Cardamom Cultivation Method in Bangla | Easy Method of Cardamom Cultivation in Bangla
এলাচ একটি মসলা জাতীয় ফসল। এটি মিষ্টি বা ঝাল সব রকমের খাবারেই ব্যবহার করা যায়।
এটি প্রায় আদা জাতীয় গাছের মতো দেখতে। গাছের পাতা লম্বা ও চওড়া হয়ে থাকে। গাছের গোড়া থেকে একটি স্টিক বের হয় সেটিই মূলত এলাচ।
একে বলা হয় মসলার রানী। এটি সুগন্ধযুক্ত ও রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। এর প্রচুর ঔষধি গুণ ও রয়েছে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে এলাচ চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই এলাচ চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
চলুন দেখে নিন এলাচ চাষের বিস্তারিতঃ
এলাচ চাষের জন্য আমাদের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ খেয়াল রেখেই এই চাষ করা দরকার।
জমিঃ
এলাচ চাষের জন্য জমি উর্বর হতে হবে। জমি যেন হালকা ছায়া যুক্ত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমি ভেজা বা স্যাতস্যাতে হওয়া যাবে না।
ভেজা জমিতে এলাচ চাষ করলে ফলন ভালো হয় না। তবে এলাচ চাষ করার জন্য সবসময় আলাদা কোনো জমির দরকার হয় না।
অন্য যে কোন গাছের নিচে বা বড় জাতীয় কোন গাছের নিচে, বাগান বা বাড়ির আঙ্গিনায় এলাচ চাষ করা যায়।
অন্য কোন ফসলের মাঠে ও এটি চাষ করা যেতে পারে।
চারা রোপনের হারঃ
প্রতি শতকে প্রায় ১৪ টি এলাচের চারা লাগানো যেতে পারে।
চারা রোপনের দূরত্বঃ
ভালো ফলন পেতে হলে চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপন করতে হবে। এলাচের চারা রোপন করার জন্য একটি চারা থেকে আরেকটি চারার দূরত্ব হতে হবে ৪ হাত এবং এক লাইন থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে ৩.৫ হাত।
জমি তৈরি ও সার ব্যবস্থাপনাঃ
জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে নিতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির গুনাগুন যাচাই করে নিতে হবে।
এলাচ চাষে মাটির পিএইচ ঠিক রাখতে হবে। মাটিতে বালির পরিমান ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
আর মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান বেশি থাকতে হবে।
মাটির গুনাগুন ঠিক থাকলে এলাচ চাষে বেশি খরচ হয় না। তবে প্রথম বছরে চারা কিনে নিতে হয়।
এলাচ চাষে মাটির পিএইচ ৬ থাকতে হবে। পিএইচ এর বেশি হলে মাটিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
মাটি যদি এটেল হয় আর যদি মাটিতে বালির পরিমান কম থাকে তাহলে মাটিতে অতিরিক্ত বালি মিশাতে হবে।
তবে মাটি দোআঁশ হলে কিছু করতে হবে না। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমানে জৈব সার থাকতে হবে। জৈব সারের পরিমান কম হলে জমিতে পচা গোবর সার বা কেচো সার বা কম্পোস্ট সার মিশিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
জমি তৈরির পর জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতকে টিএসপি ৫০০ গ্রাম, পটাশ ৫০০ গ্রাম ও ফুরাডান নামক দানাদার কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
তারপর জমিতে ভালোভাবে সেচ দিতে হবে যেন মাটির সাথে সার গুলো খুব ভালো করে মিশে যায়। ভালো ফলন পেতে হলে গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার সময় জমিতে সেচ দেওয়া ভালো।
জমি যেন স্যাতস্যাতে না হয় আর জমিতে যেন অতিরিক্ত জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে এলাচ চাষ করা যাবে না।
আগাছা দমনঃ
জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্থ করে।
গাছ বড় হবার তিন বছর পর প্রথম বার এলাচ সংগ্রহ করার পর পুরনো গাছটির ডাল ছাটাই করে দিতে হবে।
মরা ডাল পাতা ও দুর্বল ডাল ছাটাই করে দিতে হবে। ছাটাই প্রক্রিয়া শীতকালে করা উত্তম। কারন শীতকালে গাছে কোন ফুল ও ফল হয় না।
ফল ধরার স্থানঃ
এলাচ গাছে সাধারনত গাছের গোড়ার মাটি সংলগ্ন স্থানে গুচ্ছ আকারে ফুল জন্মায়।
এই ফুল থেকেই পরে গুচ্ছ আকারে ফল হয়। পরবর্তীতে এই ফল সংগ্রহ করা হয়।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
গাছে রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এবং পোকা দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় বালাই নাশক দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
এলাচ গাছে সাধারনত আষাঢ় মাসে ফুল আসে এবং ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাসের শেষ দিকে এলাচ পরিপক্ক হয়। ফল পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে।
বাগান থেকে সাধারনত কাচা এলাচ সংগ্রহ করতে হয় এবং পরে তা রোদে শুকাতে হয়। যদি বেশি পরিমানে এলাচ হয় তাহলে ড্রায়ার মেশিনের সাহায্যে শুকানো হয়।
এলাচ ভালো করে না শুকিয়ে রাখলে তাতে পচন ধরতে পারে তাই ভালো করে শুকিয়ে রাখতে হবে। ফল পরিপক্ক হলে তা দেখতে হালকা সবুজের উপর লাল রঙ হয়ে থাকে।
ফলনঃ
এলাচ এর চারা রোপন করার দুই বছর পরে এলাচ ধরা শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু তিন বছর পর থেকে ফলন ভালো হয়ে থাকে।
প্রতি গাছ থেকে প্রায় ৮০০-৯০০ গ্রাম এলাচ পাওয়া যেতে পারে। জাত ভেদে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
সঠিক উপায়ে যত্ন সহকারে চাষ করতে পারলে এক বিঘা থেকে প্রায় ১ টন ফসল পাওয়া যেতে পারে।