বিজয়া দশমী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Vijaya Dashami 2024: History and Significance

2024 Vijaya Dashami History and significance, 2024 বিজয়া দশমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন বিজয়া দশমী কেন পালন করা হয়? বিধি কি? কিভাবে শুরু হয়েছিল।

বিজয়া দশমী ইতিহাস ও তাৎপর্য (Vijaya Dashami History and Significance): সবচেয়ে আনন্দ ও খুশির উৎসবের এই দিনটাই তো শেষ হয় এই দিনে। এইদিন মন খারাপের সাথে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে হয় প্রত্যেক বাঙালি কে।

দশমি কথাটি প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য সহজবোধ্য। অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে দেবী দুর্গা অথবা উমা কৈলাসে পাড়ি দেন। সেই কারণেই বিজয়া দশমী নামে পরিচিত এই দিনটি।

দশমিকেকেন “বিজয়াদশমী” বলা হয় (ইতিহাস):

তিন দিন ধরে মহা পুজোর পর চলে আসে বিজয়া দশমী (Vijaya Dashami)। মায়ের বিসর্জন এর আগে মায়ের সামনে সাদা অপরাজিতা ফুল অর্পণ করা হয়। মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। প্রাচীন যুগে এই দিনে ক্ষত্রিয় রা অস্ত্র পুজো করে পরের দিন যুদ্ধে রওনা দিতেন।

Vijaya Dashami History and Significance
2024 বিজয়া দশমী – 2024 Vijaya Dashami History and Significance

কার সিঁথিতে সিঁদুর থাকবে তার নিশ্চয়তা না থাকায় তাদের স্ত্রীরা এই দিনই সিঁদুর খেলায় মেতে উঠতেন। হিন্দুদের সব অনুষ্ঠানই  প্রকৃতির সমন্বয় এ পালিত হয়। তাই গঙ্গা মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমাকে পুনরায় গঙ্গা তেই বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন মানে হল বিশেষরূপে সৃজন অর্থাৎ অন্তরের মধ্যে আদির সূচনা।

পুরান মতে মহিষাসুর বধ সংক্রান্ত কাহিনীতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে দিনরাত্রি যুদ্ধ করার পরে দশমীর দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন দেবী। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তে দেবী আবির্ভূত হন এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর বধ করেন বিজয়া দশমী সেই বিজয় কেই চিহ্নিত করে।

নবরাত্রির ইতিহাস ও তাৎপর্য

মহালয়ার ইতিহাস ও তাৎপর্য

দুর্গা পুজার ইতিহাস ও তাৎপর্য

দশেরার ইতিহাস ও তাৎপর্য

বিজয়া দশমীর তাৎপর্য 2024:

তবে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই দিনে যে দশেরা উদযাপিত হয় তার তাৎপর্য অন্যরকম। শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত দশহর (Dussehra) থেকে, দশানন রাবণের মৃত্যুকে সূচিত করে। তবে বাল্মিকী রামায়ণের কথিত আছে যে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীর তিথিতেই রাবণ বধ করেছিলেন রাম।

2024 বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি

কালিদাসের রঘুবংশ তুলসীদাস রামচরিত মানস (Ramcharit Manas) কিংবা এই সূত্রের সঙ্গে সংযোগ রেখেই বলা হয়েছে রাবণ বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা, লক্ষণ ও রামচন্দ্রের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে যথাক্রমে দশেরাদীপাবলি (Dussehra and Diwali) পালন করা হয়ে থাকে।

আবার মহাভারতে বলা হয়েছে ১২ বছর অজ্ঞাতবাসের শেষে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীতে পাণ্ডবরা শমী বৃক্ষ এ লুকিয়ে রাখা তাদের অস্ত্র পুনরায় উদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ মুক্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ঘোষণা করেন এই উল্লেখও বিজয়া দশমীর তাৎপর্য বৃদ্ধি করে।

নবমী এসেছে, এবার দশমীর পালা মায়ের বিদায়ের পালা। ঘরের মেয়েকে এদিন যেন ছাড়তেই চায় না কারর মন। তবুও ফিরে যেতে হয় দেবী দুর্গা অর্থাৎ আমাদের উমাকে।

বিজয়ের আনন্দে অসুর রাবন দহনের উদযাপনে বিজয়ের দিন দেবীকে মিষ্টিমুখে কৈলাসে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

