চুল আমাদের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। চুল পড়ার সমস্যা এখন প্রায় সবারই একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
সাধারণ সমস্যা হলেও এর পরিনাম সাধারণ নয়। অল্প বয়স থেকেই চুল পড়ে গেলে সেগুলো রিকভার না হলে চুলে টাক পড়ে যায়। আর চুল না থাকা মানে টেকো অপবাদ।
একজন মানুষের সব সৌন্দর্য মলিন করে দিতে টেকো মাথাই যথেষ্ট। বিভিন্ন কারণে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে দূষণ, পুষ্টির অভাব, অযত্ন, মানহীন হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার, আয়রনযুক্ত জল ব্যবহার ইত্যাদি।
চুল একবার পড়া শুরু হলে সেটা কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে একসাথে অনেক চুল পড়ে গেলে তা রিকভার করা সম্ভব হয়না।
অধিকাংশ মানুষ, ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই জানার প্রয়োজন একটি উত্তর সেটা হচ্ছে, চুল পড়া কমানোর কার্যকর উপায় কি!
সুপ্রিয় পাঠক আজ আমাদের আর্টিকেলটি সাজানো রয়েছে চুল পড়া কমানোর ৬ টি কার্যকর উপায় নিয়ে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন।
চুল পড়া কমানোর ৬ টি কার্যকারী উপায়:
১. ভেজা চুল বেধে না রাখা
অনেকেই স্নানের পর চুল রোদে, ফ্যানের বাতাসে বা হেয়ার ড্র্যায়ারে না শুকিয়ে বেধে রাখেন, বা ভালভাবে শুকান না, সেক্ষেত্রে চুলের গোড়ায় জল জমে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়।
ফলে অল্প টান লাগলেই চুল উঠে আসে৷ চুলের গোড়া নরম হয়ে গেলে তা শক্ত করাটা বেশ সময়সাপেক্ষ। এজন্য স্নানের পর চুল ফ্যানের বাতাসে অথবা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিন।
যদি ক্লাস বা অফিসে যাওয়ার আগে স্নান করেন এবং চুল শুকানোর সময় না থাকে, তবে পুরো চুল ভেজাবেন না। আর ভেজালে ক্লাস বা অফিসে গিয়ে সেখানকার এসি অথবা ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। কোনভাবেই ভেজা চুল বেধে রাখবেন না।
২. পেয়াজ ও মেথি ব্যবহার করুন
পেয়াজের রস চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে জাদুর মত কাজ করে। পেয়াজ পাটায় বেটে নিন, অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন।
এরপর রসটা ছেকে নিয়ে পরমাণমত জলের সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। এছাড়া তেলের সাথে পেয়াজের রস মিশিয়েও ম্যাসাজ করতে পারেন।
এভাবে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করার পর ৩০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে মাথায় চুলের গোড়া শক্ত হবে, নতুন চুল গজাবে।
চুলের জন্য মেথি খুবই উপকারী। মেথি বেটে তেলের সাথে মিক্সড করে ভুলে লাগান, এতে চুল উজ্জ্বল হবে, চুলের গোড়া মজবুত হবে।
নিয়মিত চুলে মেথি ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে যায়।
৩. চুলের ধরন বুঝে হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট
চুলের যত্নে আপনি যাই ব্যবহার করেন না কেন, তাতে কি উপাদান আছে, আপনার চুলের জন্য সেটা উপযোগী কিনা, প্রোডাক্টগুলো আসল নাকি রেপ্লিকা এগুলো চেক করে নিন।
আর চুলে অতিরিক্ত জেল, স্প্রে, এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। চুলের ধরন না বুঝে হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে তা চুলের কেবল ক্ষতিই করে।
অনেকের চুলেই অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিলে চুল ঘাসের মত এলোমেলো হয়ে যায়। আবার অনেকেরই হারবাল শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল পড়ে যায়, জড়িবুটি তেল দিলেও অনেকের সমস্যা হয়।
