ন্যাশনাল ক্লিন গঙ্গা মিশন 2024: যোজনার উদ্দেশ্য ও সুবিধা

National Mission for Clean Ganga, অথবা ন্যাশনাল ক্লিন গঙ্গা মিশন (এনএমসিজি) ন্যাশনাল গঙ্গা কাউন্সিল নামে পরিচিত গঙ্গা নদীর পুনর্জীবন, সুরক্ষা ও পরিচালনা ন্যাশনাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল।

ন্যাশনাল গঙ্গা কাউন্সিলের আওতাধীন ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার (এনএমসিজি) উত্তর প্রদেশ, উত্তরখণ্ড, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে, রাজ্য স্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট গ্রুপগুলি (এসপিএমজি) সমর্থন করে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে গঙ্গা নদীর দূষণ দূরীকরণে ভারত সরকার কতৃক গৃহীত একটি সময়োউপযোগী উদ্যোগ।

National Mission for Clean Ganga in Bangla
ন্যাশনাল ক্লিন গঙ্গা মিশন যোজনার 2024 উদ্দেশ্য ও সুবিধা

ভারতের সার্বিক উন্নয়ন ও পরিবেশ দূষন রোধে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তারমধ্যে গঙ্গা পরিষ্কার মিশন অন্যতম। গঙ্গা দেশের সবচেয়ে বড় নদী, এটা তীর্থক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর জল দূষন রোধ করা একান্ত প্রয়োজন বিধায় এই মিশন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷

সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে গঙ্গা পরিষ্কার মিশন সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানো। চলুন দেরী না করে গঙ্গা পরিষ্কার মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গঙ্গা পরিষ্কার করার জাতীয় মিশন

২০২০ সালে ১০-১৫ ডিসেম্বর ৫ম ভারত ওয়াটার ইমপ্যাক্ট সামিট অনুষ্ঠিত হয়। আইডব্লিউআইএস সামিট ২০২০ এর লক্ষ্য নদী ও জলাশয়গুলি পরিষ্কার ও দূষনমুক্ত রাখতে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেওয়া এবং নদী সংরক্ষণের সাথে পরিবেশ উন্নয়নের সমন্বয়সাধন করা।

এটি ভারতের উন্নয়নমূলক যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এই উদ্যোগের দ্বারা দেশের পরিবেশ ও জল দূষণের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব হবে।

National Mission for Clean Ganga Scheme
ন্যাশনাল ক্লিন গঙ্গা মিশন যোজনা 2024

বিশ্বব্যাংক ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার (এনএমসিজি) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি লোন নামামি গঙ্গায় (দ্বিতীয় পর্বের জন্য) অনুমোদন দিয়েছে।

গঙ্গা নদীর অববাহিকায় জল ও পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য করতে ৩,০০০ কোটি রুপি এখন পর্যন্ত ৩১৩ টি প্রকল্প এ ব্যয় করা হয়েছে।

এই ৩১৩ টি প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো মিশনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। মিশনট বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য ২৫,০০০ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে।

পরিষ্কার গঙ্গার জন্য ন্যাশনাল মিশনের উদ্দেশ্যগুলি

ভারত সরকার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার (এনএমসিজি) আয়োজন করেছিল। এনএমসিজি দূষণ হ্রাস ব্যবস্থাগুলির অন্তর্ভুক্তি, ডাইভারশন এবং খোলা ড্রেনের মধ্য দিয়ে যাতে প্রবাহিত বর্জ্য জল নিষ্কাশিত হয়ে যায় তার উপর জোর দেয়।

এই লক্ষ্য পূরণে বায়োরেডিয়েশন, এপ সিটু ট্রিটমেন্ট, অগ্রণী প্রযুক্তি, নিকাশী ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) এবং প্রবাহিত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) এর মাধ্যমে দূষণ হ্রাস করা সম্ভব হবে বলে আলোচনায় বলা হয়।

প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ পরিবর্তনের পরিবর্তে জল প্রবাহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এই মিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য। যাতে নদীর জল প্রাকৃতিকভাবে বয়ে যেতে পারে, এবং সেই সাথে পরিষ্কার দূষনমুক্ত থাকে।

নদীর জলের উপরিভাগের প্রবাহ এবং ভূগর্ভস্থ জল উভয় স্তরের জলই যেন দূষণমুক্ত থাকে এবং এই দূষণমুক্ততা এবং বজায় রাখা এই মিশনের উদ্দেশ্য।

নদী অববাহিকায় জন্মানো প্রাকৃতিক উদ্ভিদগুলো যাতে পুনরায় জন্মায় এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় তা এই মিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে।

জলজ জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি গঙ্গা অববাহিকা নদীর তীরবর্তী জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পুনর্জীবন করা হবে।

সেইসাথে নদীর সুরক্ষা, নবায়ন এবং দূষনমুক্ত করার প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

কারণ কেবল রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপে গঙ্গা পরিষ্কার রাখার মিশন সফল করা সম্ভব হবেনা পরিচ্ছন্ন গঙ্গা মিশন প্রতিষ্ঠার আগে গঙ্গা নদীর দূষণ হ্রাস ও পরিষ্কারের দিকে লক্ষ্য রেখে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

এই মিশন বাস্তবায়নের আগে ভারত সরকার গৃহীত কয়েকটি বড় উদ্যোগ নীচে আলোচনা করা হয়েছে:

ইন্দিরা আবাস যোজনাঃ আবেদন ও নতুন লিস্ট

গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান:

এটি ১৯৮৫ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল। এটি প্রথম রিভার অ্যাকশন প্ল্যান যা অভ্যন্তরীণ নিকাশীর বাধা, বাঁক এবং পরিশোধনের মাধ্যমে জলের গুণগতমান উন্নতির জন্য চালু করা হয়েছিল।

এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল নদীতে বিষাক্ত ও শিল্প রাসায়নিক বর্জ্য প্রবেশ রোধ করা। ন্যাশনাল নদী সংরক্ষণ পরিকল্পনা: এই সংরক্ষণ পরিকল্পনাটি ভারতের সমস্ত প্রধান নদীগুলো দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে গঙ্গা অ্যাকশন পরিকল্পনার সম্প্রসারণ হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল।

ন্যাশনাল নদী গঙ্গা অববাহিকা কর্তৃপক্ষ (এনআরজিবিএ): ভারতের প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, ন্যাশনাল নদী গঙ্গা বেসিন কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবেশ সুরক্ষা আইন, ১৯৮৬ এর ৩ ধারা এর অধীনে গঠিত প্রকল্পটি গঠিত হয়েছিল।

এটি গঙ্গাকে ভারতের ন্যাশনাল নদী হিসেবে ঘোষনা করেছিল।

নদীতে বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ ফেলা রোধ করতে শিল্প-কল-কারখানার বর্জ্য প্রবেশ রোধে ২০১০ সালে একটি সরকারী পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছিল।

কিন্তু এগুলোর কোনটি দ্বারাই নদীর জল দূষন পরিপূর্নভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি বিধায় সরকারীভাবে গঙ্গা পরিষ্কার রাখার জাতীয় মিশন নেওয়া হয়েছে।

নামামি গাঙ্গে কি?

নামমী গঙ্গা যোজনা (এসপিএমজি) এর সাথে গঙ্গা পরিষ্কার ন্যাশনাল মিশনের সাথে গৃহীত হয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, অরুণ জেটলি ১০ জুলাই, ২০১৪-এ নামামি গঙ্গার বাস্তবায়ন ঘোষণা করেছিলেন।

Namami Gange Scheme
ন্যাশনাল ক্লিন গঙ্গা মিশন 2024

বিশ্বব্যাংকের তহবিল – গঙ্গা নদীর উপনদীগুলির পাশাপাশি বিল্ডিং অবকাঠামো ন্যাশনাল গঙ্গা নদী অববাহিকা প্রকল্পের আওতায় গঙ্গা নদীর তীরে অবকাঠামোগত প্রকল্পের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল অনুমোদন করেছে।

২০২৬ সালের ডিসেম্বর অবধি পাঁচ বছরের জন্য লোন দেওয়া হয়েছে এই অর্থ। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পটির মাধ্যমে গঙ্গা নদীর তীরে ২০ টি হটস্পটে জলের নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করেছিল।

বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে সাম্প্রতিক তহবিলগুলি যমুনা নদী এবং কালী নদীর মতো গঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ শাখা নদীগুলির জল নিষ্কাশন অবকাঠামো তৈরিতেও সমানভাবে সহায়তা করবে।

জার্মান ফেডারেল সরকারের মালিকানাধীন দেশটির জল সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা (জিআইজেড) হিসাবে গঙ্গাকে পুনর্জীবিত করতে ভারত জার্মানির সাথেও যোগ দিয়েছে।

আগস্ট ২০১৭ সালে, জার্মানি তার রাষ্ট্রদূত ড। মার্টিন নে এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভেন্দ্র সিং রাওয়াতের মধ্যে বৈঠককালে আনুষ্ঠানিকভাবে ৯০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি সিল সাক্ষর করে।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা – নতুন এই বছরের সবকিছু

গঙ্গা পরিষ্কার রাখার জাতীয় মিশনের চ্যালেঞ্জসমূহ

গঙ্গা পরিষ্কার রাখার জন্য ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন যার অভাব রয়েছে, দেশের জনগণ যখন নদীর জল ব্যবহার করে তখন তারা এখানে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ ফেলে থাকেন, যা পরিষ্কার করা একটি বিরাট সমস্যা।

দেশের বড় বড় কল-কারখানাগুলো বর্জ্য ফেলে থাকে গঙ্গা নদীতে, জাহাজ, স্টিমারও ময়লা ফেলে থাকে, শুধুমাত্র পরিষ্কার করার মিশন নিয়ে এইসব দূষন প্রতিহত করা সম্ভব নয়, যদিনা দেশের মানুষ নিজেরা এইসব দূষন রোধে নিজেরা সচেতন না নয়।

গঙ্গা নদীতে মাছ জন্মাবে না, এই জাতীয় নদী আর ব্যবহার করার উপযুক্ত থাকবে না যদি এভাবে দূষন চলতে থাকে এই বিষয়টি দেশের নাগরিকদের উপলব্ধি করানোটাই বড় ব্যাপার৷

এছাড়া তহবিল গঠন, অবকাঠামো তৈরিতে প্রযুক্তি ও জনবলের অভাব, ইত্যাদি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা এই মিশন বাস্তবায়নে বাধাসৃষ্টি করছে

বিশেষ কথা

দেশের জাতীয় নদী গঙ্গা পরিষ্কার মিশন তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে যখন সরকারের পাশাপাশি জনগণও এই মিশনে অংশগ্রহন করবে৷

গঙ্গা নদীর দূষণ ঠেকানো না গেলে পুরো দেশের জীববৈচিত্র‍্য ও অর্থনীতিতে যে বিরুপ প্রভাব পড়বে এ বিষয়ে সকলকে সচেতন করে তুলতে সেমিনার, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাহায্য নিলে প্রচার দ্রুত করা সম্ভব হবে।

আশা করি গঙ্গা পরিষ্কার রাখার জাতীয় মিশন সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন।

কেন্দ্র সরকারের সমস্ত যোজনাClick Here
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রকল্পClick Here
বাংলাভুমি হোমClick Here

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top