মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ। এটি দেখতে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো। মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা দেখতে প্রায় একই রকম হলে ও এদের মধ্যে অনেক ভিন্নতা রয়েছে।
যেসব মাশরুম প্রকৃতিতে এমনি জন্মায় সেগুলো বিষাক্ত থাকে তাই সেগুলো খাওয়ার উপযোগী নয়। মাশরুম সূর্যের আলোয় খুব বেশি একটা জন্মে না তাই একে চাষ করতে হয়।
এটি অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। এটি চাষ করতে তেমন কোনো আবাদি জমির দরকার হয় না। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা মাশরুম রয়েছে প্রায় ৩ লাখ প্রজাতির।
তবে মাত্র ৮-১০ প্রজাতির খাবার উপযোগী মাশরুম খাওয়ার জন্য চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে মাশরুম চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই মাশরুম চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নেই মাশরুম চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাশরুম চাষে স্থানঃ
মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই এর জন্য বাইরে খোলা জমির দরকার হয় না। এটি চাষ করার জন্য দরকার হয় ছায়াযুক্ত স্থান ।
বাশের চালা বা খড় দিয়ে তৈরি ঘরে মাশরুম চাষ করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়াল বা বাশের বেড়া দিয়ে ও ঘর তৈরি করা যেতে পারে।
মাশরুম সূর্যের আলোয় হয় না তাই ঘরে যেন আলো প্রবেশ না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
মাশরুম চাষে কিছু উপকরন দরকার হয়ে থাকে।
বীজ, ধানের খড়, পাতলা পলিথিন, ঝুলন শিকা বা বাশ, ছিদ্রযুক্ত কালো পলিথিন শিট, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্য হ্যান্ড স্প্রেয়ার, জীবানু নাশক, ব্লেড বা ছোট ছুরি, বালতি ইত্যাদি জিনিস পত্র মাশরুম চাষে দরকারি।
চাষ পদ্ধতিঃ
অয়েস্টার মাশরুম চাষে কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে। নিচে এগুলো দেয়া হলো।
১ম পদ্ধতিঃ
মাশরুম চাষে প্রথমে তার বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ প্যাকেট আকারে পাওয়া যায়। এই বীজের দুই পাশে গোল করে কেটে কিছুটা অংশ চেছে নিতে হবে।
তারপর এই প্যাকেট আধা ঘন্টা জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আধা ঘন্টা পরে তা তুলে নিতে হবে।
জল থেকে তুলে প্যাকেট কিছুক্ষণ উপুড় করে রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায় প্যাকেট থেকে। তারপর একটি স্থানে রেখে দিতে হবে।
প্রতিদিন এর উপর ৩-৪ বার করে জল ছিটিয়ে দিয়ে ভিজাতে হবে। ৩-৪ দিন পর সাধারনত কাটা জায়গা থেকে অঙ্কুর গজায়।
অঙ্কুর গজানোর পরে সেখানে মাঝে মাঝে জল ছিটিয়ে দিতে হয়। পরিপক্ক বা খাওয়ার উপযুক্ত মাশরুম হতে সময় লাগবে ৫-৬ দিন।
পরিপক্ক মাশরুম উৎপন্ন হলে তা গোড়া থেকে তুলে নিতে হবে। বীজের যে স্থান কাটা হয়েছিল সেখানে ব্লেড দিয়ে একটু জায়গা চেছে দিতে হবে।
তাহলে পরে ঐ জায়গা থেকে আবার মাশরুম গজাবে।
সাধারনত একটি আধা কেজি ওজনের বীজের প্যাকেট থেকে ৩-৪ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। এই ৩-৪ বারে মোট ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।
২য় পদ্ধতিঃ
আরেকটি পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করা যায়। তা নিচে দেওয়া হলো।
এই পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এক কেজি ওজনের প্যাকেট। এই প্যাকেটের পলিথিন খুলে তার ভিতরের কম্পোস্ট সার গুড়ো করে নিতে হবে ।
এরপর ২ কেজি পরিমান ধানের পরিষ্কার ও শুকনো খড় নিতে হবে । এই খড়গুলোকে ১ ইঞ্চি পরিমাপ করে নিয়ে কেটে টুকরা করতে হবে ।
পরিমান মত জল নিয়ে ফুটাতে হবে। খড় জীবানুমুক্ত করার জন্য ফুটানো জলের মধ্যে খড় গুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে এক ঘন্টা।
এই খড়গুলো পরে জল থেকে তুলে নিয়ে চিপে নিয়ে জল শূণ্য করে ১টি পাত্রের মধ্যে রাখতে হবে।
এরপর ৫টি পলিব্যাগ নিতে হবে এবং এর ভেতর প্রথমে কিছু খড় বিছিয়ে নিতে হবে এবং খড়ের উপর মাশরুম বীজের গুড়ো বিছিয়ে দিতে হবে।
এভাবে একটি পলিব্যাগের ভিতর ৪ স্তরে খড় এবং মাশরুম বীজের গুড়ো বিছিয়ে দিতে হবে। সবার উপরে আবার খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
খড় বিছানো শেষ হলে পলিথিন খুব শক্ত করে বেধে দিতে হবে। প্রতিটি পলিব্যাগের চার পাশে ১০-১২ টি করে ছিদ্র করে দিতে হবে। তারপর পলিব্যাগ গুলোকে বীজে পরিনত হওয়ার জন্য ১৫-১৮ দিন রেখে দিতে হবে।
১৫-১৮ দিন পর বীজ গুলো দলা হয়ে যাবে । পরে সেগুলো বের করে নিতে হবে। এই বীজের দলা গুলো শিকায় ঝুলিয়ে রেখে প্রতিদিন ৪-৫ বার জল ছিটিয়ে দিতে হবে।
এভাবে রাখার ৩-৪ দিন পর বীজের চার পাশ থেকে অঙ্কুর গজানো শুরু হবে আর তার ৪-৬ দিন পর মাশরুম খাওয়ার উপযুক্ত হবে।
এভাবে চাষকৃত মাশরুম চাষে লাভ বেশি হয়। কারন এভাবে চাষ করলে প্রতিটি পলিব্যাগ থেকে প্রায় আধা কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। তাহলে ৫ টি পলিব্যাগ থেকে প্রায় আড়াই কেজি মাশরুম পাওয়া যায়।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
মাশরুম চাষে রোগ বা পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাশরুম চাষে এক ধরনের মাছির উপদ্রব দেখা দেয় ।
এ ধরনের উপদ্রব দেখা দিলে তখন লাইট ট্রপ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সবুজ বাদামি বা নীল মোল্ড দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে লবন ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে মাশরুম চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।