জমি কেনা একটা মানুষের জন্য স্বপ্নের মত। আমরা সবাই চাই আমার মালিকানায় ভালো জায়গায় কিছু জমি থাকুক। এজন্য আমরা আমাদের সঞ্চয়ের একটা বড় অংশ জমিতে বিনিয়োগ করতে চাই। কিন্তু আমাদের সমাজে জমি কেনা অনেক ঝামেলার একটা ব্যাপার, যেখানে অনেক প্রতারক চক্র আমাদের মিথ্যা কাগজপত্র ও আশ্বাসে ভুলিয়ে প্রতারণার সুযোগ নিতে চায়।
তাই আমরা অনেকেই জমি সংক্রান্ত বিষয় না জানার কারণে জমি কিনতে গিয়ে হিমসিম খাই। এজন্য আমাদের সবারই জমি কেনার প্রক্রিয়া জেনে রাখা উচিত। যাতে করে জমি কেনার সময় কোন ঝামেলায় পড়তে না হয় সেই সাথে প্রতারক চক্র কে প্রতারণা করার সুযোগ করে না দেই।
আমাদের সাইটে আমরা নিয়মিতভাবে আপনাদের জন্য জমি বিষয়ক কিছু তথ্য নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা জমি কেনার সময় কি কি প্রক্রিয়া অনুসরন করতে হয় তার বিস্তারিত আলোচনা করবো। আসুন দেখে নিই জমি কেনার সময় কি কি প্রক্রিয়া অনুসরন করতে হয়।
জমি কেনার প্রক্রিয়াগুলি জেনে নিই
এখন আমরা জমি বা প্লট কেনার সময় কি কি প্রক্রিয়ায় যেতে হয় তার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করবো।
জমির দলিলের মূল কপি যাচাই করা
জমি কেনার শুরুতেই জমির দলিলের মূল কপি দেখে নিতে হবে। সেই থাকে ভালো করে লক্ষ করতে হবে যে দলিলে উল্লেক্ষিত ব্যক্তি আর আজকের বিক্রেতা একই ব্যক্তি কিনা। একই ব্যাক্তি না হলে কোন ভাবেই এই জমি কেনায় আগানো যাবে না।
অনেক সময় জমির জাল দলিল সরবরাহ করা হয়। এতে করে জমির ক্রেতার ঠকার সম্ভাবনা থাকে। তাই জমি কেনার প্রক্রিয়ার শুরুতেই আপনি দলিলের মূল কপি বুঝে নিন এবং সেই সাথে দলিলের সাথে বিক্রেতার মিল আছে কিনা তা দেখে নিন।
রেজিস্টার অফিসের ক্লিয়ারেন্স
জমি কেনার সময় দলিল যাচাই করার পর যেটা দেখতে হবে তা হলো, জমির কোন আইনি সমস্যা আছে কিনা, সেই সাথে সরকারের নিকট কোন খাজনা বাকি আছে কিনা তাও যাচাই করতে হবে। এসব যাচাই না করে জমি ক্রয় করলে সব বকেয়া খাজনা এবং অন্য কোন সমস্যা থাকলে তা ক্রেতাকে বহন করতে হবে।
ক্রেতাকে কি কি কাগজপত্র দেখতে হবে?
আসুন দেখে নি জমির ক্রেতাকে কি কি কাগজপত্র যাচাই করে নিতে হবে।
১) জমির মূল দলিল । মূল দলিলে পূর্বের মালিকের নাম সঠিকভাবে থাকতে হবে।
২) সাব রেজিস্টার অফিস হতে গত ৩০ বছরের এই জমির কোন মামলা আছে কিনা তার প্রমাণপত্র ।
৩) জমির নামে কোন ব্যাংক ঋন থাকলে তা সম্পূর্ন পরিশোধের ছাড়পত্র।
৪) জমির সকল খাজনা পরিশোধের রশিদ।
৫) জমির দলিলটি সরকারীভাবে রেজিস্ট্রি করা আছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া।
৬) স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেয়ার রশিদ
৭) জমির নকশা বুঝে নেয়া।
জমির দাম সাব্যস্ত হওয়া
জমির কাগজপত্র বুঝে নেয়া হলে জমির দাম সাব্যস্ত হতে হবে। দুই পক্ষের ঐক্যমতে এই দাম সাব্যস্ত হতে হবে। দাম সাব্যস্ত হলে অবশ্যই সাক্ষী থাকতে হবে।
জমির বায়না করা
জমি দাম সাব্যস্ত হলে ১০%-১৫% টাকা অগ্রিম দিয়ে জমির বায়নাপত্র করতে হবে। বায়নাপত্রে বাকি টাকা কবে দেয়া হবে এবং কতদিনের মাঝে জমি বুঝিয়ে দেয়া হবে তার বিবরন থাকতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রি করা
জমির মূল টাকা পরিশোধ হলে জমির ডিউটি ফি ও রেজিস্ট্রি ফি জমা দিয়ে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে ।
জমির দখল বুঝে নেওয়া
জমির সকল পাওনা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হবার পর জমির দখল বুঝে নিতে হবে। দেখে নিতে হবে যে, দলিলে উল্লেখ করা জমির মাপ, আকার ও অবস্থানের সাথে জমির মাপ, আকার ও অবস্থানের মিল রয়েছে কিনা।
জমির মিউটেশান করা
জমির খতিয়ান হালনাগাদ করার জন্য জমি মিউটেশানের জন্য আবেদন করতে হবে। মিউটেশান শেষে জমির খতিয়ান রেকর্ড বইয়ে জমির মালিক হিসেবে আপনার নাম আছে কিনা দেখে নিতে হবে। জমির মিউটেশান সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে অনেক সময় জটিলতায় পড়তে হয়। তাই মিউটেশানের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
এভাবে একে একে জমি কেনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে আর অসুবিধায় পড়তে হয়না। তাই জমি কেনার আগে বিভিন্ন দালালের খপ্পরে না পড়ে ধীরে সুস্থে একে একে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে জমি কেনা নিয়ে প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এই লেখাটি সবার জন্য উপকারী, তাই সবাইকে জানাতে এই লেখাটি শেয়ার করে পরিচিত সবাইকে জানিয়ে দিন। আগামীতে আমরা এই বিষয়ে আরো খুটিনাটি আলোচনা করবো । জমি সংক্রান্ত আরো অনেক লেখে পড়তে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলিতে চোখ রাখুন।
আমাদের লেখা নিয়ে যেকোন মন্তব্য, পরামর্শ, অভিযোগ আমাদের ফেসবুক পেজে জানান। আমরা আপনার মতামত সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করবো।