ডিমের খোসার উপকারিতা জানলে, অবাক হবেন | Benefits of Eggshells

Benefits of Eggshells: ডিম এমন একটি নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার যা প্রত্যেক ঘরে কমবেশি থেকে থাকে। ছোট থেকে বড় সবাই কিন্তু ডিম খেতে ভীষণ পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে ‘ডিমে অরুচি’ এমন কথা শোনাই যায় না। তবে এই ডিম রান্না করার পর তার খোসা আমরা সাধারণত ফেলে দিই।

কিন্তু জানেন কি এই ডিমের খোসায় কত রকমের উপকারিতা পাওয়া যায়? শুধুমাত্র ডিমের ভিতর এর অংশটাই আমাদের শরীরের পুষ্টি যোগায় তা কিন্তু নয়, ডিমের খোসায় রয়েছে অনেক গুণাগুণ।

Benefits of Eggshells in Bengali
Benefits of Eggshells in Bengali

আমরা অনেকেই সেই গুনাগুন না জেনে সেগুলো কে ফেলে দিই। এই উপকারী জিনিসটাকে ফেলে না দিয়ে অনেক কাজে ব্যবহার করতে পারেন আপনি। রূপচর্চা থেকে শুরু করে ঘরের টুকিটাকি কাজে আপনি কিন্তু ডিমের খোসা ব্যবহার করতে পারেন।

হয়তো ভাবছেন ডিমের খোসায় আবার এমন কি উপকারিতা পাওয়া যায়? আপনি ঠিকই শুনছেন ডিমের খোসা আপনার অনেক কাজে আসতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ডিমের খোসার কিছু উপকারিতা (Benefits of Eggshells) সম্পর্কে-

১) গাছের ভালো খাদ্য :

বাড়িতে ছোটখাটো বাগান করা অথবা টবে গাছ লাগানো অনেকেই পছন্দ করেন। নিজের হাতে গাছের পরিচর্যা করে থাকেন যত্নসহকারে। সে ক্ষেত্রে গাছের ভালো খাবার হিসেবে ডিমের খোসার গুুুঁড়ো করে  দিতে পারেন গাছের গোড়ায়়।

ডিমের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যা গাছের জন্য অমৃত বলতে পারেন। ডিমের খোসা এক জায়গায় জড়ো করে সে গুলোকে গুঁড়ো করে গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে দিন, পোকামাকড়ের হাত থেকে গাছ কে বাঁচানোর পাশাপাশি তাকে আরো বেশি সুস্থ ও সতেজ করে রাখতে সাহায্য করবে।

২) পোকামাকড়ের উৎপাত থেকে রেহাই :

একটু অসাবধানতাবশত ঘরে পিঁপড়ের আগমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের পোকামাকড়ে উৎপাত হতে শুরু করে। অনেক রকম ওষুধ কিংবা স্প্রে দিয়ে কাজ না হওয়ার পরে ব্যবহার করতে পারেন ডিমের খোসা।

বাড়িতে যদি টিকটিকির উপদ্রব থাকে তাহলে ডিমের খোসা ব্যবহার করতে পারেন তাদের আসা-যাওয়া জায়গায়়, ঝুলিয়ে রাখুন ডিমের খোসা। ডিমের খোসার আলাদা একটা গন্ধ টিকটিকি ঘর থেকে পালাতে পথ পাবে না।

৩) বাতের সমস্যার সমাধান :

এখন তো বাতের সমস্যায় ভুগছেন প্রায় মানুষ। এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে ঘরোয়া টোটকাই কিন্তু কাজে আসতে পারে আপনার। এই মিশ্রণটি একবার লাগিয়ে দেখুন কাজ হবে ম্যাজিকের মত।

এটি বানানোর জন্য অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার এর সঙ্গে ডিমের খোসা গুড়ো একসাথে মিশিয়ে কম করে রেখে দিন দুদিন।

ডিমের খোসা যখন সম্পূর্ণভাবে ভিনেগার এর সাথে মিশে যাবে তখন ব্যবহার করুন বাতের জায়গায়। ফলাফল কিন্তু আপনি হাতেনাতে পেতে পারেন।

৪) ত্বকের যত্নে ডিমের খোসা :

ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য ডিমের সাদা অংশ তো অনেক ব্যবহার করেছেন, তবে ডিমের খোসা আবার ত্বকে কি কাজে লাগে, এটাই ভাবছেন তো? তবে ত্বকের যত্ন নিতে ডিমের খোসার উপর নির্ভর করতেই পারেন এটাই কিন্তু আপনার অনেকটা কাজ হাসিল হয়ে যাবে।

ডিমের খোসা একেবারে পাউডারের মতো গুঁড়ো করে তাতে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মুখে লাগান।

শুকিয়ে গেলে হালকা উষ্ণ গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে ত্বকের উপরে মরা চামড়া উঠে গিয়ে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করতে সাহায্য করবে।

তাছাড়া ডিমের খোসা গুড়োর সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়েও মুখে মাখতে পারেন। তারপর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

৫) রান্নার পাত্রে পোড়া দাগ তুলতে :

গৃহিনীদের সংসারের সব কাজ একা হাতেই সামলাতে হয়়, সে ক্ষেত্রে রান্নার পাত্রে পোড়া দাগও কিন্তু নিজে হাতেই তুলতে হয়়। সে ক্ষেত্রে অনেকটা কষ্ট আপনাকে করতে হয়।

এক্ষেত্রে বাসন মাজার সময় ডিমের খোসা গুড়ো করে মিশিয়ে নিন সাবান এর সাথে তারপর সেটা পোড়া অংশ এ দিয়ে মেজে ফেলুন। এরফলে কিন্তু খুব সহজেই পাত্রের পোড়া দাগ উঠে যাবে।

৬) ব্যথা উপশম করে :

ডিমের খোসায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অধিকমাত্রায় থাকার ফলে  হাড় এর জন্য বেশ উপকারী। যেকোনো হাড়ের ব্যথায় ডিমের খোসা গুড়ো লাগালে মুহূর্তেই স্বস্তি পেতে পারেন আপনি।

তাই শরীরে কোথাও ব্যথা অথবা চোট লাগলে ডিমের খোসা দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তার পাশাপাশি ডিমের অধিক গুনাগুন তো রয়েছেই।

৭) কালারফুল চক :

ডিমের খোসা দিয়ে কালারফুল চক বানিয়ে আপনার শিশুকে চমকে দিতে পারেন আপনি, কিভাবে? ডিমের খোসা ভালো করে গুঁড়ো করে নিন,

তারপর বিভিন্ন রঙের ফুড কালার অথবা যে কোন কালার মিশিয়ে নিন, তবে সে ক্ষেত্রে কালার টা যেন লিকুইড হয়। তারপর কোন একটি পাইপের মধ্যে ঢেলে দিন শুকিয়ে গেলে পাইপ কেটে সেগুলো কে বের করে নিন।

বিভিন্ন রঙের চক আপনি ঘরেতেই তৈরি করতে পারবেন ফেলে দেওয়া ডিমের খোসা দিয়ে। তা দিয়ে আপনার শিশু ব্লাকবোর্ডে সুন্দর ড্রইং করতে পারবে কালারফুল চক দিয়ে। তার সাথে তার খুশিটাও দেখতে পাবেন আপনি।

৮) ব্যবসায়িক পণ্য :

যে ডিমের খোসা আমরা ফেলে দিয়ে থাকি, তা দিয়ে বাণিজ্য করা যায় সেটা কি জানতেন? ঠিকই শুনছেন বিপুল অংকের ব্যবসায়িক পণ্য এই ডিমের খোসায়।

বিদেশে রপ্তানী করে অনেকেই এই ডিমের খোসা কে বাণিজ্য বানিয়েছেন, নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তা দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের ঘর সাজানোর জিনিস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

এসব উপকারিতা জানা থাকলে হয়তো আপনি কোনদিনও ডিমের খোসা ফেলে দিতেন না, কি তাইতো! অন্তত ঘরোয়া কাজকর্মে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন এই ডিমের খোসা।

পুষ্টিগুণে ভরপুর ডিম খাওয়ার পাশাপাশি ডিমের খোসা টাকেও ব্যবহার করতে পারলে বেশ ভালই হয়, তাই না!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top