সূর্যমুখী একটি ফুল হলে ও এটি আসলে তেল জাতীয় ফসল। এর বীজ থেকে তেল তৈরি করা হয়ে থাকে।
হৃদরোগীদের জন্য এর তেল খুবই উপকারী। ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রান্নায় এটি ব্যবহার করা যায়। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি ও ই।
আজ আমরা আপনাদের সাথে সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই সূর্যমুখী চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নেই সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
জমি ও মাটিঃ
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সূর্যমুখী চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ মাটি সূর্মুমুখী চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
সময়ঃ
প্রায় সারা বছরই সূর্যমুখী চাষ করা যেতে পারে। তবে অগ্রহায়ন মাসে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এর চাষ করা যেতে পারে।
জমি তৈরিঃ
সূর্যমুখী বীজ বপন করতে হলে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মাটিতে আলগা করে দিতে হবে যাতে মাটিতে প্রয়োজনীয় আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
বীজের হারঃ
সারিতে বীজ বপন করলে হেক্টর প্রতি সাধারনত ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বপন পদ্ধতিঃ
সূর্যমুখী বীজ সারিতে বপন করতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব ৫০ সেমি রেখে গাছ লাগাতে হবে।
এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব হবে ২৫ সেমি।
বীজ শোধনঃ
বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। মাটি ও বীজ থেকে যেন রোগ ছড়াতে না পারে সেজন্য বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম।
বীজ শোধন করার ফলে বীজ বাহিত রোগ আক্রমন করতে পারে না। ফলে জমির ফলন ভালো হয়।
বীজ শোধন করার জন্য ভিটাভেক্স ২০০ প্রয়োগ করতে হবে। এক কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স প্রয়োজন হয়ে থাকে।
একটি বড় প্লাস্টিকের পাত্রে বীজ নিতে হবে। পাত্রটি ঢাকনাযুক্ত হতে হবে। তারপর পরিমান মতো বীজ নিয়ে পরিমান মতো ঔষধ মিশিয়ে মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে এবং ভালো করে ঝাকি দিয়ে নিতে হবে।
তারপর এটি ১ দিন রেখে দিতে হবে। পরে এটি জমিতে বপন করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া দিতে হবে ১৮০-২০০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১৫০-২০০ কেজি, এমপি দিতে হবে ১২০-১৫০ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ১২০-১৭০ কেজি।
শেষ বার জমি চাষ করার সময় ইউরিয়া সার অর্ধেক এবং বাকি সব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের বাকি অর্ধেক দুই ভাগ করতে হবে।
দুই ভাগ করে প্রথম ভাগ দিতে হবে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আর দ্বিতীয় ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার আগে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে কয়েকবার সেচ দিতে হবে। প্রথম বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ৩০ দিন আগে, দ্বিতীয় বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ৫০ দিন পর।
আর তৃতীয় বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ৭০ দিন পর। বীজ লাগানোর পর বীজ পরিপক্ক হবার আগে সেচ দিতে হবে।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যাওয়ার জন্য।
আগাছা দমনঃ
জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমি সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
আগাছা জমলে তা তুলে ফেলতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
গাছ পাতলা করনঃ
গাছ অতিরিক্ত ঘন হয়ে গেলে পাতলা করে দিতে হবে। চারা গজানোর পর ১৫-২০ দিন পর ১টি করে সুস্থ চারা রেখে বাকি গুলো তুলে ফেলতে হবে।
এছাড়া চারার গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে। গোড়া মজবুত করে দিতে হবে যাতে গাছ হেলে না পড়ে।
প্রয়োজনে মাটি আলগা করে দিতে হবে যেন গাছ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় সার গ্রহন করতে পারে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
সূর্যমুখী গাছে কিছু রোগ আক্রমন করতে দেখা যায়। তার মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগ , শেকড় পচা রোগ অন্যতম।
পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দিলে রোভরাল ৫০ প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে। এবং ফসল কাটার পর পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
শেকড় পচা রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স ২০০ প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত জল থাকতে হবে তাহলে এ রোগের বিস্তার কম হয়।
সূর্যমুখী গাছে বিছা পোকার আক্রমন দেখা যায়। পোকা আক্রমন করার সাথে সাথে পাতাসহ পোকা সংগ্রহ করতে হবে এবং তা মেরে ফেলতে হবে।
তাছাড়া কেরোসিন মিশ্রিত জল দিয়ে ও পোকা মেরে ফেলা যায়।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপন করার পর থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০-১১০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
ফলনঃ
উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে প্রতি হেক্টরে ফলন হবে ১.৬-১.৮ টন।