ঝিঙ্গা একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। এটি খুব পরিচিত একটি সবজি। এতে রয়েছে প্রোটিন ও ভিটামিন।
আজ আমরা আপনাদের সাথে ঝিঙ্গা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই ঝিঙ্গা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন ঝিঙ্গা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
জলবায়ু ও মাটিঃ
ঝিঙ্গা একটি দীর্ঘ সময় ব্যাপী ফসল। এ জন্য প্রয়োজন উষ্ণ আবহাওয়া। ঝিঙ্গা চাষের জমিতে প্রচুর সূর্যের আলো থাকতে হবে। সাধারনত উচ্চ জৈব পদার্থ যুক্ত দোআঁশ মাটি ঝিঙ্গা চাষের জন্য উপযোগী। জমি উচু ও সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ
সাধারনত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ঝিঙ্গা বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
বীজের হারঃ
এক হেক্টর জমিতে ৩-৪ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে। এক শতাংশ জমিতে বীজ প্রয়োজন হয় ১২-১৫ গ্রাম।
জমি তৈরিঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। গাছের শিকড় যেন ভালো ভাবে বৃদ্ধি পায় সে জন্য জমিতে ঠিক ভাবে গর্ত তৈরি করতে হবে।
মাটি কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে নরম করতে হবে ও জমি থেকে আগাছা দূর করতে হবে। ঝিঙ্গা সাধারনত জমির আইলে রোপন করতে হবে।
জমির চার কোণায় উচু জায়গা তৈরি করেও ঝিঙ্গা চাষ করা যায়।
বেড তৈরিঃ
বীজ বপন করার জন্য বেড তৈরি করতে হবে। বেডের উচ্চতা ১৫-২০ সেমি হতে হবে। এবং প্রস্থ হবে ১.২ মিটার।
এক বেড থেকে আরেক বেডের মাঝে নালা তৈরি করতে হবে। নালার প্রস্থ হবে ৬০ সেমি।
বীজ বপনঃ
ঝিঙ্গার বীজ অঙ্কুরোদগম হতে সময় দরকার হয়। তাই বীজ বপন করার আগে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ অঙ্কুরোদগম হতে সময় কম লাগে।
বীজ থেকে চারা দ্রুত হয়। একটি মাদায় ৩-৪ টি বীজ বপন করা যায়। বীজ অঙ্কুরোদগম হতে সাধারনত সময় লাগে ৫-৭ দিন।
তবে বীজ যদি ভালো মানের না হয় তাহলে সময় একটু বেশি লাগে । সেক্ষেত্রে সময় লাগে ১০-১৫ দিন।
মাদা তৈরি ও চারা রোপনঃ
চারা রোপন করার জন্য মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার ব্যাস হবে ৫০ সেমি। গভীরতা হবে ৫০ সেমি। ২ মিটার পর পর মাদা তৈরি করতে হবে।
এর মাঝে নালা থাকতে হবে ৬০ সেমি প্রশস্ত। একটি বেডে এক সারিতে ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা রোপন করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে জৈব সারের পরিমানর বেশি হলে ফলন ভালো হয়ে থাকে।
সাধারনত মাদা প্রতি গোবর সার দিতে হবে ৫-১০ কেজি, ইউরিয়া দিতে হবে ৫০০ গ্রাম। টিএসপি দিতে হবে ৪০০ গ্রাম, এমওপি দিতে হবে ৩০০ গ্রাম।
সার প্রয়োগের নিয়মঃ
জমিতে আইল তৈরি করার সময় গোবর, টিএমপি ও ১০ গ্রাম এমপি সার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার ও বাকি এমপি সার দুই কিস্তিতে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ থেকে চারা গজানোর ১৫ দিন পর একবার সার প্রয়োগ করতে হবে। আবার ৩০ দিন পর বাকি সার প্রয়োগ করতে হবে। জমির প্রয়োজন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ করার পর মাটি ভালোভাবে আলগা করে সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। জমিতে যদি জলের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে সেচ দিতে হবে।
তবে বৃষ্টি হলে সেচ দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাউনি দেয়াঃ
জমিতে বাউনি দিলে ফলন ভালো হয়। মাটিতে চাষ করার চেয়ে মাচায় চাষ করলে ফসলের মান উন্নত হয়।
মাটিতে চাষ করলে অনেক সময় ফলের একপাশ একটু রঙহীন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বাজার মূল্য কমে যায় ফসলের। তাই বাউনি দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমিতে আগাছা জমতে দেয়া যাবে না। নিয়মিত আগাছ দমন করতে হবে। জমিতে সেচ প্রদান করার পর এবং সার প্রয়োগ করার পর জমি থেকে আগাছা বাছাই করতে হবে।
জমিতে জো আসলে নিড়ানি দিতে হবে। এছাড়া চারা গজানোর পর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করে দিতে হবে।
অন্য পরিচর্যাঃ
বীজ বপন করার পর অনেক সময় সব বীজ গজায় না। তাই সেখানে আবার নতুন করে বীজ বপন করতে হবে।
তবে গাছ যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে পাতলা করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
ঝিঙ্গা গাছে বিটল পোকা নামক এক ধরনের পোকা আক্রমন করে থাকে। এই পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে।
এছাড়া গান্ধি পোকা নামে এক ধরনের পোকা আক্রমন করে থাকে। মাছি পোকা নামে এক ধরনের পোকা আক্রমন করে থাকে।
এইসব পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপন করার ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে ফসল পরিপক্ক হয়ে থাকে। ফসল পরিপক্ক হবার পর তা সংগ্রহ করতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে এক একটি আইল থেকে প্রায় ২৫-৩৫ কেজি ঝিঙ্গা পাওয়া যায়।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।