2023 আঙ্গুর চাষের সঠিক পদ্ধতিঃ দারুণ ফলন | 2023 Grape Cultivation Method in Bangla

আঙ্গুর এক ধরনের মিষ্টি জাতীয় ফল। এটি খুব সুস্বাদু একটি ফল। এর গাছ লতানো হয়ে থাকে। এক সাথে থোকায় থোকায় গাছে আঙ্গুর ধরে । আঙ্গুর সাদা , কালো, লাল ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে।

পাকা আঙ্গুর টসটসে , রসে ভরপুর হয়ে থাকে। এটি দিয়ে জেলী তৈরি করা হয়, আঙ্গুরের রস দিয়ে মদ ও বানানো হয়ে থাকে। এটি শুকালে কিসমিস তৈরি হয়। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে।

 

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে আঙ্গুর চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই আঙ্গুর চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

 

চলুন দেখে নেই আঙ্গুর চাষের বিস্তারিতঃ

 

জমি নির্বাচনঃ

দোআঁশ যুক্ত মাটি, লাল মাটি, জৈব সার যুক্ত মাটি, বা পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভালো হয়ে থাকে। আঙ্গুর চাষে জমি উচু হতে হবে । জমিতে যেন জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থাকতে হবে ।

 

রোপনের সময়ঃ

সাধারনত আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে।

 

জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ

আঙ্গুর চাষে জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। তারপর মাটিতে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের আকার হবে ৭০×৭০×৭০ সেমি। গর্ত তৈরি করে তাতে সার প্রয়োগ করতে হবে।

গোবর সার ৪০ কেজি, পটাশ সার ৪০০ গ্রাম, ফসফেট ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম গর্তের মাটির সাখে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং তারপর ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।

সার গুলো মাটির সাথে যেন ভালো ভাবে মিশে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে। চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন সোজা থাকে।

 

সার প্রয়োগঃ

ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপন করার এক মাস পর যদি গাছের বৃদ্ধি না হয় তাহলে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

১-৩ বছর বয়সী গাছে প্রতি বছর ১০ কেজি গোবর , পটাশ সার ৪০০ গ্রাম, ফসফেট ৫০০ গ্রাম , ইউরিয়া ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার ব্যবহার করলে আঙ্গুর মিষ্টি হয়ে থাকে এবং পোকা মাকড় এর আক্রমন কম হয়ে থাকে।

গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমান বাড়বে।

 

পরিচর্যাঃ

চারা রোপন করার পরের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গাছের ডাল ছাটাই করে দিতে হবে। ছাটাই করে দিলে ফলন ভালো হয়ে থাকে। এবং ফুল ঝরে পড়া রোধ হয়। তবে ডাল ছাটাই করার এক সপ্তাহ আগে এবং পরে গাছের গোড়ায় হালকা জল সেচ দিতে হবে।

চারা রোপন করার পর মাচায় উঠা পর্যন্ত প্রধান কান্ড ছাড়া বাকি সব শাখা প্রশাখা ছেটে দিতে হবে। মাচায় উঠার পর প্রধান কান্ডের অগ্রভাগ কেটে দিতে হবে। এভাবে কয়েক বারে প্রায় ১৬ টি শাখা ডাল বের হবে।
Grape Cultivation Method in Bangla

সেই সব শাখা থেকে আবার প্রশাখা বের হবে এবং সেখানে প্রথমে ফুল আসবে এবং পরে ফল হবে। প্রথম বছর ফল আসার পরে গাছ গুলোকে আবার ছাটাই করে দিতে হবে।

আঙ্গুর গাছের পরিচর্যার একটি অন্যতম বিষয় হলো এই ডাল ছাটাই। ঠিক মতো ডাল ছাটাই না করতে পারলে ফলন ভালো হয় না। কারন প্রতিবার ফুল আসার পরে ডালটি পুরনো হয়ে যায় আর সেখানে নতুন করে কোন ফুল ও ফল আসে না।

 

সেচঃ

জমিতে পর্যাপ্ত জল সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে যেন অতিরিক্ত জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন জল বের হয়ে যায়।

 

রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ

গাছে রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।

 

ফল সংগ্রহঃ

আঙ্গুর ফল পরিপক্ক হলেই গাছ থেকে পাড়তে হয়। ফল পাকার আগে পাড়া যাবে না তাহলে ফল আর পাকে না । অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাসে যদি গাছ ছাটাই করা হয় তাহলে মার্চ মাস বা এপ্রিল মাসে ফল আসে।

বৃষ্টির কারনে বা আকাশ মেঘলা থাকার কারণে যদি ফল সংগ্রহ করতে দেরি হয় তাহলে ফলের গুনগত মান কমে যায়। ফল টক হয়ে যেতে পারে।

ফল যদি ঠিক মত বড় না হয় আর মিষ্টি না হয় তাহলে তাতে ৫০ মিলি ইথারেল ও ১০০ গ্রাম জিবরেলিক এসিড একত্রে নিয়ে এক লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

আঙ্গুর গাছে এক বছরে দুই বার ফল আসে। ফল পাকার সময় হলে যদি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে পলিথিন দিয়ে মাচার উপর ঢেকে দিতে হবে। ফলের গায়ে যাতে জল না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জল পড়লে পাকা আঙ্গুর ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফল সংগ্রহ করার পর তা ছয় ঘন্টা ৪.৪ ডিগ্রি সে তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে।

 

ফলনঃ

উপযুক্ত যত্ন নিতে পারলে জাত ভেদে প্রতি একরে ৪০০-৪৫০ টি চারা লাগানো যায়। এবং প্রতি গাছে গড়ে প্রায় ৪ কেজি করে আঙ্গুর পাওয়া যেতে পারে এক বছরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top