যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখবেন কিভাবে? জেনে নিন

বেশ কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিলেই যে কোন রকম পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারবেন আপনি। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার বিষয়টা অনেক সমস্যার সমাধানও করতে পারে।

এই পৃথিবীতে সবার চরিত্র সমান নয়, তেমনি সবার মন মানসিকতাও এক নয়, তাই অনেকেই আছেন হুটহাট রেগে যান। এমন এমন কথায় রাগ প্রকাশ করে থাকেন আদৌ সেই কথায় রাগ দেখানো টা মানায় না।

পুরো ঘটনাটা না শুনেই প্রথম দুলাইন শোনার পরেই একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। অল্পেতে প্রতিক্রিয়া দেখালেন আর কারো ক্ষতি হোক না হোক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা কিন্তু নিজেরই হয়।

সেটা হয়তো বোঝা যায় না, বা জানা যায় না। কিন্তু পরমুহুর্তে পুরো ঘটনা শোনার পর নিজেকে বেশি ছোট বলে মনে হয়। তবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যেকোনো পরিস্থিতিতে যে মানুষ নিজেকে যত বেশি শান্ত রাখতে পারবেন ততবেশি নিজেকে সামলে নিতে পারবেন।

নিজের উপরে বাড়তি কোনো চাপ এসে পড়বে না। ছোট ছোট বিষয় যেমন জীবনে আসে, আবার চলেও যায় তেমনি অতিরিক্ত ওভার অ্যাকটিং না করে শান্ত থাকার চেষ্টা করলে বিষয়টা স্বাভাবিক থাকে, অস্বাভাবিক হয়ে ওঠেনা।

যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখবেন কিভাবে?
যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখবেন কিভাবে?

তবে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে আমাদের আচরণের বহিঃপ্রকাশ। আর এই আচরণের বহিঃপ্রকাশ এর মাধ্যমে পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যক্তিত্ব, সবকিছুই প্রকাশ পায়। আর অন্যদিকে শান্ত এবং স্থির ভাবে কোন কাজ করলে, যেমন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুবই কম, তেমনি নিজেকে আরও বেশি ভালো ভাবে তৈরি করা যায় কোন কাজের জন্য। শান্ত মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে সেটাতে কিন্তু ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

এই বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের psycho-social কাউন্সিলর কাজী রুমানা হক এর থেকে জানা গিয়েছে আরও তথ্য। তিনি মনে করেন, “সফলতার মূলমন্ত্র হলো, স্থির থাকা এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সামাল দিতে পারার দক্ষতা। জীবনে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে, তবে সেই সব পরিস্থিতিতে আপনি কতটা শান্ত থাকতে পারছেন, আপনার জীবনের সবকিছু কিন্তু তার ওপরই নির্ভর করবে।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু বিষয় যেগুলো আপনাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে –

১) সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না :

হয়তো হতে পারে এমন কোনো ঘটনায় আপনি ভীষণ ভাবে বিরক্ত বোধ অনুভব করছেন। তাই সেই সময় কোন বিষয়ে সম্পূর্ণ না শুনে প্রথমেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাবেন না। আগে পুরো বিষয়টা শুনুন, বুঝুন তারপরে সেই অনুযায়ী আপনার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করুন। ধৈর্য ধরুন যতটা সম্ভব সেই ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করুন।

ঘটনার পিছনের কারণ জানার পর যদি মনে করেন যে এই ক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়া দেখানোটা উচিত, তাহলে প্রতিক্রিয়া দেখান, না হলে নয়। তবে সেক্ষেত্রে আপনার কাছে যথেষ্ট যুক্তি থাকা প্রয়োজন। এমনও তো হতে পারে যে আপনার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানোটা অন্য কারো মনে গভীর কষ্ট দিতে পারে।

২) ইতিবাচক থাকুন সবসময় :

যে ঘটনাই ঘটে যাক না কেন আমাদের জীবনে, সব ক্ষেত্রেই কিন্তু একটা চাপ অনুভব হয় আমাদের মধ্যে। সেই চাপের কারণে অনেক রকম দুশ্চিন্তা জড়ো হতে থাকে আমাদের মাথায়। এটা না হয়ে যদি ওটা হতো তাহলে হয়তো ভালো হতো।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনেকেই পড়েছেন। তবে সব ঘটনার পরিপেক্ষিতে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা একেবারেই ঠিক নয়। যেটা আমাদের শরীরের সাথে সাথে মানসিক ভারসাম্যও কিন্তু নষ্ট করতে শুরু করে। তাই ইতিবাচক চিন্তা করুন, নিজেকে শান্ত রাখতে পারবেন অনায়াসে।

