জীবনে পিছিয়ে পড়ার ৬টি কারণ জেনে নিন – 6 Reasons Why You Fail in Life in Bangla

জীবন মানেই দৌড় প্রতিযোগিতার মত, নির্দিষ্ট একটি সময়ে আমরা সবাই লক্ষ্য সামনে রেখে দৌড়ে চলেছি। আর এই দৌড়ে কেউ লক্ষ্য ছুতে পারে, কেউ লক্ষ্যে পৌছার আগেই দৌড় থামিয়ে দেয়।

এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, প্রথম না হতে পারলেও অনেকেই লক্ষ্যে পৌছায়, আর অনেকেই প্রথম হতে পারবে না ভেবে দৌড়টাই থামিয়ে দেয়। একেই বলে পিছিয়ে পড়া।

আমরা সবাই নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনে দৌড়াচ্ছি, দেরীতে হলেও লক্ষ্যে পৌছানোই আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

6 Reasons Why You Fail in Life in Bangla
6 Reasons Why You Fail in Life in Bangla

কিন্তু ফলাফল আগেই অনুমান করে দৌড় থামিয়ে দিলে আমরা অবশ্যই জীবনে পিছিয়ে পড়ব।

মানুষ জন্মের সময় একই রকম থাকে সবাই, কিন্তু পরিবেশ, আচার-আচরণ, বন্ধু-বান্ধব, নিজের মনোভাব এগুলো দিয়েই মানুষ অন্যদের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যর হয়।

একই সময়ে একজন ব্যক্তি নিজের স্বপ্নপূরণে নিরলস কাজ করে চলেছে আর অন্য কেউ হয়ত আরামে বসে ফেসবুকিং করছে। তাহলে কে পিছিয়ে পড়ছে? সহজেই অনুমান করা যায়।

আবার শুধু পরিশ্রমই সাফল্যের নিশ্চিত গ্যারান্টি নয়, এরজন্য কৌশলী হওয়াও আবশ্যক৷ সুপ্রিয় পাঠক,  আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে জীবনে পিছিয়ে পড়ার ৬ টি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

আশা করি পোস্টটি থেকে নিজের জীবনে কাজে লাগানোর মত তথ্য পেতে চলেছেন। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

জীবনে পিছিয়ে পড়ার ৬ টি কারণ:

 

১. অন্যদেরকে বেশী যোগ্য মনে করা

আমাদের চারপাশে বরাবরই প্রতিযোগী থাকবে, সেটা শিক্ষাঙ্গন হোক বা অফিস, খেলার মাঠ হোক বা নিজের বাড়িই হোক।

যাদের সাথে আমাদের কাজকে তুলনা করা হয়, আমরা যদি নিজেদের চেয়ে তাদেরকে বেশী যোগ্য ভেবে নিজেদের কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, তাহলে সবসময়ই অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকব।

কেউ অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না, অধ্যবসায়, পরিশ্রম আর মনোযোগই একজনের সাথে অন্যজনের পার্থক্য গড়ে দেয়।

আপনি যখন একটি কাজে মন না দিয়ে অন্য দিকে মনোযোগী হয়ে আছেন, সেই একই সময়ে আপনার পাশের ব্যক্তি সেই কাজে মনোযোগ দিয়ে কিভাবে আয়ত্ত করা যায় তার অনুশীলন করছেন।

আবশ্যকভাবে বলা যায়, আপনার চেয়ে কাজটি অপর ব্যক্তিই ভাল পারবেন। তাই অন্য কাউকে যোগ্য ভেবে ভয় না পেয়ে যোগ্য হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করুন। নাহলে আপনি জীবনে পিছিয়েই থাকবেন।

 

২. আগামীর জন্য কাজ ফেলে রাখা

প্রতিটি কাজেরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, সময়ের কাজ সময়ে না করে ফেলে রাখা হলে তা পরে সম্পন্ন করার সময় নাও পেতে পারেন।

আমরা বেশীরভাগ সময়েই এই ভুলটি করে থাকি, একটি কাজ করছি, করব ভেবে ফেলে রাখি। সেটা আর করা হয়ে ওঠেনা।

পরীক্ষার আগে যে প্রশ্নগুলো বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা হয়ত আপনি জানেন, কিন্তু আজ পড়ব কাল পড়ব বলে ফেলে রাখছেন।

পরে পরীক্ষার আগে হয়ত আর দেখার সময় পাবেন না, আর পরীক্ষা দিতে চলে যাবেন, যাওয়ার আগে মনকে এই ভেবে সান্ত্বনা দেবেন যে, ওই প্রশ্নগুলো হয়ত আসবে না।

