2023 Ganga Saptami History & Significance, 2023 গঙ্গা সপ্তমীর ইতিহাস এবং জানুন গঙ্গা সপ্তমী কেন পালন করা হয়? গঙ্গা সপ্তমীর তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গঙ্গা সপ্তমীর গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
Ganga Saptami 2023 (গঙ্গা সপ্তমী 2023): পবিত্র নদীগুলির মধ্যে মা গঙ্গা, আমাদের মধ্যে কতখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে বৈশাখ মাসে শুক্ল পক্ষের সপ্তমী তিথিতে সকলের হৃদয়ে বসবাসকারী মা গঙ্গা স্বর্গ থেকে ভগবান শিব এর জটাতে পৌঁছেছিলেন তাই এই দিনকে গঙ্গোত্রী অথবা গঙ্গা সপ্তমীর রূপে পালন করা হয়।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ এর মধ্যে এই গঙ্গা সপ্তমী বিশেষ একটি পার্বণ অথবা উৎসব। এই উৎসবে দান, ধ্যান পূন্য কাজ করলে সংসারের সুখ, সমৃদ্ধি, সম্মান এবং সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলে মনে করা হয়। গঙ্গার আরাধনা করলে মোক্ষ লাভ করা যায় এবং দান করলে বহু জন্মের পুণ্য পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। আমরা সবাই জানি যে, পূজা পার্বণে, পবিত্র যে কোন কাজে গঙ্গার জল ব্যবহার করা হয়।
তাই মা গঙ্গাকে মানবতার মুক্তির এবং জীবন ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত করার জন্য বিবেচনা করা হয়। সপ্তমীর দিনে দান করা হয় সেই কারণে এই গঙ্গা সপ্তমী মানুষের জীবনে অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অশুভ গ্রহের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই গঙ্গা সপ্তমী পালনের মধ্যে দিয়ে।
গঙ্গার সপ্তমীতে দান করার গুরুত্ব:
প্রাচীন শাস্ত্র অনুসারে আমরা জানি যে, গঙ্গা সপ্তমীতে দান করা খুবই পূ ণ্যের কাজ আর এটা গঙ্গা সপ্তমীতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সপ্তমীর দিন গঙ্গায় স্নান করে ডুব দিয়ে ভক্তের সমস্ত পাপ দূর হয় বলে ধারণা করা হয়।
গঙ্গায় গিয়ে স্নান করা সম্ভব না হলে, অনেকে স্নানের আগে স্নানের জলে সামান্য গঙ্গার জল মিশিয়ে গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন। এছাড়া বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে মা গঙ্গার পবিত্র জল সমস্ত জায়গায় ছিটিয়ে দিলে পাপের অশুভ ছায়া দূর হয়ে যায়।
গঙ্গা সপ্তমীর ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনী:
গঙ্গা নদী ভগবান শিবের জটা থেকে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন:
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে রাজা ভাগীরথীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মা গঙ্গা ভগবান শিবের জটা দিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন। রাজা ভাগীরথীর পূর্বপুরুষরা পরিত্রাণ অর্জন করতে পারেননি এবং একমাত্র উপায় ছিল গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা।
তবে যাই হোক না কেন, পৃথিবী গঙ্গার জলের প্রভাব সহ্য করতে পারেনি এবং সেই কারণে ভগবান শিব তার মাথায় এই জলের প্রভাব ধারন করে ধীরে ধীরে জল ছেড়েছিলেন, আর এই ভাবেই কিন্তু জন্ম হয়েছিল মা গঙ্গার।