৩) শরীরের যত্ন নিন :

মনকে শান্ত রাখার সাথে সাথে শরীরের যত্ন নেওয়াটার কিন্তু এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। শরীরের যত্ন একদিনে হয় না, তাই নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন করতে পারেন। যার ফলে আপনার মন সব সময় শান্ত থাকতে পারবে। শরীর যতটা সুস্থ থাকবে, মনও ততটাই সুস্থ থাকবে তার সাথে সাথে আপনি যদি মেডিটেশন করেন তাহলে মনে একটা আলাদা প্রশান্তির জন্ম হবে।

৪) ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন :

এমন কোন মুহূর্তে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করবেন না। এমন কোন ঘটনা, যে ঘটনায় আপনি উত্তেজনা বোধ করছেন, সেই সময় চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

চা কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন আমাদের উদ্দীপ্ত করে। অ্যাড্রিনালিন হরমোন এর প্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। তার ফলে আমাদের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র মাত্রায় বাড়তে থাকে। তবে এইসব উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে পারেন।

৫) পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলুন :

পারিবারিক হোক বা কর্মক্ষেত্রে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিজন অথবা বন্ধুবান্ধবের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারেন।

আপনার চিন্তাধারার সাথে আপনার বন্ধুর চিন্তা ধারা হয়তো নাও মিলতে পারে। তাই আপনার চিন্তা ধারায় যেটা এসছে সেটা তে সফলতা পাওয়ার সুযোগ হয়ত নেই, অথচ বন্ধুর চিন্তা ধারায় সফলতা পাওয়ার সুযোগ আছে, সেটা আপনার কাজে লাগবে।

তা ছাড়া অন্যের ভাবনাচিন্তা জানতে পারলে আপনার মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরিবর্তন আসতে পারবে। আবার কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে পরিস্থিতির কারণ গুলো আপনার কাছে সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

৬) রাগ প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা :

কথায় আছে রাগের কোন ধর্ম নেই। রাগ হল সহজাত একটি আবেগ, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়, নিজেকে কৌশলী হতে হয়। অতিরিক্ত রাগ দেখানোর আগে অন্যজনার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে সেই পরিস্থিতি অনুভব করার চেষ্টা করতে হয়।

তাহলে রাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধুমাত্র নিজের রাগ প্রকাশ না করে অন্যের মতামত জানার প্রয়োজন আছে। অন্যের কথা কে সম্মান জানিয়ে যে কোন পরিস্থিতি বোঝার মতো মানসিকতা রাখাটা প্রয়োজন।

৭) অটুট আত্মবিশ্বাস :

নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত রাখার জন্য আত্মবিশ্বাস থাকাটা ভীষন জরুরী। যেকোনো কাজ নিজে করতে পারব বা নিজে করার চেষ্টা করে সেটাকে সফল করতে পারবো, এমন মানসিকতা থাকা টা এতটাই জরুরী যে মনকে স্বাভাবিকভাবে শান্ত রাখা যায়।

তবে ওভার কনফিডেন্স একেবারেই ঠিক নয়। কোন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করে নিজের সেই কাজটা করতে পারার মতো মনোভাব থাকাটা অবশ্যই দরকার। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৮) নিজেকে ব্যস্ত রাখা :

কথায় আছে ফাঁকা মাথা শয়তানের বাসা। মানে যতক্ষণ আপনি নিজেকে কোনো ভালো কাজে ব্যস্ত রাখবেন ততক্ষণ আপনি কোন খারাপ কথা, খারাপ চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ পাবেন না। তবে যদি মনে করেন যে, নিজেকে ব্যস্ত রাখব কিভাবে! অনেক উপায় আছে, আপনি যদি মনে করেন তাহলে সেই উপায় গুলি গুণে শেষ করতে পারবেন না।

কোন মোটিভেশনাল বই পড়তে পারেন, আপনার অবসর সময়ে হয়তো বা হাতের কাজ, তাছাড়া বাগান করা, শরীরচর্চা করা, অনেক কিছুই রয়েছে অবসর সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য। শরীর চর্চার মাধ্যমে আপনার শরীর চর্চার সাথে সাথে সবার সামনে নিজেকে সুন্দর দেখাতেও পারবেন। তার সাথে সাথে আপনার অভিজ্ঞতা ও অনেকটা বাড়বে।

যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত রাখার কতটা গুণ সেটা আপনি যদি সব পরিস্থিতিতে নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারেন নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন। তাই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সমস্ত বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করে তারপরে প্রতিক্রিয়া দেখানোটা বুদ্ধিমানের কাজ। ভালো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা আপনাকে অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top