2023 ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি | 2023 Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali

একটা সময় ছিলো অনেক ফলই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হতো। সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেশের কৃষকগন বিভিন্ন ফলের চাষ আমাদের দেশেই চাষাবাদ করা শিখতে থাকে। এতে করে এই দেশেই বর্তমানে অনেক ফলের চাষ হয় যা আগে সেভাবে হতো না।

এর ফলে আমরা ফলের আমদানী ব্যয় কমিয়ে আনতে পেরেছি, সেই সাথে দেশের মানুষের পুস্টির চাহিদা মিটছে। ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশে ফল রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হয়। এই সকল ফলের মাঝে ড্রাগন ফল অন্যতম। পূর্বে না হলেও বর্তমানে দেশে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। 

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা জমি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। জীবনের নানা প্রয়োজনের সময়ে এসকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি - Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali
ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি – Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali

এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই ড্রাগন ফল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।  এটি আপনাদের পারিবারিক চাহিদা মেটবে এবং চাষাবাদ করে আয় করার সুযোগ লাভ করবেন। 

আসুন দেখে নিই ড্রাগন ফল চাষের বিস্তারিত। 

ড্রাগন ফলের পরিচিতি

ড্রাগন ফল মূলত দক্ষিন আমেরিকার একটি প্রসিদ্ধ ফল। এই ড্রাগন ফল ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশেও চাষ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফ্লোরিডা থেকে এই ড্রাগন ফল আনা হতো। এটি একটি ক্যাক্টাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফল গাছ খুব একটা বড় হয় না। ক্ষেত্র বিশেষে এটি ১.৫ থেকে সর্বোচ্চ ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। 

বর্তমান সময়ে উন্নত জাতের ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়। একটি উন্নত জাত হলো ড্রাগন ১ ফল। এটি ইতিমধ্যে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ড্রাগন ১ আকারে বড় হয় এবং ফল পাকলে খোসা লাল হয়ে যায়। এর শাঁস গাড় গোলাপী রঙের রসালো টাইপের হয়ে থাকে। ফলে বীজগুলি ছোট ছোট ও নরম প্রকৃতির হয়। একেকটি ফল ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। 

ড্রাগন ফলের পুস্টিগুন কি কি

১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে পুষ্টিগুন নিম্মরুপ

নংউপাদানপরিমান
০১জল৮০-৯০ গ্রাম
০২শর্করা০৯-১০ গ্রাম
০৩প্রোটিন০১৫-০.৫ গ্রাম
০৪আশ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
০৫খাদ্যশক্তি৩৫-৫০ কিলোক্যালোরি
০৬চর্বি০.১-০.৬ গ্রাম
০৭ক্যালসিয়াম৬-১০ মিলিগ্রাম
০৮আয়রন০.৩-০.৭ গ্রাম
০৯ফসফরাস১৫-৩৫ মিলিগ্রাম
১০ক্যারোটিনভিটামিন এ, থায়ামিন
১১ভিটামিন বি ৩০.২- ০.৪ মিলিগ্রাম
ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি - Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali
ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি – Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali

ড্রাগন ফলের উপকারীতা 

আসুন দেখে নিই ড্রাগন ফলের কি কি উপকারীতা রয়েছে।

১) এটিতে ক্যারোটিন থাকায় চোখের জন্য উপকারী।

২) ড্রাগন ফলে ফাইবার থাকায় এটি হজমের জন্য উপকারী। 

৩) ড্রাগন ফলের ফাইবার শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। 

৪) ড্রাগন ফলের ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে।

৫) ড্রাগন ফলের ভিটামিন বি রক্তের কোলস্ট্রোল কমায় এবং ত্বক মসৃন রাখে। 

৬) ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে করে ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো থাকে। 

ড্রাগন ফলের জন্য জমি নির্বাচন

ড্রাগন ফল চাষের জন্য জল নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি উচু হতে হবে। জমিতে ২-৩ বার চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। 

চারা রোপন পদ্ধতি 

ড্রাগন চাষের জন্য ড্রাগন গাছের কাটিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি সমতল ভূমিতে এবং পাহাড়ি জমিতে রোপন করা যায়। সমতল ভূমিতে বর্গাকার ও ষড়ভুজাকৃতি ভাবে লাগাতে হবে। ড্রাগন ফল রোপনের উত্তম সময় হলো এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়। 

ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি - Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali
ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি – Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali

বংশবিস্তার 

ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। তবে কাটিং থেকে চারা উৎপাদন করলে ফলন ভালো হয়ে থাকে। কাটিং থেকে চারা উৎপাদন করলে ১২-১৮ মাসে ফলন আসে। বয়স্ক গাছ থেকে ১.৫ ফিট কেটে বেলে দোয়াশ মাটিতে লাগাতে হয়। কাটিং লাগানোর ২০-৩০ দিনের মাঝেই মাটিতে শেকড় গজায়। তখন এটি মূল জমিতে রোপন করা যাবে। 

গর্ত তৈরি করা 

ড্রাগন ফলের জন্য ১.৫ মিটার, ১.৫ মিটার এবং ১ মিটার গর্ত করতে হবে। গর্ত করে রোদে রাখতে হবে। ২০-২৫ দিন রাখার পর প্রতি গর্তে ২০-২৫ কেজী গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপিও, ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার মাটির সাথে মেশাতে হবে। গর্ত ভরাটের ১০ দিন পর ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারাগাছ লাগাতে হবে। 

সেচ ব্যবস্থাপনা

ড্রাগন ফল জলাবদ্ধতা ও খরা দুইটাই সহ্য করতে পারেনা। তাই ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। তাছাড়া ফলন্ত গাছে ৩ বার জল দিতে হবে। 

ড্রাগন ফল সংগ্রহ 

কাটিং থেকে রোপন করা হলে ড্রাগন গাছ ১ থেকে ১.৫ বছরের মাঝে ফল দিয়ে থাকে। ফল লাল হলে  সংগ্রহ করতে হয়। গাছে ফুল ফোটার ৩০-৪০ দিনের মাঝে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়ে থাকে। বছরে ৫-৬ বার ফলন পাওয়া যায়। 

ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি - Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali
ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি – Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali

আজ আমরা ড্রাগন ফল চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আগামীতে আপনাদের সাথে ড্রাগন ফল চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে ড্রাগন ফল চাষ করে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে। 

কৃষি নিয়ে আরো অনেক লেখা পেতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলি দেখুন। আমাদের লেখা ভালো লাগলে বা যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পাতায় লিখুন। আমরা আপনার মন্তব্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো। 

3 thoughts on “2023 ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি | 2023 Dragon Fruit Cultivation Method in Bengali”

  1. ড্রাগন ফলের চাষ কি ধরনের মাটিতে হয় এবং কাটিং
    কোথায় পাওয়া যায়
    ? দাম কত পড়ে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top