ডালিয়া ফুল খেজুর চাষের পদ্ধতি: “ডালিয়া” চমৎকার একটি রঙিন ফুলের নাম।যার নাম মনে হলেই প্রশ্ন জাগে কোন রঙের ডালিয়া ?
চমৎকার এ ফুলটির উৎপত্তি স্থান যদিও ম্যাক্সিকোতে ও আমেরিকায়, তারপরও এটি সমান দর্পে আমাদের- অর্থাৎ, বাঙালিদের আঙ্গিনায় শোভা পায়। আমরা যদিও একে ফুল গাছ হিসেবে চিনি! এটি একটি সপুষ্পক ভেষজ উদ্ভিদও বটে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে ডালিয়া ফুল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই ডালিয়া ফুল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। আসুন দেখে নিই ডালিয়া ফুল চাষের বিস্তারিত।
ডালিয়া ফুলের ইতিহাস
লর্ডবুট নামের এক ব্যাক্তি সর্বপ্রথম স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে সুইডেনের উদ্ভিতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল নিজের নামের অনুকরনে ফুলের নাম রাখেন ডালিয়া।তারপর এটি ছড়িয়ে পড়ে ডালিয়া নামে বিভিন্ন দেশে।
শ্রেণিবিভাগ ও জাত
ডালিয়ার প্রায় ৪২ টি প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে সংকর প্রজাতির গাছ গুলো আমাদের বাগানে দেখা যায় ।
উন্নত জাত গুলোর মধ্যে রয়েছে সিঙ্গল, স্টার, অ্যানেমিন , ফাওয়ার্ড, পিওনি-ফাওয়ার্ড, কলারেট, ফরমাল ইত্যাদি।
মাটি ও জলবায়ু
ডালিয়া চাষের জন্য ভাল মানের দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটির প্রয়োজন হয়। যে মাটিতে জল আঁটকায় না এমন মাটি নির্বাচন করতে হবে।ডালিয়া গাছ একটি রসালো জাতীয় গাছ, যার প্রচুর পরিমানে জলের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু মাটিতে কনভাবেই জল আঁটকে থাকতে পারবেনা। মাটি শুকিয়ে গেলে তা আবার ভিজিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ মাটির আদ্রতা বজায় রাখতে হবে। বৃক্ষপ্রেমিরা যদি প্রচুর ফুল চান ডালিয়া গাছে, তবে অবশ্যই চাষের জায়গাটি রৌদ্রঔজ্জ্বল হতে হবে ।
ছায়া যুক্ত স্থানে এ গাছ থেকে বেশি ফুল পাও্ইয়া যায়না। যে স্থানেই গাছ রোপন করা হবে, খেয়াল রাখতে হবে এর জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা যেন ভালো থাকে। না হয় জল জমে গাছে ফাংগাস হবে এবং জীর্ন শীর্ণ হয়ে গাছ মারা যাবে।
চারা রোপন ও সার প্রয়োগ
এ ফুলের চারা পশ্চীমবঙ্গের আশ্বিন কার্তিক মাসে আর ইংরেজি সেপ্টেমবর ও অক্টোবর মাসের দিকে রোপন করতে হয়। এর পরেও অবশ্য চারা রোপন করা যায়।
চারা রোপনের ক্ষেত্রে- যদি টবে চারা লাগানো হয় তবে অবশ্যই সর্বনিম্ন ৮ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ১০/১২ ইঞ্চি টবও নেয়া যেতে পারে। আর যারা মাটিতে চাষ করতে চান তাঁরা চারা রোপনের ১৫ দিন আগে থেকে ৮-১০ ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে গর্ত প্রস্তুত করবেন।
তারপর মিশ্রনটিতে ৪ ভাগের ২ ভাগ মাটি, ১ ভাগ বালি ও ১ ভাগে গোবর সার, হাড়ের গুঁড়ো ১ চামচ, সাথে নিমের খোল ১ চামচ মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।
যদি কেউ টবে গাছ লাগায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে টবে বালি দিয়ে নিবে, এতে করে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশিত হয়ে যাবে।
চারাটি রোপনের ১৫ দিন পর জল সেচ দেয়ার সাথে সাথে ৫ থেকে ৬ দানা করে DAP সার, ( তবে মনে রাখতে হবে দানা সারের চেয়ে জৈব তরল সারে গাছ দ্রুত গ্রহন করে)দিতে হবে। সাথে সর্শের খোলের পঁচা জল স্প্রে করতে হবে
খোল পঁচানোর নিয়মঃ
(১০০ গ্রাম খোল ১ লিটার জলের সাথে ভেজালেই খোল পঁচে যাবে। পঁচা জল ১০ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে নিচের তলানি গুলো ফেলে দিয়ে প্রতি ১৫দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করলেই গাছের গ্রোথ ভালো হবে ।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যে-দিন গাছে খোলের জল স্প্রে করবেন তার আগের দিন গাছে জল দেয়া যাবেনা।
পরিচর্যা ও কাটিং যদি গাছে বেশি ফুল চান তবে গাছকে অবশ্যই কমপক্ষে ৪/৫ ঘন্টা রোদ লাগাতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যত বেশি জায়গা নিয়ে বা রিপটিং করে এ গাছ লাগানো যায়, ততই গাছে ফুল আসবে।
আর মনে রাখতে হবে এ গাছে যত বেশি ডাল হবে তত বেশি ফুল আসবে।এ গাছের ডাল বা শাখা কাটিং করেও কিন্তু নতুন চারা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে শাখা গুলো কেটে জলে ভিজিয়ে তারপর বালি দিয়ে হরমোন রুটিং করে চারা বসিয়ে দেয়া যাবে।
যারা একটি গাছে একটি ফুল চান তারা গাছের আশ-পাশের শাখা গুলো কেটে দিবেন তাতে করে একটি ডালে একটি বড় ফুল আসবে। এছাড়া পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করার জন্য নিমের তেল স্প্রে করতে হবে প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর। গাছে যদি ফাংগাসের আক্রমন হয় তাহলে SAFF/FUNGICIDE স্প্রে করতে হবে।
চারা রক্ষনাবেক্ষন
ডালিয়া ফুলের গাছ তিন ভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে, ১. ফুলের বীজ থেকে, ২. গাছের মূলের কন্দ/বাল্ব থেকে, ৩. শাখা কলম বা জোর কলমের মাধ্যমেও নতুন চারা তৈরি করা যায়।
ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে যখন গাছে ফুল কমে আসে তখন, গাছ ও পাতা শুকিয়ে আসলে গাছ কেটে মাটির ভেতরে থাকা কন্দ গুলো উঠিয়ে নিব এবং ৩-৪ দিন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিব।তারপর শুকনো কন্দ গুলো ভালোভাবে মুছে এতে SAAF/ FUNGICIDE পাউডার অথবা হলুদের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিব।
এছাড়াও ছাই দিয়েও পরিষ্কার করে রাখা যায়। তারপর কম তাপমাত্রায় কাগজে মুড়ে রাখতে হবে।পরবর্তি বছরে যে কুশিগুলো গজাবে সেগুল সহ পরবর্তী বছরের চারা রোপন করতে হবে। এভাবেই ডালিয়ায় বীজ সংরক্ষন করতে হবে।