নিজের খারাপ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার সঠিক উপায় | Best Ways to Get Rid of Bad Habits

আমাদের সবারই কিছু না কিছু খারাপ অভ্যাস রয়েছে, যা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু আমাদের চাওয়া কেবল চাওয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে, বাস্তবে আমরা তা করতে পারিনা। কারণ এরজন্য কোন জোরদার পরিকল্পনা থাকেনা আমাদের।

পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কোন কষ্ট করতে চাইনা, অথবা কিছুদিন পরিকল্পনামাফিক কাজ করার পরই তা বাতিল হয়ে যায়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আজ আমরা কিছু জাদুকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যা খারাপ অভ্যাস দূর করতে আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।

চলুন প্রিয় পাঠক জেনে নেয়া যাক খারাপ অভ্যাস দূর করার অব্যর্থ উপায় সম্পর্কে।

খারাপ অভ্যাস দূর করার অব্যর্থ উপায়ঃ

১. বদলাতে পারাই পরিণত হওয়ার লক্ষণ

আমরা সবাই নিজেদের পরিণত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু তারজন্য নিজেদেরকে বদলাতে নারাজ আমরা। পরিণত মানুষ আপনি তখনই হতে পারবেন যখন নিজের অভ্যাস, সুবিধা-অসুবিধা, আরাম ত্যাগ করে জীবনের প্রয়োজনে বদলে যেতে পারবেন।

যেমন আপনি জানেন যে, ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠলে কাজের সময় বেশী পাওয়া যায়, শরীরের জন্যও এটা অনেক উপকারী। কিন্তু আপনি কিছুতেই নিজের আরাম ত্যাগ করতে পারছেন না।

কিন্তু যখন আপনার ক্লাস বা অফিস থাকে তখন আপনাকে বাধ্য হয়ে ভোরে উঠতে হয়, যা আপনার কাছে রীতিমত অত্যাচার মনে হয়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে নিজের অভ্যাস ত্যাগের পরিকল্পনা করতে হবে।

যে নিজের অভ্যাস বদলাতে কানেনা, নিজের লক্ষ্য অর্জনে সে সমর্থ হয়না। এই ধারণাটাই প্রাথমিকভাবে নিজের মনে গেথে নিন।

২. নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনুন

আমরা জীবনের নানা কাজে অন্যদের দোষারোপ করে থাকি, অনেকেই আমাদের কথা দিয়ে কথা রাখে না, আমরা কষ্ট পাই এমন কাজ করে থাকে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন কেউ কেন আমাদের কষ্ট দেওয়ার সুযোগ পায়? কারণ আমাদের নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই।

আমরা যা করব বলে ভাবি, তা করতে আমরা ব্যর্থ হই। এজন্যই আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ অন্যদের হাতে চলে যায়। এজন্য আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।

আপনার কোন অভ্যাস খারাপ আপনি যখন তা জানবেন, তা হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তা থেকে ফেরানোর ব্যবস্থাও আপনাকেই করতে হবে।

৩. আত্নসমালোচনা করুন

নিজের সমালোচনা নিজে করতে পারাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ, যে নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে সেই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে।

আর যে নিজের ভুলগুলোকে সঠিক ভাবে সে কখনো নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেনা। আপনি কথায় কথায় রেগে যান, মদ্যপান করেন, এগুলো যে আপনার ভাল দিক নয়,,সেটা আগে আপনাকে বুঝতে হবে।

নিজের সমালোচনা নিজেকেই করতে হবে। তারপর আপনার ভিতর সেই জিদ তৈরি হবে নিজেকে পরিবর্তন করার।

৪. অন্যদের মতামত জানুন

যারা আপনার কাছের মানুষ এবং যারা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী এরা সবাই ই কখনো না কখনো আপনার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরবে। তখন রিয়্যাক্ট না করে এগুলোর তালিকা করুন।

মানুষ চাইলেই নিজেকে পুরোটা বদলাতে পারেনা। কিন্তু এটা অসম্ভবও নয়। অসম্ভব তখনই হয়ে ওঠে যখন আমরা ভাবি যে, নিজেকে বদলানো আসলে সম্ভব নয়। অন্যদের মতামত জেনে নিয়ে তা থেকে সত্যিকার ভুলগুলো খুঁজে বের করুন।

কারণ অন্য কেউ সমালোচনা করলেই যে, সবই আপনার ভুল এমন নাও হতে পারে। নিন্দুকেরা অনেক সময় শুধু আপনাকে অপদস্থ করতে আপনার দোষ-ত্রুটি বলে থাকে।

৫. নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন

প্রতিটি কাজে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন। আমরা নিজেদেরকে বদলানোর চেয়ে অন্যদেরকে বদলানোর জন্য বেশী সময় ব্যয় করি। আমরা চাই আমাদের জন্য অন্যরা বদলে যাক, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ আমরা নিতে চাইনা।

নিজেদের বদলানোর সাহস আমরা করিনা, কারণ আমরা ভেবে নেই এটা সম্ভব নয়। কিন্তু নিজেকে চ্যালেঞ্জ করলেই কাজটি সম্ভব। আপনার খারাপ অভ্যাসের লিস্ট করুন, এরপর একটি একটি করে বদলানোর জন্য নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন। যে আপনি পারবেনই।

যদি না পারেন তাহলে আপনি জীবনে সাফল্যলাভ করতেও পারবেন না। কারণ অন্যদের বা পরিস্থিতি বদলানোর আগে নিজেকে বদলানোটাই সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। মনে করুন দিনে আপনি ১০ টি সিগারেট খান।

প্রথমেই এর পরিমাণ ৫ এ নিয়ে আসুন। এরপর ৩ এ। এরপর ১ এ। আপনি চাইলে যে সবই পারেন এই আত্নবিশ্বাস থেকেই প্রতিটা কাজে চ্যালেঞ্জ নিন। সফল আপনি অবশ্যই হবেন।

৬. কারো অদৃশ্য সাহায্য নিন

এমন কাউকে অনুসরণ করুন, যে নিজেকে বদলাতে সক্ষম হয়েছে, যে আপনারই মত করে চেয়েছিল জীবন বদলাতে এবং সে তা পেরেছে এবং এখনো সেটাই করে চলেছে।

অনেক সময় একা সবকিছু করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন ভালবাসার বা ভাললাগার মানুষের সাহায্য দরকার হয়। আবার এমনও হতে পারে, সে আপনার কেউই নয়, কিন্তু আপনার তাকে তার স্বভাবের জন্য ভাললাগে।

অদৃশ্যভাবে অনুসরণ করুন তাকে। আপনার কাজ হচ্ছে তার ভাল দিক অনুসরণ করা, তার সাথে আলাপ থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই।

উপসংহার

খারাপ অভ্যাস আমাদের সকলেরই রয়েছে৷ কিন্তু কোন অভ্যাসগুলো আগে পরিবর্তন করা উচিত তা একমাত্র আমরাই ভাল জানি। কারণ আমাদের কাজের ক্ষেত্র, আকাঙ্খা অনুযায়ী আমাদের অভ্যাস আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।

আর সেই খারাপ অভ্যাদগুলো দূর করতে উপরিউক্ত যেকোন উপায় আপনি অনুসরণ করতে পারেন। আশা করি আজকের পোস্টটি খারাপ অভ্যাস পরিবর্তনে অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top