চাল কুমড়া চালে চাষ করা হয় বলে এমন নামকরন হয়েছে। তবে জমিতে মাচায় ও এর চাষ হয়ে থাকে। মাচায় চাষ করলে ফলন ভালো হয়ে থাকে।
কচি কুমড়া বা জালি তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। পরিপক্ক চাল কুমড়া দিয়ে মোরব্বা তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি হালুয়া তৈরিতে ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা খুবই উপকারী খাদ্য।
আজ আমরা আপনাদের সাথে চাল কুমড়া চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই চাল কুমড়া চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন চাল কুমড়া চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই চাল কুমড়া চাষ করা যেতে পারে। তবে দোআঁশ ও এটেল মাটি চাল কুমড়া চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।
বীজ বপনের সময়ঃ
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত চাল কুমড়ার বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
বীজের পরিমানঃ
সাধারনত এক শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
চারা তৈরিঃ
জমিতে রোপন করার আগে বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হবে। চারা সাধারনত পলিব্যাগে তৈরি করতে হয়ে। পলিব্যাগে তৈরি করলে চারার গুনগত মান ভালো থাকে।
বীজ থেকে চারা তৈরি করতে প্রথমে বীজ গুলোকে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ বপন করার জন্য বীজতলা তৈরি করতে হবে। বীজতলায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজতলা তৈরি করার জন্য ৬০ ভাগ দো আঁশ মাটি, ৪০ ভাগ গোবর, ও অল্প পরিমান ছাই মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
বীজ জল থেকে তুলে বীজতলায় বসিয়ে একটি পাটের ছালা বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কিছুদিন পর পর সেই বীজতলায় অল্প করে জল দিতে হবে।
বীজগুলো ৩-৪ দিনের মধ্যেই অঙ্কুরোদগম হবে। এই অঙ্কুরিত চারা গুলো তারপর পলিব্যাগে রোপন করতে হবে।
পলিব্যাগে ১০-১৫ দিন থাকার পর সেগুলো জমিতে রোপন করার জন্য উপযুক্ত হবে।
জমি তৈরিঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৩-৪ টি চাষ দিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
জমি যেন উচু হয় ও জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাড়ির আঙিনায় চাষ করার ক্ষেত্রে চারা বড় হলে বাশেঁর কঞ্চি বা খুটি পুঁতে দিতে হবে চারার সাথে।
মাদা তৈরিঃ
জমির মাটি সমান করে নিয়ে তারপর মাদা তৈরি করতে হবে। ২-২.৫ মিটার দূরত্ব রেখে মাদায় চারা রোপন করতে হবে।
মাদার উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি। দুইটি মাদার মাঝখানে নালা তৈরি করে দিতে হবে জল নিকাশের জন্য।
নালার প্রশস্ততা হবে ৬০ সেমি। চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্ত হবে। প্রয়োজনে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে সাধারনত বেশি পরিমানে জৈব সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
জমিতে ইউরিয়া দিতে হবে ১০-১২ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৮-১০ কেজি, পটাশ দিতে হবে ৩-৫ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ৩ কেজি। এছাড়া জৈব সার বা কম্পোস্ট সার দিতে হবে।
ইউরিয়া সার বাদে বাকি সব সার জমি তৈরি করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপন করার ৫-৭ দিন আগে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার ভালো ভাবে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
জমিতে নিয়মিত সেচ প্রয়োগ করতে হবে। মাটির রসের প্রকৃতি বুঝে জমিতে সেচ দিতে হবে।
মাটি শুকিয়ে গেলে গাছ নেতিয়ে পড়তে পারে তাই মাটিতে জলের ঘাটতি দেখা দিলেই সেচ দিতে হবে।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেচ দেয়ার পর মাটি চটা বেধে থাকলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
আগাছ গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও গাছের পুষ্টি শোষন করে নেয়। তাই জমির আগাছা দমন করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
গাছ বেশি ঘন হয়ে গেলে তা পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি মাদায় সুস্থ দেখে ২-৩ টি চারা রাখতে হবে , বাকি চারা তুলে ফেলে দিতে হবে।
গাছের গোড়ার মাটি আলাগা করে দিতে হবে যেন মাটিতে আলো বাতাস ঢুকতে পারে। গাছ একটু বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
চাল কুমড়া ক্ষেতে বিভিন্ন পোকার আক্রমন হয়ে থাকে। এসব পোকার মধ্যে আছে সাদা মাছি পোকা বা স্টেম ব্লাইট রোগ ।
এসব রোগ দেখা দিলে জমিতে ইমিডাক্লোরোপিড বা রিডোমিল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
১০ লিটার জলের সাথে ২০ গ্রাম ওষুধ মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া অন্যান্য রোগ ও পোকা আক্রমন করে থাকলে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিন পরই ফসল পরিপক্ক হয়ে থাকে। সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য সবুজ হুল যুক্ত কুমড়া সংগ্রহ করতে হবে ।
তবে যদি মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য হয় তবে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে জাত ভেদে এক শতক জমি থেকে প্রায় ১১০-১৩০ কেজি চাল কুমড়া পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।