পুজোর আর বেশি বাকি নেই। পুজো মানেই সাজ সাজ রব। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। এই পুজোর ক’দিন কে কীভাবে সাজবেন তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। দিন গোনার সাথে সাথে চলছে পুজোর কটা দিন নিজেকে কিভাবে সাজিয়ে তুলবেন তার পরিকল্পনা।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল জানিয়েছেন যে এবছর কিভাবে নিজেকে সাজিয়ে তুলবেন পূজার কটা দিন। তার পাশাপাশি নিজের মনের মানুষের কাছে কিভাবে নিজেকে অনন্যা করে তুলবেন তার পরিকল্পনা চলছে অনেক আগে থেকে।
কোন কম্বিনেশনে তাক লাগানো যাবে সবাইকে, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন ছেলেমেয়েরা। যারা এখনো পর্যন্ত ঠিক করে উঠতে পারেননি পূজার কটা দিন কীভাবে সাজবেন বা এখনো পর্যন্ত যারা ড্রেস পছন্দ করতে পারেননি তাদের জন্য রইল ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের বিশেষ কয়েকটি টিপস।
সালোয়ার থেকে প্লাজো, কুর্তি থেকে লং স্কার্ট, কোনটাতে আপনার বেশি মানাবে তেমনটাই জানাচ্ছেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল।
১) হ্যান্ডলুম এর ছোঁয়া :
অগ্নিমিত্রা পালের মত অনুসারে হ্যান্ডলুম শাড়ি পুজোয় ট্রেন্ড করবে। যেকোনো রকম হ্যান্ডলুম ড্রেস কেনার ধুম পড়ে গিয়েছে। ইন্ডিয়ান থেকে ওয়েস্টার্ন, মেয়েদের শাড়ি এবং ছেলেদের কুর্তা সবেতেই রয়েছে হ্যান্ডলুমের ছোঁয়া।
তার সাথে সাথে বাজারও ছেয়ে গিয়েছে হ্যান্ডলুম ড্রেস দিয়ে। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে হ্যান্ডলুম শাড়ি বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া রয়েছে ট্র্যাডিশনাল এর মধ্যে ইক্কত এর জনপ্রিয়তা। তবে জর্জেটের শাড়ি তুলনামূলকভাবে কম চলছে পুজোতে।
২) অন্যান্য ড্রেস :
শুধু যে শাড়ি তা নয়়, তাছাড়া অন্যান্য ড্রেস পুজোতে ব্যপকহারে চলছে। জাম্পস্যুট, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইলের গ্রাউন, ক্রপ টপ, বিভিন্ন ধরনের প্লাজো, এদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে কেপ।
তবে এসব ড্রেস তো সারা বছরই পড়া হয়। পুজোতে ট্রাডিশনাল এবং ঐতিহ্য বজায় রেখে পোশাক পরার জন্য মুখিয়ে থাকলেও শর্ট ড্রেস এর চাহিদা কিন্তু কম নয়।
৩) পোশাকের রং :
বিভিন্ন রকমের রং এর পোশাক আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে। তবে কোন রঙের পোশাক পরবেন কোন রং টাতে আপনাকে বেশি মানাবে বুঝবেন কি করে?
