যেসব ভুল ধারণার ফলে চুলের ক্ষতি করছেন নিজেই, জানুন ভুলগুলি

মাথাভর্তি চুল সকলেরই ইচ্ছা থাকে। সেক্ষেত্রে কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণ এবং ব্যস্ত জীবন যাপনের কারণে চুলের ক্ষতি হয়ে চুল একেবারে ঝরে গিয়ে মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তৈরি হচ্ছে।

অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া, অকালে চুল ঝরে যাওয়া, অকালে চুল সাদা হয়ে যাওয়া, চুলের ঘনত্ব কমে আসা, খুশকি, চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, নানান রকমের চুলের সমস্যা দেখা দেয়। আজ এই চুলের সমস্যা সবার মধ্যে কম বেশি রয়েছে।

এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই ঘরোয়াভাবে অনেক যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আদৌ যে সেই যত্নগুলো কাজে লাগে তাও কিন্তু নয়। এমন অনেক ভুল ধারনার ফলে আমরা নিজে থেকেই চুলের ক্ষতি করে চলেছি।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন সব ভুল ধারনাগুলো, যার ফলে আমরা নিজেরাই চুলের ক্ষতি করছি-

১) ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহার :

অনেকের ধারনা আছে যে, ক্যাস্টর অয়েল চুলের ঘনত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। আদৌ কি ক্যাস্টর অয়েল চুলের উপকার করেে?

বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে ক্যাস্টর অয়েল এমন একটি তেল যা চুলের ক্ষতিও করেনা আবার তেমন উপকারও করেনা। সেই জন্য এই ধারণা একেবারেই ভুল যে ক্যাস্টর অয়েল চুলের জন্য বিশেষ উপযোগী।

২) পেঁয়াজের রস :

চুল উঠে যাওয়ার সমস্যা কাউকে জানালে প্রথমই পেঁয়াজের রস লাগানোর কথা বলে থাকেে ।তবে পেঁয়াজের রস আপনার সত্যিই চুল পড়া বন্ধ করতে পারে কি? এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, পিয়াজের রসে থাকে সালফার, যা চুল পড়া রোধ করে।

তবে সব রকম চুল এবং স্ক্যাল্পের জন্য পেঁয়াজের রস কিন্তু সমানভাবে উপযোগী নয়়। তাই আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী পেঁয়াজের রস আপনার চুলে উপকারও করতে পারে আবার ক্ষতিও করতে পারে। সবরকম চুলের জন্য পেঁয়াজের রস উপকারী নয়।

৩) চুল কাটলে চুল বাড়ে :

এই কথাটাও সকলের মুখে কম বেশি শোনা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে চুল বাড়ে স্ক্যাল্প থেকে, ডগা থেকে নয়। কাটার ফলে চুল বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই তবে চুলের ডগা কাটার ফলে চুলের ঘনত্ব টা একটু বেশি মনে হয়।

তবে চুল বৃদ্ধির একটাই কারণ হলো স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখা। এই ধারণাটাও একেবারেই ভুল তাই অতিরিক্ত চুল কেটে নিজের চুল কে ছোট করে ফেলবেন না। তার পরিবর্তে স্কালপ কে সুস্থ রাখা, মশ্চারাইজ রাখার চেষ্টা করুুন। দেখবেন আপনার চুল স্বাভাবিক নিয়মে বাড়তে শুরু করেছে।

৪) সাদা চুল তুললে পরিমাণটা বাড়ে :

মাথায় পাকা চুল দেখা দিলে সেটা না তোলার জন্য অনেকেই বাধা দিয়ে থাকেন। কারণটা হলো একটা সাদা চুল তুললে সেই জায়গায় নাকি সাদা চুল এর পরিমাণটা অনেক বেড়ে যায়।

তবে এই ধারণা একেবারেই ভুল। একটা সাদা চুল তোলার ফলে সাদা চুল এর পরিমাণ কখনোই বেড়ে যায় না বরং সেই সাদা চুল টা তুলে ফেলা টাই বাঞ্ছনীয়, সবার সামনে সেটা দেখা দিলে আপনারই আত্মসম্মানে লাগবে।

৫) প্রচুর পরিমাণে তেল দেওয়া :

অনেকে মনে করেন যে চুলে এবং স্ক্যাল্পে প্রচুর পরিমাণে তেল দিয়ে রাখলে চুলের ভালো হয় এবং চুল তাড়াতাড়ি বাড়তে শুরু করে। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়, অতিরিক্ত তেল চুলে দিয়ে রাখলে বাইরের ধুলোবালি, ময়লা, অতিরিক্ত পরিমাণে চুলের জমাট বাঁধতে শুরু করে।

তার ফলে হতে পারে এলার্জির মতো সমস্যা। যে কোন জিনিসের একটা সময় এবং নিয়ম থাকে তাই চুলের তেল দিয়ে বেশিক্ষণ রাখাটাও চুলের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। একদিন চুলে তেল রাখা অনেক যথেষ্ট।

তারপর কোন প্রাকৃতিক শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলাটা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পরিমাণে বেশি তেল দেওয়া মানে চুলের জন্য বেশি উপকার এমনটা কিন্তু নয়়। যতটুকু তেল আপনার স্ক্যাল্পে লাগবে এবং সারা চুলে হালকা হাতে দিতে পারবেন ততটা পরিমাণে তেল ব্যবহার করুন। তার থেকে বেশি তেল নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।

৬) বেঁধে রাখলে চুল বাড়ে :

অনেকে চুল বাড়ার জন্য চুলগুলোকে টাইট করে বেঁধে রাখেন। এক্ষেত্রে কিন্তু চুল অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়়। কারণ চুল ও কিন্তু নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে অর্থাৎ খোলামেলাভাবে থাকলে চুুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে।

বাধা থাকলে সেটা সম্ভব হয় না। তাই সে ক্ষেত্রে চুলের ক্ষতি টাই বেশি হয়।চুলকে যতটা পারা যায় খোলামেলা রাখার চেষ্টা করুন। তবে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে চুল আলগা হাতে বেঁধে নেওয়া জরুরী। না হলে চুলের ডগা ফাটার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রাকৃতিক ভাবে চুলের যত্ন নেওয়াটা সবাই পছন্দ করেন। তবে এমন কিছু ভ্রান্ত ধারণা যদি মনে থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এখনই তা বাদ দিন। যার কারণে চুলের যত্ন নিতে গিয়ে, ভালো করতে গিয়ে আখেরে চুলের ক্ষতি টাই না করে বসেন।

তাছাড়া অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিলে চুলের বিশেষজ্ঞ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। হতে পারে আপনার শরীরে কোন ভিটামিন, প্রোটিনের অভাবে এমনটা হচ্ছে। তাই সেই সমস্যাটা সমাধান করুন ভিতর থেকে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভাস, লাইফস্টাইল সামান্য পরিমাণ পরিবর্তন করলেই হয়তো এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন আপনি। তবে ভুলেও আজেবাজে প্রসাধনী চুলে ব্যবহার করবেন না। স্ক্যাল্পকে খুশকিমুক্ত এবং ময়শ্চারাইজড রাখার চেষ্টা করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top