Flower Tea: ফুল সাধারণত পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তাইতো! তবে এটা কি জানতেন এই সব সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ফুলের চা আপনি যদি নিয়মিত পান করেন তাহলে আপনার মধ্যেও ফুলের মত সৌন্দর্য ফুটে উঠতে পারে!
ফুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি বাগানের শোভা বৃদ্ধি করে। তার সাথে সাথে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি মেটায়।
চলুন জানা যাক ফুলের চা পান করে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন:
#১) সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গোলাপের পাপড়ি এবং গোলাপের চা:
গোলাপ এমন একটি ফুল যা সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সবাই কে হার মানাতে পারে। গোলাপকে ভালবাসে না এমন মানুষ মনে হয় খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা নিজেদেরকে সুন্দর করে তুলতে অনেক সময় গোলাপের ব্যবহার করি।
কখনো চুলে গোলাপ লাগিয়ে নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করি, আবার কখনো গোলাপ জল ব্যবহার করে ত্বকের নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করি। কিন্তু আপনাদের যদি নিয়মিত গোলাপের চা পান করতে বলা হয় তাহলে কি অবাক হবেন!
যারা ফুলের চায়ের সম্পর্কে জানেন না তারা হয়তো প্রথমে একটু অবাক হবেন। তবে এটা অবাক হওয়ার কিছু নেই খুব ভালো একটি বিষয়, জানা না থাকলে জেনে নিন, ভালো লাগবে।
আপনি বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, কথাটা কিন্তু সত্যি গোলাপের চা আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে। বিভিন্ন প্রসাধনী, ঔষধে, গোলাপের পাপড়ি ব্যবহার করা হয়। অনেক খাবারে গলাপের পাপড়ি ছড়ানো হয় সেটিকে দৃষ্টি নন্দন করে তোলার জন্য।
ত্বক সুন্দর করে তুলতে গোলাপ জল ব্যবহার করা হয়, অথবা ফেসপ্যাক তৈরি, গোলাপ দিয়ে চা তৈরি করেও অনেকে পান করেন। তবে গোলাপ চা কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে না, আমাদের সারাদিনের ধকলে আমাদের শরীর মন ভালো করে তুলতেও সাহায্য করে।
কিভাবে তৈরি করবেন এই সুন্দর গোলাপ ফুলের চা:
সাধারণত আমরা চা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে থাকি। গোলাপের চা তৈরি করা খুব সহজ। আর সত্যি কথা বলতে কি, খেতেও কিন্তু দারুণ এর জন্য যা যা উপকরণ লাগবে সেগুলো জেনে নিন:-
#১) এককাপ গোলাপের পাপড়ি,
#২) তিন থেকে চার কাপ পরিমাণ জল,
#৩) সামান্য একটু আদা,
#৪) আধ ইঞ্চি দারচিনি,
#৫) স্বাদ মতো চিনি।
গোলাপ চা তৈরি করার পদ্ধতি:
গোলাপের চা তৈরি করার জন্য প্রথমে খুব ভালো করে গোলাপের পাপড়ি গুলো ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে গোলাপের পাপড়ি ও জল দিয়ে অল্প আঁচে পাঁচ মিনিট ফোটান। তারপর ৫ মিনিট পর আঁচ বন্ধ করে দিন।
আদা এবং দারচিনি হালকা গ্রেট করে চায়ের মধ্যে দিয়ে ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। আপনি যদি আদা বা দারচিনি পছন্দ না করে থাকেন সেক্ষেত্রে এলাচ গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। সেটা আপনার পছন্দমত। এক মিনিট ঢাকা দেওয়া অবস্থায় রেখে ছেঁকে নিন।
আপনি যদি চান তাহলে অন্য পদ্ধতিতেও গোলাপের চা তৈরি করতে পারেন। তবে এই পদ্ধতিটি একটু সময় সাপেক্ষ বটে। গোলাপের পাপড়ি গুলো ভালো করে ধুয়ে সুন্দর জায়গায় পাপড়িগুলি রোদে শুকিয়ে নিন এবং এর সঙ্গে আপনার রোজকার ব্যবহারের চা পাতা মিশিয়ে রাখুন। বাকি পদ্ধতি একরকম ভাবেই করতে পারেন।
তাছাড়া এত ঝামেলায় যদি না পড়তে চান বা সময় যদি আপনার না থাকে, সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি বাজার থেকে গোলাপের চা কিনে এনে জলে ফুটিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন।
