বাবার মৃত্যুর পরে ভাইদের মধ্যে সম্পত্তি বিভাজন কিভাবে করা যায়?

ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন অনুসারে বাবার মৃত্যুর পর তার সন্তানরা সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে থাকে। এই মালিকানা মৃত ব্যক্তির উত্তরসুরীরদের মাঝে ভাগ হয়ে থাকে। তাই বাবার মৃত্যুর পর যতজন ভাই থাকে তাদের মাঝে এই সম্পত্তি ভাগ হয়ে থাকে। আমাদের সবারই এই বিষয়গুলি জানা উচিত। বাবার সম্পত্তি ভাইদের মাঝে কিভাবে ভাগ হবে তা আমাদের জানা থাকলে আমরা সহজেই প্রয়োজনের সময় এই সম্পত্তি বিভাজনের ব্যপারে জানতে পারবো।



আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা এই সাইট থেকে জমি কেনার বেচার নিয়ম, উত্তরাধিকার আইন, কোন জমি কিনলে লাভবান হওয়া যায় এসব কিছু নিয়ে আপনারা জানতে পারেন। 



এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, বাবার মৃত্যুর পরে ভাইদের মধ্যে কিভাবে সম্পত্তি বিভাজন করা যায়। এর ফলে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন, কিভাবে বাবার মৃত্যুর পরে সম্পত্তি কিভাবে ভাইদের মাঝে ভাগ করা যাবে। 

 

আসুন দেখে নিই, কিভাবে বাবার মৃত্যুর পর ভাইদের মাঝে সম্পত্তি বিভাজন হয়। 

 

সম্পত্তির উত্তরাধিকার কি?

উত্তরাধিকার শব্দটি আমাদের সমাজে সম্পত্তির ব্যপারে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এই উত্তরাধিকার বলে একজনের সম্পত্তি তার মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তি আইনী ভাবে তার সন্তান ও অন্যান্য ব্যাক্তির মালিকানায় চলে যায়। এই উত্তরাধিকার আইনে কে কিভাবে পাবে তা ভারতীয় আইনে অনুযায়ী হয়ে থাকে। 



ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ অনুযায়ী কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর পর তার সকল সম্পত্তি তার বৈধ উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর হবে। এই উত্তরাধিকারী নির্ধারিত হবে তার নিজ ধর্মের আইন অনুযায়ী। অন্যদিকে, মৃত ব্যাক্তি যদি মৃত্যুর আগেই তার সম্পত্তি উইল করে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তির রেখে যাওয়া লিখিত উইল অনুযায়ী তার সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারিত হবে। 

 

উইল করা না থাকলে কি করা যাবে?

কোন ব্যাক্তি তার মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার উইল করে না গেলে সে সম্পত্তি ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বন্টন করা হবে। এই উত্তরাধিকার আইন আলাদা আলাদা ধর্মের জন্য আলাদা হয়ে থাকে। ভারতীয় আইনে হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান ধর্মের মানুষের উত্তরাধিকার আইন আলাদা আলাদ বলা আছে। 

 

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন কি বলে? 

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারন করা হয়ে থাকে। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম ও শিখ ধর্মের মানুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও হিন্দু আইন অনুযায়ী নির্ধারন হয়ে থাকে। 



হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুসারে সন্তানরা তার পিতার ১ম শ্রেনীর উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে। এই আইন অনুযায়ী বাবার মৃত্যুর পর ছেলেরা তার পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাবে। 

 

উদাহরণঃ

একজন ব্যাক্তি মৃত্যুর সময় তার ৪ পুত্র ও স্ত্রী রেখে গেলে, তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার তার পুত্ররা মোট সম্পত্তির ৫ ভাগের ১ ভাগ করে পাবে। এক্ষেত্রে সকল পুত্র সমানভাবে অধিকার লাভ করবে । কোন পুত্র সম্পত্তির ভাগ কম বেশি পাবে না। 

 

আইনীভাবে কিভাবে সম্পত্তি ভাগ করা যায়?  

সম্পত্তি ভাগ করার সময় কিছু কাগজপত্র দরকার হয়।১) মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ।২) মৃত ব্যক্তির সকল সম্পত্তির প্রমান।৩) মৃত ব্যাক্তির উত্তরাধিকার কারা তার সনদপত্র। এই সকল কাগজপত্র সহকারে সমঝোতার মাধ্যমে এই সম্পত্তি ভাগ করা হয়ে থাকে। সমঝোতা হবার পরে সকল অংশীদারকে ঐ লিখিত সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়।

সমঝোতা না হলে কি করা যাবে? 

কখনো যদি উত্তরাধিকারদের মাঝে সমঝোতা না হয়ে থাকে, তাহলে কোন উত্তরাধিকার চাইলে তার উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পাবার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। এতে করে আদালত সকল কাগজপত্র দেখে সকল উত্তরাধিকারীরা কে কেমন সম্পত্তি পাবে তা নির্ধারন করে আদেশ প্রদান করবে। 


এভাবে, বাবার মৃত্যুর পর ভাইদের মাঝে সম্পত্তির ভাগ হয়ে থাকে। 



আজ আমরা আপনাদের সাথে বাবার মৃত্যুর পর কিভাবে ভাইদের মাঝে সম্পত্তির ভাগ হয়ে থাকে তা নিয়ে আলোচনা করলাম। এতে করে আপনারা এই বিষয়টি ভালো করে বুঝতে পারলেন। আমাদের সাইটের পরবর্তী লেখায় আপনাদের জন্য এই বিষয়ের উপর আরো বিস্তারিত লেখা থাকবে। তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন।


এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে জমি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top