গঙ্গা সপ্তমীর দিন গঙ্গা স্নান করে শ্রীফল অর্পণ করতে হবে মা গঙ্গাকে। এটি সম্পদ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে সংসারে এবং যেকোনো ব্যক্তি কখনোই দারিদ্রতার মুখ দেখতে পাবেন না। ফলে সংসারে উন্নতি হবে আর সমস্ত বাধা বিপদ কেটে যাবে।
মা গঙ্গা বহুকাল পর্যন্ত শিবের জটায় ভ্রমণ করেছেন। শাস্ত্র অনুসারে উল্লেখ করা যায় যে, স্বর্গীয় নদী গঙ্গা পৃথিবী, আকাশ এবং রসাতল যেটা আমরা মৃত্যু লোক, দেবলোক, আর পাতাল লোক এই তিনটি মৌলিক স্রোত ভাগীরথী মন্দাকিনী এবং ভগবতীর আকারে একত্রিত হয়ে রয়েছে।
মা গঙ্গা যেভাবে শিবের জটায় পৌঁছে ছিলেন:
পদ্মপুরাণ অনুসারে গঙ্গোত্তি সম্পর্কিত একটি গল্প অনুসারে প্রাচীনকালে ব্রহ্মা বিশ্ব জগতের আদি প্রকৃতিকে বলেছিলেন যে, তিনি যেন সকল জগতের প্রবর্তক হন। আর ব্রহ্মা তার থেকেই জগত সৃষ্টির সূচনা করবেন। ব্রহ্মার বলার পরেই মূল প্রকৃতি গায়ত্রী, লক্ষ্মী, সরস্বতী, শক্তি বীজ, উমা দেবী, ধর্মদ্রোবা, তপস্বিনী, এর সাত স্বরূপ নিয়ে প্রকট হন। রাজা বলির যজ্ঞের সময় বামন অবতার নিয়েছিলেন।
বিষ্ণু যখন ভগবান বিষ্ণুর একটি কদম অথবা পা আকাশ ও ব্রহ্মাণ্ড ভেদ করে ব্রহ্মার সামনে এসে দাঁড়ায় সেই সময় তার কমন্ডলের জল দিয়ে ব্রহ্মা তার চরম ধুয়ে দেন। চরম অথবা পা ধোয়ার সময় শ্রীবিষ্ণুর চরণের জল হেমকূট পর্বতে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে ভগবান শিবের কাছে পৌঁছে যায় আর এই জল গঙ্গা রূপে শিবের জটায় মিশে যায়।
গঙ্গা সপ্তমীর দিন পবিত্র উৎসব উপলক্ষে কোন অসুস্থ ব্যক্তি যদি গঙ্গা স্নান করে পূজা-অর্চনা করে থাকেন তাহলে তার শরীরে যদি কোন রোগ থাকে, তা নিরাময় হয়ে যায় এবং মা গঙ্গা তাকে সুস্থ করে দেন বলে এমনটাই বিশ্বাস করেন সমস্ত মানুষ।
গঙ্গা সপ্তমীর দিন ভগবান শিবের পূজা:
যেহেতু ভগবান শিবির জটায় মা গঙ্গা অবস্থান করেন সেই কারণে গঙ্গা সপ্তমীর দিন গঙ্গাজল রুপোর অথবা ইস্পাতের কলসিতে নিতে হবে এবং সেই কলসি তে পাঁচটি বেলপাতা দিয়ে রাখতে হবে। এবং “ওম নমঃ শিবায়” মন্ত্র জপ করার সময় এই জল দিয়ে শিবকে অভিষেক করতে হবে। বিশ্বাস অনুসারে এই ব্যবস্থা গুলি গ্রহণ করলে আপনি অনেক সৌভাগ্যবান অথবা সৌভাগ্যবতী হবেন।
এছাড়া এই গঙ্গা সপ্তমী উপলক্ষে গরিব-দুঃখীদের ভোজন করানো, তাদের কোন কিছু দান করা, খুবই পূন্যের কাজ বলে মনে করা হয়, এবং অনেকেই এই গঙ্গা সপ্তমীর দিন সেটা করেও থাকেন। এছাড়া এই উপলক্ষে অনেক জায়গায় খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় আর মেলা, অনুষ্ঠান হয় বলে জানা গিয়েছে।
আপনি মনে করলে ঘরেতেই নিজেই এই গঙ্গা সপ্তমীর দিন গঙ্গা পূজা এবং শিবের পূজা করতে পারবেন। প্রতিটা পূজাতে নৈবেদ্য ছাড়াও সব থেকে বেশি জরুরী যেটা সেটা হল পরিষ্কার মন, ভক্তি, শ্রদ্ধা। যার ফলে আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাবেন ভক্তি ভরে পূজা করার মধ্য দিয়ে। আপনার সামর্থ্য যদি খুবই কম থাকে তবুও কিছু না কিছু দান করার চেষ্টা করুন গঙ্গা সপ্তমীর দিন, কেননা এটা আপনার জীবনে সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারে, তাই না !