বাজারচলতি গোলাপ চায় সাধারণত গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে অন্যান্য শুকনো কেমোমাইল, রোজমেরি মেশানো থাকে। দিনে দুবার করে গোলাপের চা পান করুন, এতে স্ট্রেস কমবে এবং আপনার সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পাবে।
গোলাপ চা এর উপকারিতা:
মেয়েদের পিরিয়ড সংক্রান্ত ব্যথা উপশম করতে পারে গোলাপ ফুলের চা। এতে আছে ভিটামিন C, যা কিনা ঠান্ডা-সর্দি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
আবার ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়। হজমের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে মানসিক চাপ দূরে রাখে। সেই সঙ্গে মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
#২) ল্যাভেন্ডার চা এর উকারিতা:
ল্যাভেন্ডার ফুল তার সুমিষ্ট গন্ধের জন্য বেশ পরিচিত। ল্যাভেন্ডার চায় হজম শক্তি বৃদ্ধিকারক উপাদান আছে। খিচুনি রোগ নিরাময় করতে ল্যাভেন্ডার চা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
#৩) চন্দ্রমল্লিকার চায়ের উপকারিতা:
একই রকম পদ্ধতিতে তৈরি করে নিতে পারেন সব রকম ফুলের চা। চন্দ্রমল্লিকা চায় আছে বি ক্যারোটিন যা কিনা যকৃতে পৌঁছে ভিটামিন এ তে পরিনত হয়।
তার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় চেহারায় বয়সের ভাঁজ আসতে দেয় না। শরীর শীতল রাখে, জ্বর ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
#৪) জুঁই ফুলের চা এর উপকারিতা:
জুঁইফুল একটি পরিচিত ফুল। এর মিষ্টি গন্ধ সবাইকে মাতিয়ে রাখে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। প্রাকৃতিকভাবেই পেশীর ব্যথা নিরাময়ের গুন রয়েছে এই ফুলের মধ্যে।
#৫) জবা ফুলের চা এর উপকারিতা:
অন্যান্য চায়ের মত জবা ফুলের চা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। জবা ফুলে আছে ডিউরেটিক প্রপার্টিজ। আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক কলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা আমাদের ভিটামিন সি এর ঘাটতি মেটায়। এর ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
#৬) অপরাজিতা চা এর উপকারিতা:
শরীরচর্চা এবং রূপচর্চার দিক থেকেও অপরাজিতার চা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ত্বক ও চুলের যত্নেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
হতাশা কাটানোর এক দারুণ ওষুধ হতে পারে এই অপরাজিতা চা অথবা ব্লু টি। এমনকি মারণব্যাধি ক্যানসারকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে অপরাজিতার চা।
অপরাজিতার চা বানাবেন কিভাবে:
প্রথমে অপরাজিতা ফুল গুলি হালকা হাতে ধুয়ে নিন। তারপর পরিষ্কার জায়গায় ফুলগুলি ভালোভাবে শুকিয়ে একটি কাচের বয়ামে রেখে দিন।
চা তৈরির সময় দেড় কাপ জলে ৫ থেকে ৬ টি শুকনো অপরাজিতা ফুল দিয়ে ফোটাতে হবে ধীরে ধীরে। ফুটন্ত জল নীল হয়ে আসলে কাপে ঢেলে চিনি মেশাতে হবে।
চিনি আপনার স্বাদমতো নেবেন, স্বাদ বাড়াতে লেবু যোগ করতে পারেন, তবে এতে নীল রং পাল্টে মেজেন্ডা কালার হয়ে যাবে লেবুর সংযোগে। তাছাড়া আরেকটু ভালো স্বাদ ও গন্ধের জন্য এলাচ, মধুু, পুদিনাপাতা যোগ করতে পারেন আপনার পছন্দমত।
অপরাজিতা চা এর উপকারিতা:
তাছাড়া অপরাজিতার চা বমির ভাব দূর করে। এটি একটি ভেষজগুণে সমৃদ্ধ ফুল। তবে বেশি খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যেকোনো জিনিস অতিরিক্ত হলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাই এটা স্বাভাবিক। অপরাজিতা চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য হজমে সাহায্য করে মস্তিষ্কের সমস্যা যেমন, ডিমেনশিয়া রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।