তবে অগ্নিমিত্রা পালের পরামর্শ অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোলাপি ও লাল এর পাশাপাশি কমলা রং ও টেরাকোটার মতো উজ্জ্বল রঙে পুজোতে পড়তে পারেন অনায়াসেই। এবং প্রতি বছর পুজোর পাশাপাশি এবছরও এই রংগুলি ভীষণ ভাবে চলছে।
৪) মেকআপ :
কেনাকাটা তো অনেক হলো পোশাক-আশাক। তবে পূজার কটা দিন মেক-আপে থাকবেন কি করে? সুন্দর পোশাকের সঙ্গে মানানসই মেকআপ না হলে কিন্তু সবকিছুই মাটি হয়ে যাবে। তাই এক্ষেত্রেও অগ্নিমিত্রা পালের কিছু টিপস মেনে চললে আপনি অনেক সুবিধা পেতে পারেন। তিনি মনে করেন পূজার কটা দিন সকালের দিকে হালকা মেকআপ রাখা সবচেয়ে ভালো।
কারণ এখন বেশ ভ্যাপসা গরম রয়েছে। সেই কারণে হালকা মেকআপ এর সঙ্গে সুন্দর করে চুল টা বেঁধে নিতে পারেন। কিন্তু বিকালের পর মেকআপ টা হবে সম্পূর্ণ উল্টো। জাঁকজমকপূর্ণ মেকআপ এই সময় আপনি করতে পারেন অনায়াসেই।
কেননা গরমের ভাব অনেকটাই কমে যাবে এবং আপনার অস্বস্তি বোধ হবে না ভারী মেকআপ করতে। হেভি অথবা গ্ল্যামারাস মেকআপ লুক, তার সাথে সুন্দর করে হেয়ারস্টাইল যদি করেন তাহলে অনায়াসেই অনেকের মাত করে দিতে পারবেন আপনি।
৫) অন্যান্য পোশাকের বিশেষত্ব :
পুজোর সাজ ছাড়াও আরো অনেক পোশাক এর বিশেষত্ব জানিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল। মধুবনী, ইক্কত, প্রিন্টেড পোশাক, এসবই তার কাজের গুরুত্ব ও বিশেষত্ব।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে শর্ট এবং লং জ্যাকেট। তার সাথে থাকছে ছেলেদের ধুতি ও কুর্তা। তবে পুজোর সময় একটা দিন অন্তত ফ্যাশন লাভার ছেলেদের ধুতি পাঞ্জাবি পরার পরামর্শ দিচ্ছেন অগ্নিমিত্রা পাল।
৬) ঐতিহ্য মেনে সাজ :
যেসব বাড়িতে দুর্গোৎসব হয় সেইসব বাড়ির নারীদের আলাদা করে নিজের সাজের দিকটা খেয়াল রাখতে হয়। তার সাথে সেই বাড়ির ছেলেরাও কম যায় না।
অষ্টমীতে বড় লাল পাড় সাদা শাড়ির সাথে গা ভর্তি গয়না এবং সুন্দর করে পরিপাটি করে চুল বেঁধে তাতে বেল ফুলের মালা দিয়ে একেবারে পরিপাটি সাজে উপস্থিত হতে হয় উৎসবের জায়গাতে। ছেলেরা ঐতিহ্য মেনে ধুতি এবং পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠেন।
৭) গয়নাগাটি :
ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য সোনার গয়না সবার সমপরিমাণ নাও থাকতে পারে। তাই পুজোর কটা দিন নিজেকে সিটি গোল্ড জুয়েলারি দিয়ে হালকা সোনার গয়না লুক পেতে নিজেকে ঐতিহ্যবাহী করে তুলতে পারেন অনায়াসেই।
গলা ভর্তি জুয়েলারি, নেকলেস এবং তার সাথে হাতে বালা ও কানে বড় ঝুমকো আপনার পুজোর লুক সবাইকে মাত করে দিতে পারে।
৮) ছোটদের সাজ :
বড়দের সাথে সাথে পুজোর কটা দিন ছোটরাও কিন্তু সাজে বাহারে মেতে ওঠে। তাই তাদের দিকটা খেয়াল রাখাটাও জরুরি। অষ্টমীতে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য বাচ্চা মেয়েদের ঐতিহ্য বজায় রেখে সাজটা রাখলে বেশ মানায়়।
তার সাথে সাথে ছোট ছেলেদের ছোট ধুতি-পাঞ্জাবি তে সাজিয়ে তুলতে পারেন। তাহলে দেখতে যেমন কিউট লাগবে তেমনি আপনার পুজোর কটা দিন ঐতিহ্য ও আনন্দ দুটোই বজায় থাকবে।
৯) জুতো :
বাড়িতে থাকার ব্যাপার হলে আলাদা কথা কিন্তু যদি বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে হয় তাহলে মানানসই এবং হাঁটতে সুবিধা হবে এমন জুতো পরাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারন সারারাত ঠাকুর দেখে ঘরে যখন ফিরবেন তখন দেখবেন পায়ের হাল বেহাল।
সেজন্য পায়ের যত্নের দিকটা খেয়াল রেখে জুতো পরতে হবে, বেশী হাই হিল পড়ে আপনার হাজার অসুবিধা হোক এবং পায়ের কষ্ট দুটোই থাকবে। নতুন জুতো কেনার পর পড়ার আগে পায় অবশ্যই মশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন নইলে ফোসকা পড়তে কেউ আটকাতে পারবেনা।
পুজোতে নিজের পছন্দের সাথে সাথে ফ্যাশন ডিজাইনারদের টিপস গুলো মাথায় রাখলে সাজ অনেকটা ট্রাডিশনাল এবং নজরকাড়া হয়ে থাকে। পুজোর কটা দিন আনন্দের সাথে সাথে মেতে উঠুন নতুন সাজে।