখ্যা করতে পারত না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে তারা তখন নিতান্তই অসহায় ছিল। যেহেতু তারা সেই সমস্ত অলৌকিক ও দুর্জয় শক্তিকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করতেন।
প্রকৃতিকে শস্য-শ্যামলা মাতৃরূপে তথা মাতৃ শক্তি রূপে কল্পনা করা হতো। শ্রী শ্রী চণ্ডী, তাকে পরাশক্তির রূপে কল্পনা করা হয়েছে। বীজ থেকে যেমন অংকুর বের হয় এবং জীবের কোন বিকাশ ঘটে, ঠিক তেমনি সেইসব সৃজনশীল তারই সৃষ্টিশক্তি।
কালী দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপ। তার গায়ের রং কালো। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে ষড়রিপু এরা হলেন কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। ষড়রিপু আমাদের খারাপ পথে নিয়ে যায়।
যেহেতু মা কালী আদ্যা শক্তির দেবী অর্থাৎ শক্তি এবং সাহস অর্জন করার জন্য এই দেবীর পুজো করা হয়। কালী পূজার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভেতরে থাকা এই ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। মনের মধ্যে সকল অন্ধকার দূর করে সমাজের অন্ধকার দূর করতে সচেষ্ট হতে পারি। তাই শক্তির আরাধনা অবশ্যই প্রত্যেককে করতে হবে।
একমাত্র শক্তিমান মানুষই পারে সকল বিপদ থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে, কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। তাই সমাজের সকল খারাপ বা অসৎ এবং অসামাজিক কাজকর্ম দূর করার জন্য শক্তির আরাধনা স্বরূপ সকলেই দেবী কালীর পূজা ভক্তি সহকারে এবং শ্রদ্ধা সহকারে করে থাকেন।