এভাবেই আপনার ভাগ্য আপনার হাতেই গড়ে ওঠে। আর আপনি জীবনে পিছিয়ে পড়েন। তাই যা করা উচিত, যা করতে হবে তা সময় থাকতেই সম্পন্ন করুন।

 

৩. আলসেমি করা

পৃথিবীতে ব্যর্থ মানুষদের তালিকা করলে দেখা যাবে, তাদের অনেকেই হয়ত বিভিন্ন কাজে পারদর্শী ছিল, কিন্তু তারা ছিল অলস।

তারা জানত কোন একটি কাজ তারা সহজেই করতে পারে, কিন্তু আজ করব, কাল করব ভেবে আলসেমি করে তারা আর কখনোই কাজটি শুরু করেনি।

অথবা যখন আলসেমি কাটিয়ে কাজ শুরু করেছে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। আপনি যদি অলস প্রকৃতির হন, তবে যত মেধাবীই আপনি হন না কেন, জীবনে অবশ্যই পিছিয়ে পড়বেন।

কম মেধাবী ব্যক্তি যদি আলসেমি না করে চেষ্টা চালিয়ে যায়, তবে সে সফল হবে।

 

৪. কাজ এবং সময়ের মাঝে সমন্বয় না করা

প্রতিটি কাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি, যোগ্যতা, আদর্শ ও সময় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় না করলে অবশ্যই জীবনে পিছিয়ে পড়বেন।

যেমন আপনাকে একটি কাজের জন্য আজকের মধ্যে আবেদন করতে হবে, আপনি সেটা ভুলে দুদিন পর আবেদন করলেন। কাজটি শুরুতেই হাতছাড়া হয়ে যাবে।

আপনি হয়ত কোন একটি কাজ খুব ভাল করতে পারেন, কিন্তু যে পক্ষের হয়ে কাজটি করছেন তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মানসিকতা আপনার নেই, আপনি পিছিয়ে পড়বেন।

আপনি যখন ব্যর্থ ছিলেন তখন যারা আপনাকে সমর্থন করেছে, সাফল্য লাভ করা মাত্রই তাদের ভুলে গেলেন, পরবর্তীতে বিপদে সবাই আপনাকে ত্যাগ করবে।

এভাবেই কাজ ও সময়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের অভাবে জীবনে পিছিয়ে পড়বেন। তাই সমন্বয় করাটা খুবই জরুরী।

 

৫. মনোযোগের ঘাটতি

জীবনে যে কাজটিই করতে যান না কেন, তাতে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। মনোযোগ দেওয়া ব্যতীত কোন কাজেই সফল হওয়া সম্ভব নয়।

অনেকেই কাজ সহজ ভেবে, বা পরে করা যাবে ভেবে কাজে যথাযথ মনোযোগ দেন না, আর এভাবেই জীবনে পিছিয়ে পড়তে হয় তাদের, যখন অন্যরা মন দিয়ে কাজ করায়, জীবনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

মনোযোগ এমন একটি বিষয় যা যদি কোন অমেধাবী ব্যক্তিরও থাকে, তাহলেও সে দ্রুত না হলেও দেরীতে একটি বিষয় আয়ত্ত করতে পারবে।

কিন্তু মেধাবী হয়েও যদি মনোযোগী না হন, তাহলে আপনি আপনার চেয়ে কম মেধার মানুষদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বেন।

৬. প্রেরণার অভাব

প্রতিটি কাজের পিছনেই প্রেরণা থাকতে হয়। উদ্দেশ্য ও প্রেরণা ব্যতীত মানুষ কোন কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে চায়না।

আপনি যখন প্রোমোশন পেতে চাইবেন তখন প্রোমোশন পাওয়ার আশাই আপনার প্রেরণা হয়ে কাজ করবে।

কিন্তু এরকম কোন আকাঙ্ক্ষা না থাকলে আপনি কঠোর পরিশ্রমের কোন কারণ খুঁজে পাবেন না, এবং জীবন যেভাবে চলছে সেভাবেই খুশি থাকবেন।

ফলে অন্যরা এগিয়ে যাবে কিন্তু আপনি জীবনে পিছিয়ে পড়বেন।

 

শেষ কথা

জীবন মানেই প্রতি মূহুর্তে এগিয়ে চলা, জীবন মানেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পানে ছুটে চলা, এখানে চেষ্টা থামিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া মানেই জীবনকে থামিয়ে দেওয়া।

মানুষের অফুরন্ত প্রাণশক্তি। সঠিকভাবে চেষ্টা করলে মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই।  তাই চেষ্টা থামিয়ে দেওয়া চলবেনা।

পিছিয়ে পড়ার কারণ জেনে সেই কাজগুলো করা বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলেই পিছিয়ে পড়তে হবেনা জীবনে। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভাল লাগবে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।  ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top