মানুষ প্রাচীনকাল হতেই সম্পদশালী হতে চেষ্টা করে আসছে। আর এই সম্পদশালী হবার চেষ্টার একটাই কারণ, ভবিষ্যতে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করা, ভবিষ্যতে অর্থাভাবে পড়লে এই সম্পদ বিক্রি করে অর্থ পাওয়া যাওয়া। তাই আমরা চেষ্টা করি সম্পদ কিনে রাখতে।
মানুষ বিভিন্নভাবে তার সঞ্চয় থেকে বিনিয়োগ করে থাকে। এর মাঝে আছে সোনা কেনা, ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা, জমি কেনা । এই সকল উপায়ের সবকটিরই আলাদা আলাদা সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। আমরা এক এক সময় মনে করি সোনা কেনা ভালো লাভজনক, কেউ কেউ মনে করে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা লাভজনক, কেউ আবার জমি কেনার পক্ষে।
তাই অনেক সময় আমরা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারি না, কোনটি করলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো হয়। বিনিয়োগ করার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই কেবল এর থেকে একটা ভালো মুনাফা করা যায়। আপনি বিনিয়োগ করার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে বছরের পর বছরেও লাভের মুখ নাও দেখতে পারেন। এজন্য আমাদের সবার জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা উচিৎ কোথায় বিনিয়োগ করবো; সোনা, জমি নাকি ফিক্সড ডিপোজিটে।
আমাদের সাইটে নিয়মিতভাবে আপনাদের সাথে জমি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো বিনিয়োগ করা নিয়ে। আমরা দেখবো জমি, সোনা বা ফিক্সড ডিপোজিট কোনটিতে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে লাভবান হবার সুযোগ বেশি। আসুন দেখে নি সোনা, ফিক্সড ডিপোজিট বা জমি কেনার সুবিধা ও অসুবিধা।
সোনা – প্রাচীনকাল হতেই বিনিয়োগের জন্য প্রসিদ্ধ
ভারতের প্রতিটি ঘরে ঘরে সোনা একটি ঐতিহ্যের নাম। সারা বিশ্বের মাঝে ভারতে সোনা ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। তাই আমরা সোনার প্রতি একটু বেশি আগ্রহী। শুধু তাই নয়, ভারতের ছেলে মেয়ের বিয়ের সময় দুই পরিবারের মাঝে সোনার আদান প্রদান একটি সম্মানের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে সোনা কিনা জমানো আমাদের সমাজের মাঝে মিশে গেছে। যদি আমরা বিনিয়োগের মুনাফা বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাই গত ১০ বছরে গড়ে ৮%-১০% হারে সোনার মূল্য বেড়েছে। তাই সোনা বিনিয়োগ হিসেবেও ভালো গুরুত্ববহন করে থাকে।
সোনা কিনে বিনিয়োগের উপকারীতা
১) সোনা কিনে রেখে দিলে আপনি লাভবান হতে পারেন। আপনি যদি দীর্ঘসময় ধরে সোনা ধরে রাখেন তাহলে সোনার দাম দ্বিগুন দামেও বিক্রি করার সুযোগ আছে।
২) আপনার কোন আর্থিক প্রয়োজনে সোনা থাকলে ঋন ও পেতে পারেন। সাধারণত সোনার বর্তমান দামের ৭০%-৮০% টাকা ঋন হিসেবে পাওয়া যায়।
সোনা কেনার সময় যা মাথায় রাখতে হবে
১) সোনা কিনে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘসময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। অল্প সময়ে সোনার দাম খুব একটা না বাড়তে পারে।
২) সোনার দাম বিভিন্ন সময় কম বেশি হওয়ায় আপনি সোনা কেনাবেচার সময় বাজারের দামের উঠানামার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা নাহলে আপনি ভালো মুনাফা করতে পারবেন না।
জমি- মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফল
