পুদিনা পাতার সুগন্ধির কারণে দিনদিন সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কাবাব, বোরহানী, চাটনি ও সালাদ তৈরিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বোরহানি তৈরিতে পুদিনা পাতার ব্যবহার সবচাইতে জনপ্রিয়।
তাই দেশে পুদিনা পাতার অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশে সাধারণত যে পুদিনা চাষ হয় তার কোনো ফল হয় না।
দীর্ঘদিন থেকেই এ দেশে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। এক সময় ছিল যখন বাড়ির আঙিনায় ২ থেকে ৪টি পুদিনা গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানো হতো।
কিন্তু এখন অবস্থা বদলে গেছে। শহরাঞ্চলে পুদিনার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। পুদিনার চাষ এখন অন্যান্য ফসলের মতো বাণিজ্যিকভাবে করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে পুদিনা পাতার চাষ পদ্ধতি ও উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই পুদিনা পাতার চাষ পদ্ধতি ও উপকারীতা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং নিজের বাড়িতে পুদিনা পাতার চাষ করতে পারবেন। আসুন দেখে নিন পুদিনা পাতা চাষের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত
জমি ও চারা তৈরি করা
পুদিনা পাতার চাষ সাধারণত সারা বছরই করা যায়। শীতকালে ভালোভাবে সেচ দিতে পারলে শীতকালেও ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব হয়। এটেল ও দোআঁশ মাটিতে পুদিনা পাতার চাষ ভালো হয়ে থাকে। পুদিনা পাতার চাষ বীজ দিয়ে ও কাটিং দিয়ে উভয়ভাবেই করা যায়।
তবে কাটিং দিয়ে করেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। পুরোনো গাছ থেকে কাটিং নিয়ে নতুন ভাবে রোপন করতে হয়।
কাটিং থেকে শেকড় গজাতে মাত্র ৭ দিন সময় লাগে। জমি তৈরি করার সময় প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ১৫ টন গোবর দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
পুদিনা চাষের জন্য প্রতি ৪৫ বর্গমিটার জমিতে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সারের পরিমাণ হলো কম্পোস্ট বা গোবর ২০ ঝুড়ি বা ২০০ কেজি; টিএসপি ১ থেকে ১.৫ কেজি; এমওপি বা কাঠের ছাই ১ কেজি বা ৫ কেজি; হাড়ের গুঁড়া ৫ কেজি।
ফসল সংগ্রহ
পুদিনা গাছ লম্বা হতে শুরু করলে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা কাটিং বা ডাল কেটে ১০ থেকে ১৫টি শাখা একটি আঁটিতে বেঁধে বাজারে বিক্রি করার জন্য পাঠানো হয়।
প্রতি ২ বার ফসল তোলার পর এক কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রতি মাসে সার দিয়ে ফসল তুলতে হবে। সারা বছর পুদিনা চাষ করে ফসল তোলা যাবে।
পুদিনা পাতার গুনাবলী
নিচে পুদিনা পাতার গুনাবলী নিয়ে আলোচনা করছি।
১) রোদে পড়া ত্বকের জ্বালা কমাতে এলোভেরার সাথে পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে ত্বকে দিলে জ্বালা কমে যাবে।
২) অনেক বিজ্ঞানীদের দাবী পুদিনা পাতা ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধক। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
৩) ব্রনের চিকিৎষায় পুদিনা পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। পুদিনা পাতা বেটে মুখে দিয়ে সারা রাত রাখলে ব্রন চলে যাবে।
৪) চুলে উকুন হলে পুদিনা পাতা বেটে চুলে দিন। সপ্তাহে ২ দিন পুদিনা পাতা বেটে দিয়ে ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেললে উকুন থাকে না।
৫) সর্দি হলে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেকের অ্যাজমায় কষ্ট হয়ে থাকে। পুদিনা পাতা গরম জলে দিয়ে নিশ্বাসের সাথে ভাপ নিলে উপকার পাওয়া যায়।
৬) গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শশার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। মসৃণও হয়।
৭) যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা ১ কাপ করে পুদিনা পাতার চা খেলে হজমের উপকার হয়। পুদিনা পাতায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকায় পেটের যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে খুব দ্রুত।
৮) স্নানের সময় জলের মাঝে পুদিনা পাতা দিয়ে স্নান করলে সুগন্ধিতে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়।
৯) শরীরের কোথাও ব্যাথা হলে পুদিনা পাতা বেটে দিলে ব্যথা কমে যায়। এমনকি মাথা ব্যাথায়ও পুদিনা পাতার চা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আজ আমরা পুদিনা পাতা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আগামীতে আপনাদের সাথে পুদিনা পাতা চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন।
এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুদিনা পাতা চাষ করে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা জমি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকেন। জীবনের নানা প্রয়োজনের সময়ে এসকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।