চীনা বাদাম একটি বহুল জনপ্রিয় খাদ্য। কাচা ও ভাজা উভয় অবস্থায়ই চীনা বাদাম খাওয়া যায়। এর ব্যবহার সর্বাধিক। চানাচুর, মাখন, কেক, বিস্কুট, তরকারি হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ভর্তা হিসেবে ও এটি খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া বাদাম থেকে তেল ও তৈরি হয়ে থাকে। চীনা বাদাম উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। এর ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে থাকে। এক কথায় চীনা বাদামের পুষ্টিগুন অনেক।
আজ আমরা আপনাদের সাথে চীনা বাদাম চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই চীনা বাদাম চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন চীনা বাদাম চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
চীনা বাদাম চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। চীনা বাদাম যাতে সহজেই মাটি ভেদ করে যেতে পারে তার জন্য মাটি সুনিষ্কাশিত হতে হবে এই জন্য হালকা বেলে দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী।
বীজ বপনের সময়ঃ
সাধারনত এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় চীনা বাদাম চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
তবে রবি মৌসুমে চাষ করতে হলে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
বীজের পরিমানঃ
বাদাম চাষে বীজের পরিমান বাদামের জাতের উপর নির্ভর করে থাকে। সাধারনত এক হেক্টর জমির জন্য খোস সহ বাদাম ৯৫-১০০ কেজি প্রয়োজন হয়ে থাকে।
জমি তৈরিঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমি ভালো ভাবে চাষ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৩-৪ টি চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে সেচ ব্যবস্থার সুবিধার জন্য।
বীজ বপন পদ্ধতিঃ
বীজ বপন করার আগে চীনা বাদাম থেকে ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়ানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজের উপরের পাতলা পর্দা নষ্ট না হয়ে যায়।
খোসা ছাড়ানোর পর পরই বীজ বপন করে দেওয়া উচিত কারন তখন বীজ টা টাটকা থাকে। তবে খোসা ছাড়ানোর ২-৫ দিনের মধ্যে বীজ বপন করা যাবে।
বাদামের বীজ সাধারনত সারিতে বপন করা উচিত। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৪৫ সেমি এবং এক বীজ থেকে আরেক বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেমি।
বীজ বপন করতে হবে ৫ সেমি গভীর করে। জমিতে বীজ বপন করার সময় পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে। যদি মাটিতে রসের পরিমান কম থাকে তাহলে জল সেচ দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে।
চীনা বাদাম চাষে এক হেক্টর জমিতে ৫-৭ টন পচা গোবর, ইউরিয়া ২০-৩০ কেজি, টিএসপি ১৫০-১৭০ কেজি, এমওপি ৮০-৯০ কেজি, জিপসাম ১৬০-১৮০ কেজি প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জমি শেষ বার চাষ করার সময় বীজ বপন করার আগে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক ছাড়া বাকি সব সার প্রয়োগ করতে হবে।
বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে বীজ বপন করার ৪০-৫০ দিন পর যখন গাছে ফুল আসবে। তবে জমিতে অনুবীজ সার ও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এই সার প্রয়োগ করতে হবে এক কেজি বীজের জন্য ৭০ গ্রাম। তবে অনুবীজ সার প্রয়োগ করলে জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার দরকার হয় না। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমির অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হবে জমিতে। খরিপ মৌসুমে একবার সেচ দিতে হবে।
যদি চর এলাকায় চীনা বাদাম চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে রবি মৌসুমে সেচ দিতে হবে।
কারন তখন মাটিতে রস শুকিয়ে যায়। তখন ১-২ টি সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমির আগাছা ভালো করে ছাটাই করে দিতে হবে। বীজ বপন করার ১৫-২০ দিন পর একবার নিড়ানি দিতে হবে ।
প্রয়োজনে মাটি হালকা কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। মাটি যদি বেশি শক্ত হয়ে যায় তাহলে গাছে ফুল ধরার আগে গাছের গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
জমিতে যদি রোগ আক্রমন করে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চীনা বাদাম চাষে সাধারনত বিছা পোকা, উইপোকা আক্রমন করে থাকে ।
বিছাপোকা আক্রমন করলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি এক লিটার জলের সাথে এক মিলি পরিমান মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে। উইপোকা আক্রমন করলে জমিতে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
এছাড়া চীনা বাদাম গাছে পাতার দাগ রোগ দেখা যায় ও পাতায় মরিচা রোগ দেখা যায়। জমিতে রোগ আক্রমন করলে উপযুক্ত ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
বাদাম পরিপক্ক হবার পর তা সংগ্রহ করতে হবে। গাছের পাতা যখন হলুদ হয়ে যাবে এবং গাছের নিচের দিকের পাতা যখন ঝরে পড়তে শুরু করবে তখন ফল সংগ্রহ করতে হবে।
এ সময় একটি বা দুটি গাছের গোড়ার মাটি খুড়ে বাদামের রং পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারপর বাদাম সংগ্রহ করতে হবে। বাদাম সংগ্রহের পর ৩-৪ দিন ভালো করে রোদে শুকাতে হবে। ।
ফলনঃ
সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে এক হেক্টর জমি থেকে ২-২.৫ টন চীনা বাদাম পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।