জমির দাম এখন আর কোথাও সস্তা নেই। গত শতকে জমির মূল্য অনেক গুন বেড়ে গেছে। আর এই জমির দাম ক্রম উর্ধমূখি। তাই জমি কিনে বিনিয়োগ করা অনেকের ইচ্ছা। রিয়েল স্টেট সেক্টর এগিয়ে আসায় জমির মূল্য অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেই সাথে মানুষকে জমি কিনতে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছে ব্যাংকগুলি ঋন নিয়ে । তাই মানুষ এখন জমিতে বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতে লাভের চিন্তা করছে। তবে জমি কিনতে গেলে বড় একটি অংশ স্ট্যাম্প ডিউটি ও জমি রেজিস্ট্রেশনে চলে যায়।
জমি কিনে বিনিয়োগের উপকারীতা
১) আপনার জমিতে আপনি ইচ্ছামত বাড়ি বানাতে পারবেন, যদি না আপনি আপনার জমি ডেভেলাপারকে দিয়ে দেন।
২) সময়ের সাথে সাথে জমির দাম বেড়ে আপনার লাভবান হবার সুযোগ আছে।
জমি কেনার সময় যা মাথায় রাখতে হবে
১) জমি কেনার সময় সঠিক ক্রেতার কাছ থেকে কিনতে হবে। কেনার আগে সঠিক ভাবে জমির সকল কাগজপত্র বুঝে নিতে হবে, যাতে করে অন্য কারো জমি দেখিয়ে কেউ বিক্রি না করতে পারে।
২) জমি কেনার পর অবশ্যই নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন না করলে যে কোন সময় আপনার কেনা জমি বেহাত হয়ে যেতে পারে।
ফিক্সড ডিপোজিট করা- নিশ্চিত মুনাফা দেয়
গত কয়েক বছরে ডিপোজিট হতে মুনাফার হার অনেক কমে এসেছে। বিগত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলি ৪%-৬% হারে মুনাফা দিয়েছে, যেখানে কয়েক বছর আগেও ৭%-৮% মুনাফা দিয়ে আসছিলো। কিন্তু তাই বলে ব্যাংকের ডিপোজিট করা কমে যায়নি।
সরকারের হিসাবমতে, গত কয়েক বছরে ডিপোজট করার পরিমান বেড়েছে। ব্যাংকে ডিপোজিট করায় মুনাফা নিশ্চিত হওয়ার আর ঝামেলা না থাকায় মানুষের মাঝে এই ফিক্সড ডিপোজিট জনপ্রিয় হয়েছে।
ফিক্সড ডিপোজিট করার সুবিধা
১) এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিশ্চিন্ত বিনিয়োগ। আপনি নিশ্চিত ভাবে আপনার মূল টাকা ফেরত পাচ্ছেন এবং সেই সাথে নিশ্চিত মুনাফা পাচ্ছেন।
২) ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করলে সরকারের ট্যাক্স আইনের কারণে ট্যাক্স মওকুপ পাওয়া যায়।
ফিক্সড ডিপোজিট করার সময় যা দেখে নিতে হয়
১) ফিক্সড ডিপোজিট করার সময় অবশ্যই ব্যাংকে ডিপোজিট করতে হবে। অনেক সময় নন ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করে পরে মূলধন ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
২) ফিক্সড ডিপোজিট করার আগেই জেনে নিতে হবে সময়ের আগে ডিপোজিট ভেঙ্গে ফেলতে চাইলে জরিমানা দিতে হবে কিনা বা জরিমানা কত দিতে হবে।
৩) বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন হাতে মুনাফা দেয়ায়, দেখে নিতে হবে কোন ব্যাংকে ভালো মুনাফা দিয়ে থাকে।
এভাবে আমরা সোনা, জমি ও ফিক্সড ডিপোজিট করার সুবিধা নিয়ে আলোচনা করলাম । আপনাদের নিজ নিজ সুবিধা বিবেচনা করে আপনি আপনার বিনিয়োগ করবেন, তাহলে আপনি সময়ের সাথে সাথে আপনার বিনিয়োগ হতে লাভবান হতে পারবেন। আগামীতে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে জমি থেকে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে।
জমি নিয়ে আরো অনেক লেখা পেতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলি দেখুন। আমাদের লেখা ভালো লাগলে বা যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পাতায় লিখুন। আমরা আপনার মন্তব্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো।