আতা বা নোনা ফল আমাদের পশ্চিমবঙ্গে একটি অপ্রচলিত ফল হলেও বর্তমানে এর বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আতা ফল আর নোনা ফলে সামান্য পার্থক্য থাকলেও স্বাদ কাছাকাছি নোনা ফল খেতে খানিকটা নোনতা আর জিভে বালির মতো লাগে পক্ষান্তরে শরিফা মুখে দিলেই মিশে যায়।
এ ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আমিষ, শর্করা ও প্রচুর খাদ্য উপাদান। আর ভেষজ গুনাবলীয় আছে এতে প্রচুর পরিমানে। অনেক আগে আমাদের পূঁজো পার্বনেও এ ফলের প্রচলন ছিল। অনেকে খাবারের পর আতার পায়েস দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করতেন।
বর্তমান বিশ্বে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বানিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এ ফল একটি প্রভুত সম্ভাবনাময় ফসল হতে পারে।
-
ভুট্টা চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি
-
-
যে কোন লোনের জন্য আবেদন করুন অনলাইনে 👇
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন -
চীনা বাদাম চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি
আসুন আজ আমরা বিলুপ্ত প্রায় এ ফলটির বানিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা করবোঃ
আমরা আমাদের বাংলাভূমি ওয়েব সাইটে নিয়মিত, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এতে করে আপনারা কৃষি, শিক্ষা,অর্থনীতি আরও নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। আমাদের এ তথ্যগুলো আপনারা আপনাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হয়ে থাকেন ।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আতাফল চাষ নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি খুব সহজেই আতাফল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন ।
আতা ফলের চাষাবাদ পদ্ধতি
আতা বা শরিফা ফলের জাত সমুহঃ
শরিফা বা আতা ফলের ৭ টির মতো জাত রয়েছে, এর মধ্যে শঙ্কর প্রজাতির জাতই সব চাইতে বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে ।
বেশি চাষ করা প্রজাতিগুলো হচ্ছেঃ
১. আনোনা স্কোয়ামোসা
২. অ্যানোনা রেটিকুলাটা
৩. অ্যানোনা মোরিকাটা
৪. অ্যানোনা সেনেগ্যালেনসিস
৫. অ্যানোনা চেরিমুলা
চারা তৈরিকরন পদ্ধতিঃ
আতা ফলের চারা বীজ থেকে করা যায়, আবার গুটি কলম থেকেও করা হয়। বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হলে কলমের চারাই ভালো। তবে বীজ থেকে চারা করলে ১-১.৫ বছরের মধ্যে ফল আসে, কলমের চারা থেকে ৭-৮ মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া সম্ভব।
বর্তমান সময়ে থাই চারা পাওয়া যায় যা ১২ মাসই ফলন দেয়। এছাড়া ভাল খামারি থেকেও চারা সংগ্রহ করা যায়। আবার ভাল পরিপক্ক ফল থেকে জার্মিনেশনের মাধ্যমে চারা তৈরি করেও লাগানো যায়।
আসুন এবারে জেনে নেই মাটি জলবায়ু সম্পর্কে
আতাফল চাষে বেলে দোঁ-আশ মাটিই সব চাইতে ভালো। উঁচু বেড গাছের জন্য বেশ ভালো। বর্ষাকালে জল জমেনা এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। চারা রোপনের বেডগুলো ৭ বাই ৮ হাত দূরত্বে হবে ।
এভাবে ১ বিঘা জমিতে ১৩০ টির মতো চারা রোপণ করা যাবে। রোদ যুক্ত জায়গায় বা অল্প ছায়া যুক্ত স্থানেও এর চাষ করা যায়। জল সেচের ব্যাবস্থা যেন ভালো থাকে সে-দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আতা গাছ থেকে চারা হওয়ার পর ১ম বছরে গাছে ৩-৪ কেজি ফল আসে, ২য় বছরে এ ফলের পরিমান ১০-২০ কেজি হলেও ৩য় বছরে ৭০-৮০ কেজি ফলও পাওয়া যায়। ভালো পরিচর্যা করতে পারলে বছরে ১০০ কেজি পর্যšত ফল পাওয়া যায়।
সার প্রয়োগ ও রোগ বালাই দমনঃ
চারা রোপনের পূর্বে জমিতে বিঘা প্রতি ৫০-৬০ কেজি গোঁবর সার প্রয়োগ করতে হবে আর সাথে ৫০ কেজি ১০ঃ২৬ঃ২৬, ইউরিয়া ৭ কেজি , পটাশ ১২ কেজি, বোরন ১ কেজি করে দিলে পরবর্তীতে আর সার লাগে না। শুধু সময়ে সময়ে জল সেচ দিলেই ফলন বাড়ে ।
এই গাছে প্রায়ই ২ ধরনের রোগ দেখা যায় ১. মিলি বাগ, ২. এনথ্রাক্স রোগ আক্রমনের ফলে, ফল কালো হয়ে যায়।
মিলি বাগ পোঁকা যা কীটনাশক দিয়ে, হাতের সাহায্যে আবার জল-সাবান স্প্রে করলেই চলে যায়। আর এনথ্রাক্স পোঁকা আক্রমন করলে, সে ফল গাছ পেড়ে ফেলে দিতে হবে, এছাড়া শুকনো ডাল পরিষ্কার করে দিতে হবে ১৫-২০ দিন পর পর। কারন শুকনো ডালে পোঁকাররা বাসা বাঁধে ।
পরবর্তী পরিচর্যা ও বাজারজাত করনঃ
চারা রোপনের ১ বছর পর গাছে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে, আর জমি শুকিয়ে গেলে জল সেঁচ দিয়ে জমির আর্দ্রতা ঠিক রাখতে হবে।
১২ মাসি গাছ গুলোতে সারা বছরই মোটামুটি ফল থাকে। এক ফসলি গাছে এপ্রিল – জুন মাসে ফুল আসে আর সে ফল পাকে অগাস্ট – সেপ্টেম্বার মাসে। গাছে ফল আসা থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ৭-৮ মাস লাগে।
যখন বাগানে ফল পাকে তখন, পুরো বাগান অপার্থিব এক গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে থাকে। ফল গাছে পেঁকে যাওয়ার আগেই তা পেড়ে সংগ্রহ করে ভাল করে কাগজে মুড়ে বাজারজাত করতে হয় ।
আত ফল গাছে তেমন কোন সার লাগেনা, একজন সফল খামারি রঞ্জিত লালের মতে, ১ বিঘাতে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে বছরে প্রায় ৯০ হাজার ১ লক্ষ্য টাকার মতো আয় করা সম্ভব।
আসুন আমরা আমাদের বাড়ির আঙিনা, পতিত জমিতে আতাফলের চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হই।
আজ আমরা আতাফল চাষ নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে আতাফল চাষের ব্যাপক সফলতা নিয়ে আরও আলোচনা করবো ।