তাই কোন প্রোডাক্টগুলো আপনার জন্য ভাল আগে সেটা জেনে নিন, বা অল্প ব্যবহার করে টেস্ট করে নিয়ে ব্যবহার করুন।
চুলের ধরনভেদে আলাদা আলাদা তেল, কন্ডিশনার, শ্যাম্পু, সিরাম, স্প্রে, হেয়ার প্যাক রয়েছে। বিউটি এক্সপার্টদের থেকেও এ বিষয়ে সাজেশন নিতে পারেন।
৪. নিয়মিত হেয়ার প্যাক ব্যবহার
চুলের যত্নে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আপনার চুলে যে উপাদানগুলো স্যুট করে সেগুলো চিহ্নিত করে হেয়ার প্যাক বানাতে পারেন নিজেই।
যেমন চুল যদি খুবই রুক্ষ হয়, তাহলে ডিম, টকদই, মেহেদির রস একসাথে মিশিয়ে মাথার চুলে ৩০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। এরপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
আর স্বাভাবিক বা তৈলাক্ত চুলে নিমের গুড়া, চিনি ও মেহেদির রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এছাড়া কলা,মধু ও চিনির প্যাকও খুবই কার্যকরী।
আপনি যদি গৃহিনী বা চাকুরিজীবী হন আর সময়ের অভাব হয়, তাহলে বাজার থেকে চুলের ধরন বুঝে হেয়ার প্যাক কিনে ব্যবহার করতে পারেন।
এটা চুলের গোড়া মজবুত ও শক্ত করে। ফলে চুলপড়া কমে যায়।
৫. কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় না দেওয়া
অনেকেই এই ভুলটি করে থাকেন। কন্ডিশনার চুলে ব্যবহার করা হয়, যেন চুল নরম থাকে, এলোমেলো না দেখায়।
কিন্তু কন্ডিশনার যদি চুলের গোড়ায় ব্যবহার করা হয় তাহলে চুল নরম হয়ে যায়, আর চুল পড়ে যায়। দিনের পর দিন না বুঝে কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় ব্যবহারের কারণে অনেকেরই চুল পড়ার সমস্যা প্রকট হয়ে যায়।
এ সমস্যা থেকে বাচতে চুলের নিচের দিকে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তাহলে চুল নরম থাকবে। চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেবেনা।
৬. নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা
সবকিছুর যত্ন নিলেই তা সুন্দর থাকে। চুলের যত্নে নিয়মিত তেল দিতে হবে। তেল না দেওয়া হলে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, চুলে সহজেই জট বেধে যায়, এবং আচড়াতে গেলে প্রচুর চুল পড়ে যায়।
এজন্য সপ্তাহে ২-৩ দিন চুলে তেল দিন। শ্যাম্পু করার ৩০ মিনিট আগে হেয়ার প্যাক লাগান। প্যাক লাগানোর আগে চুল সুন্দরভাবে আচড়ে নিবেন।
তাহলে চুল ধোয়ার পর জট বাধবে না। চুল ধোয়ার পর চুলে চায়ের লিকার বা লেবু জল দিতে পারেন। এতে চুল ঝলমলে ও মসৃণ থাকবে।
চুলের গোড়াও শক্ত হবে। নিয়মিত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান, এতে চুল পড়া ও চুলের সমস্যা কমে যাবে। রাতে ঠিকমত ঘুমান ৭-৮ ঘন্টা।
এবং ঘুমানোর আগে চুল বেধে ঘুমান। এতে চুল ফাটবেনা এবং চুল পড়ার সমস্যাও হবেনা।
অন্তিম কথা
চুলের যত্ন নেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়, তবে এরজন্য কিছু নিয়ম এবং সময় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। অনিয়ম আর অযত্ন থেকেই মূলত চুল পড়ার সমস্যা হয়ে থাকে। তাই অনিয়ম করা যাবেনা।
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও জল খেতে হবে। ঠিকমত ঘুমাতে হবে, আর নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা, তেল দেওয়া, প্রতিদিন ২-৩ বার চুল আচড়ানো, হেয়ার প্যাক ব্যবহার, উপযোগী কন্ডিশনার ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়ার সমস্যা একেবারেই থাকবে না।
আশা করি আজকের পোস্টটি চুল পড়া কমাতে আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।