শুভ বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ডাউনলোড

বিজয়া দশমীতে যে কাজগুলি করলে দূর হবে সমস্ত বাধা-বিপত্তি, হবে অর্থ লাভ

বিজয়া দশমীতে এই নিয়মগুলি মানলে মায়ের কৃপা সর্বদাই থাকবে আপনার উপর

দূর্গা পূজার শেষ দিন হিসেবে বিজয়াদশমীর পূর্ব ভারতে শোকবিহ্বল হলেও শাস্ত্রের বিষয়টিকে সেই ভাবে দেখা হচ্ছেনা, প্রসঙ্গত রামকৃষ্ণদেবের একটি কাহিনী স্মরণীয়, রানী রাসমনির জামাতা অর্থাৎ জামাই মথুরবাবু একদা আবির্ভূত হয়ে বিজয়ের দিনে দেবীকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসে ছিলেন তখন ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাকে বোঝান যে বিজয়ের অর্থই মা এবং সন্তানের বিচ্ছেদ নয়।

মা কখনোই সন্তানকে ছেড়ে থাকতে পারেন না। রামকৃষ্ণদেব আরো বলেন যে, এতদিন বাইরে দালানে বসে মা পুজা নিয়েছিলেন, আজ থেকে মা মনের মন্দিরে বসে পূজা নেবেন। এই ব্যাখ্যায় মথুরবাবুর মনের আঁধার দূর  হয়। দেবী সাকার রূপে মর্ত্যে  পূজা গ্রহণ করেছেন, তারপর নিরাকার রূপে ফিরে গিয়েছেন কৈলাসে।

অপরাজিতা পুজো 2024:

পুরান মতে অপরাজিতা আরাধনা দুর্গাপুজোর একটি অঙ্গ, কারণ উমা, দুর্গার অন্য নাম হল অপরাজিতা (Aparajita Puja)। তবে এই দেবীর মূর্তি অন্যরকম, অপরাজিতা চতুর্ভূজা, হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয় মুদ্রা থাকে।

ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা সম্বলিত নীল বর্ণা বলে পুরাণে কথিত। দেবী দুর্গার বিসর্জনের পর পুজো মণ্ডপের ঈশান কোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতার লতা রেখে পুজো করা হয়।

বিজয়া দশমী তে বেশ কিছু উন্নতি সাধন নিয়ম:

১) দশমী পূজার অঞ্জলি দেওয়ার সময় সাদা বা নীল অপরাজিতা ফুল অর্পণ করা।

২) বিজয়া দশমীর দিন সকালে রাম মন্দিরে যাওয়া এবং সেখানে গিয়ে একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো।

৩) দশমীর সকালে এক কৌটা সিঁদুর নিয়ে মায়ের মন্দিরে যাওয়া এবং সেই সিঁদুর থেকে কিছুটা মায়ের চরণে অর্পণ করা বাকিটা বাড়ি নিয়ে চলে আসা। সেই সিঁদুর সারাবছর পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে ব্যবহার করেন বিপদ দূর করার শক্তি হিসেবে।

৪) সকালে দশমী পূজা হয়ে যাওয়ার পর মায়ের কাছ থেকে একটি পদ্মফুল নিয়ে এসে হলুদ কাপড়ে মুড়ে বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বে ঝুলিয়ে রাখা।

তাছাড়া আরও অনেক রকম রীতিনীতি মানা হয় বিজয়া দশমীর দিন অথবা বিজয়াদশমীর (Vijaya Dashami) পরে।

বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকেই মন ভাল থাকে না সকলের। বাচ্চা থেকে বড় সকলেই চোখের জলে বিদায় জানান দেবী দুর্গাকে। এই দিন দেবীকে প্যান্ডেল, মন্দির এবং বনেদি বাড়ির দালান থেকে বাইরে আনা হয়, বরণ করার জন্য।

তার সাথে সাথে মায়ের মিষ্টিমুখ এবং সমস্ত বিবাহিত ও সধবা মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন, মায়ের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে কোন বড় জলাশয় অথবা নদীতে বিসর্জনের জন্য শোভাযাত্রা বের হয়।

তখন মন্দির, প্যান্ডেল অথবা বনেদি বাড়ির দালানে যেখানে মায়ের মূর্তি স্থাপিত করা হয়েছিল সেখানে বড় ঘিয়ের প্রদীপ জালানো হয়। দেখলে সম্পূর্ণ ফাঁকা মনে হয় চারিদিক।

তবে মন খারাপের অনেকটাই কেটে যায় তার কিছুদিন পর মা লক্ষ্মীর আগমন ঘটে প্রত্যেক গৃহস্থলী তে। কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে মা লক্ষ্মীর পূজা, আরাধনা হয় প্রত্যেক বাঙালির ঘরে ঘরে। এই আশায় বুক বেঁধে বাঙালিরা আবার এগিয়ে চলে সামনের জীবন-যাপনে, কারণ আসছে বছর আবার হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top