জিংক সমৃদ্ধ ৮টি খাবার সকলের জন্য – Top 8 Zinc-Rich Foods For Everyone

মানবদেহ গঠন ও পরিচালনার জন্য এমন খাদ্য প্রয়োজন যাতে সুষম খাদ্যের ৬ টি উপাদানই বিদ্যমান। কিন্তু আমরা সবসময় খাদ্য নির্বাচনে এই বিষয়টি মাথায় রাখিনা।

মুখরোচক বা ওজন বেশী বা কম বাড়বে কোন খাবারগুলোতে এগুলোকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি,আর বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের ঘাটতিতে ভুগে থাকি।

দেখা যায় যে, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক থাকা সত্ত্বেও পুষ্টির অভাব এবং শারীরিক দূর্বলতা দেখা যায়। শরীর গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদানের অন্যতম হচ্ছে জিংক।

Top 8 Zinc-Rich Foods For Everyone
Top 8 Zinc-Rich Foods For Everyone in Bangla

এটা শরীরের জন্য খুবই দরকারী একটি খনিজ। এটা শরীরে ৩০০ টিরও বেশী এনজাইম পরিচালনায় সাহায্য করে। জিংক আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ করে, ক্লান্তি, হতাশা দূর করে, শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, বড়দের উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য জিংক খুবই দরকারী একটি মিনারেল যা কোষ গঠন করে এবং সেই সময়ে মা এবং বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সুপ্রিয় পাঠক, জিংক কি, কি উপকার করে তা জানা হল, এবার আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি, কোন কোন খাবারে জিংক পাওয়া যায় এ বিষয়টি নিয়ে। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে জিংক সমৃদ্ধ ৮ টি খাবার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

 

১. সামুদ্রিক খাদ্য

সমুদ্র থেকে মাছসহ যেসব খাবার আহরণ করা হয় সেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ জিংক থাকে। এজন্য সামুদ্রিক মাছ অথবা প্রাণীদের জিংকের সমুদ্র বলেন অনেকেই।

চিংড়ি, কাকড়া, ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণ জিংক রয়েছে। এছাড়াও সামুদ্রিক যেকোন মাছ, বা খাওয়া যায় এমন প্রাণীর মাংসে উচ্চমাত্রায় ঝিনুক থাকে। প্রতিদিন পুরুষদের ১১ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৮ মিলিগ্রাম জিংক গ্রহণ করা উচিত।

সামুদ্রিক বিভিন্ন খাবার খাদ্যতালিকায় রেখে সহজেই জিংকের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

 

২. মাংস

মাংস জিংকের সবচেয়ে ভাল উৎস।  তবে মহিষ, ছাগল, এবং অন্যান্য প্রাণীর লাল মাংসে সবচেয়ে বেশী বেশী জিংক পাওয়া যায়।

মুরগীর মাংসে খুব অল্প মাত্রায় জিংক পাওয়া যায়। মাংস প্রতিদিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশী মাংস খাওয়া উচিত নয়।

তবে মাংস রান্না করতে হবে উচ্চতাপে, এবং খুব বেশী তেল-মশলা ছাড়া রান্না করতে হবে। তাহলেই এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হবে।

 

৩. মাশরুম

মাশরুম জিংক জাতীয় খাবারের খুব ভাল উৎস।  আপনি যদি কম খেয়ে বেশী জিংক পেতে চান তবে মাশরুম খান।

মাশরুম সরাসরি রান্না না করে বিভিন্ন খাবারের সাথে খেতে পারেন, যেমন মাশরুম ব্রেড, মাশরুমের ওমলেট, মাশরুমের পকোড়া ইত্যাদি।  প্রতি ২০০ গ্রাম মাশরুমে ১.২ মিলিগ্রাম জিংক থাকে।

 

৪. মসুর ডাল

ডাল জাতীয় খাবার জিংকের খুবই সমৃদ্ধ উৎস।  যারা প্রতিদিন কম খরচের ভিতর জিংকের ঘাটতি পূরণ করতে চান তারা খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল রাখতে পারেন।

প্রতি ১০০ গ্রাম ডালে ২ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল রাখতে পারেন।

 

৫. বাদামজাতীয় খাদ্য

যেকোন ধরনের বাদামই খুব মুখরোচক এবং পুষ্টিকর খাবার৷ চীনাবাদাম তো খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।

এছাড়া কাজু বাদাম এবং কাঠ বাদামে বেশী জিংক থাকে। প্রতিদিনের নাস্তায় কাজু বাদাম বা অন্যান্য বাদাম রাখুন। এতে ভিটামিন ই সহ প্রয়োজনীয় জিংকের ঘাটতি পূরণ হবে।

 

৬. বীজজাতীয় খাবার

বীজজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ জিংক থাকে। মটরের বীজ, কুমড়োর বীজ এগুলোতে প্রচুর জিংক রয়েছে।

তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বীজজাতীয় খাবার রাখতে। প্রতি ২৮ গ্রাম কুমড়োর বীজে ২.২ মিলিগ্রাম জিংক থাকে।

৭. ডার্ক চকোলেট

ডার্ক চকোলেট খুবই মুখরোচক এবং সকলের কাছেই প্রিয়। প্রতিদিনই আমরা এটা খেয়ে থাকি বলতে গেলে।

ডার্ক চকলেটে রয়েছে ফ্ল্যাভনল যা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

১০০ গ্রাম ডার্ক চকোলেটে ৩.৩ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। তবে অতিরিক্ত ডার্ক চকোলেট খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খান।

 

৮. দই

দই অত্যন্ত উপকারী একটি দুগ্ধজাতীয় খাবার। এতে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। যা খাবারে রুচি আনে, হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

কিন্তু দই একইসাথে জিংকের খুব ভাল উৎস।  প্রতি ২০০ গ্রাম দইয়ে রয়েছে ২.৩৮ মিলিগ্রাম জিংক। তাই প্রতিদিনের খাবারের পর দই খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

এতে হজমের পাশাপাশি প্রতিদিনের জিংকের চাহিদার ২৫ % পূরণ হবে সহজেই।

 

অন্তিম কথা

সব ধরনের খাদ্য উপাদানই দেহের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমরা সব উপাদান সম্পর্কে জানিনা বলে অনেক খাদ্যই খাইনা। যার ফলে শরীরে পুষ্টির অভাবে নানা ধরনের রোগ বাসা বাধে।

তাই কোন খাবারে কি খাদ্য উপাদান আছে তা জেনে সেই খাদ্যগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে৷ জিংক আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, এছাড়া চুল পড়া কমায়, উর্বরতা বাড়ায়, হতাশা কমায়।

এরকম আরও অনেক উপকার রয়েছে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে জিংকজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। রোগমুক্ত থাকুন।

আশা করি পোস্টটি থেকে কোন কোন খাবার খেলে জিংকের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন সে ব্যাপারে অবগত হয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।

আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top