দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত জীবনযাপনের জন্য আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত হয়। তার সাথে সাথে বাইরে উল্টোপাল্টা খাওয়া দাওয়ার জন্য আমাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড অতিমাত্রায় বেড়ে যায়, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়।
শরীর কে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে। এতটাই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা শরীরে বেড়ে যায় যে, কিডনি অতিরিক্ত অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে বাড়তে থাকে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা।
তবে কি এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচা যাবে না? অবশ্যই যাবে। তার জন্য প্রথম থেকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে ঘরোয়া উপায় এর চিকিৎসা করে নিতে পারবেন আপনি নিজেই। আমাদের ঘরের মধ্যেই এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা দিয়ে আপনি আপনার শরীর চর্চার পাশাপাশি এই ইউরিক এসিডের সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা আজকাল যেন বেড়েই চলেছে। কারণ শরীরে যখন উচ্চমাত্রায় ইউরিক অ্যাসিডের উপস্থিতি থাকবে তখন কিন্তু শরীরের প্রত্যেকটি জয়েন্ট এর মুখে ব্যথা অনুভব হতে থাকবে, আচমকাই যন্ত্রণা শুরু হতে পারে।
সঠিক চিকিৎসা না হলে শরীরের সাথে সাথে হাঁটুর মধ্যে এবং প্রত্যেকটি অস্থিসন্ধিতে ইউরিক অ্যাসিড জমা হতে থাকে। এর ফলে অস্থিসন্ধির গুলি ফুলে যায় এবং যন্ত্রণা শুরু হতে থাকে।
এটি একমাত্র সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস, অনিয়মিত জীবন-যাত্রার কারণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি হতে থাকে। আবার অনেকের জিনগত সমস্যায় হয়ে থাকে অর্থাৎ পরিবারের কারোর থাকলে, অথবা বাবা-মায়ের থাকলে সেটা সন্তানের মধ্যে প্রভাবিত হয়।
তা ছাড়া কারো যদি অতিরিক্ত মিষ্টি অথবা চিনি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে কিন্তু রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে। রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে হতে পারে কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, এবং গেঁটেবাতের মতো সমস্যা।
মূত্রের মাধ্যমে যতোটুকু ইউরিক অ্যাসিড শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায় তার থেকে যদি বেশি এর পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড শরীরে জমা হয় সেক্ষেত্রে কিডনি অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কে দেহের বাইরে বের করতে পারেনা।
চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক, এমন কি ঘরোয়া উপায়ে আপনি শরীরের অতিরিক্ত ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে পারেন –
১) অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার :
অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ঘরে প্রায়ই থেকে থাকে তার ফলে কিন্তু এটা দিয়েও আপনি শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে এক চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার, তার সাথে এক গ্লাস জল মিশিয়ে পান করুন।
আপনি পারলে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এইভাবে পান করতে থাকুন। শুধুমাত্র ইউরিক অ্যাসিড নয়, অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার শরীরের বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর পদার্থ দ্রুত শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। বিশুদ্ধ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার থেকে পাওয়া যায় ম্যালিক অ্যাসিড যা ইউরিক এসিডের কনা গুলিকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।
ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধির মধ্যে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। শুধু অ্যাপেল সিডার ভিনিগার কেন, আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন 3 লিটার জল পান করতে পারেন, তাহলে কিন্তু শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২) খাদ্যাভ্যাাস :
একটুখানি খাদ্যাভাস পরিবর্তন করার ফলে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় খাবার-দাবারে অতটাও বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু বিষয়ের উপর বিশেষ খেয়াল রাখাটা জরুরি।
উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার, মাছ, মাংস, মুসুরির ডাল, রাজমাা, কিছু সবুজ সবজি (পালংশাক) এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত পিউরিন যুক্ত খাবার, যেমন লাল মাংস (রেড মিট), লাল মদ, আবার তার সাথে সামুদ্রিক মাছ না খাওয়া়াই ভালো। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনির সমস্যাা, উচ্চ রক্তচাাপ, গেঁটেবাত, আরো অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে কিন্তু।
৩) অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ এড়িয়ে চলা :
এখনকার জীবনে নানা সমস্যায় একটুখানি হলেও ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হয় আমাদের। তবে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ যতটা পারবেন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। খাদ্য তালিকায় রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘ভিটামিন সি’।
যদি পারেন নিয়মিত কমলা লেবুু, লেবু, এবং ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভিটামিন-সি ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করে। তাছাড়া ভিটামিন-সি শরীর এবং ত্বকের জন্য বিশেষ উপযোগী।
৪) ব্যায়াম করুন নিয়মিত :
শরীরচর্চা করার জন্য নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করতে অনেকেই অভ্যস্ত। তবে আপনি কি জানেন শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ব্যায়াম অথবা শরীরচর্চা। তাই এই জিনিসটা একেবারেই এড়িয়ে চলবেন না। তার সাথে সাথে বেশ খানিকটা হাঁটা এবং সাঁতার কাটাও বেছে নিতে পারেন।
যে করেই হোক কোনোমতেই ওজন বাড়তে দেবেন না। শরীরকে ফিট সেপ রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ, হৃদরোগ, কোলেস্টেরল, থাকলে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিজের শরীরের প্রতি সর্বদাই যত্নশীল হওয়া জরুরী।
৫) বাজার চলতি পানীয় এড়িয়ে চলুন :
বাইরে বেরিয়ে অনেক রকম ফলের জুস, লস্যি, সফট ড্রিংকস, এগুলো প্রায়ই অনিয়মিতভাবে খাওয়া হয়ে যায়। এই অনিয়মিতার জন্য কত বড় ক্ষতি ডেকে আনছেন আপনার শরীরে তা হয়তো বুঝতেই পারছেন না।
গোপনে শরীরের মধ্যে বেড়ে চলেছে ইউরিক এসিডের মাত্রা। সফট ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন’ এবং ফলের জুস বাড়িতে বানিয়ে খান অথবা গোটা ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন চিবিয়ে।
আপনি চাইলে বাড়িতেও লস্যি বানিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিজের শরীরের দিকে খেয়াল থাকল এবং প্রাকৃতিক কিছু খেতে পারলেন। বাজার চলতি সফট ড্রিংকস, ফলের জুস, খাওয়া এইজন্যই ঠিক নয়, সেগুলি খেলে আপনার হজমে সমস্যা হতে পারে।
৬) চায়ের বাজারে কফি :
সকাল হলেই চা নেশার মতো কাজ করে। সারাদিনে অনেকে কত কাপ চা খেয়ে থাকেন তার হিসেব নেই। তাও যেন একটা নেশার মত। তবে শরীরে যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে চা খাওয়ার বদলে কফি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
প্রতিদিন তিন থেকে চার কাপ কালো কফি অথবা ব্ল্যাক কফি খাওয়ার ফলে আপনার শরীর ঠিকঠাক থাকে। তবে অতিরিক্ত হয়ে গেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরী।
সামান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজে থেকেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে পারবেন আপনি নিজে থেকেই।