রোগ হলে তা দূর করার চেয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা উত্তম। কারণ রোগ হওয়ার পর আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
আর রোগ সারাতে যে ঔষধ সেবন করা হয়, তা অনেক সময় আমাদের দূর্বল করে দেয়। আর সবসময়ের জন্যই প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।
তাই রোগ হলে চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়ার আশা করার চেয়ে রোগ যেন না হতে পারে সেরকম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উত্তম।
সুপ্রিয় পাঠক আজ আমাদের আয়োজন সাজানো হয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে। আশা করি পোস্টটি এই মহামারীর সময়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু কার্যকর উপায়:-
১. প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকুন
যারা গ্রামে থাকেন, বা প্রকৃতির সংস্পর্শে বেশী থাকেন তারা তুলনামূলকভাবে কম রোগে আক্রান্ত হন। এদের ইমিউন সিস্টেম ঘরে আবদ্ধ জায়গায় বাস করা মানুষের চেয়ে ভাল হয়।
অল্পেই জ্বর-কাশি, সর্দি, রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা গ্রামবাসী বা প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে দেখা যায়না।
কারণ প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে টাটকা বাতাসে শ্বাস নিতে পারবেন, বিভিন্ন দূষণ থেকে মুক্তি পাবেন, ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশ করায় তা দেহের রক্ত সঞ্চালন ও মানসিক প্রেসার কমাতে সাহায্য করবে।
২. জ্বর আসামাত্র ঔষধ নয়
জ্বর কোন অসুখ নয়। এটা অসুখের লক্ষণ। বিশদভাবে বলতে গেলে আমাদের দেহে যখন কোন রোগের জীবাণু বাসা বাধে তখন দেহের শ্বেতকণিকা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, আর দেহের প্রতিরক্ষা সিস্টেম দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়, যাকে আমরা জ্বর বলি।
এটা এজন্য করা হয় যাতে অতি তাপে জীবাণু মারা পড়ে এবং আর বংশ বিস্তার না করতে পারে। এজন্য জ্বর আসামাত্র ঔষধ সেবন করবেন না, যদিনা এর সাথে আরও কোন লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে।
৩. এন্টিবায়োটিকের ডোজ শেষ করুন
যখন রোগ জটিল আকার ধারণ করে বা কোন ক্ষত সারার সময় জীবাণু বা অন্য ক্ষতির আশঙ্কা দূর করতে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
অনেকেই এন্টিবায়োটিকের ডোজ শেষ করেন না, একটু সুস্থ হলেই ডোজ বন্ধ করে দেন। এতে শরীরে জীবাণু ধ্বংসের পরিবর্তে জীবাণুর বংশবিস্তার আরও বেড়ে যায়।
এজন্য শরীর সুস্থ লাগলেও যে মেয়াদে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় সেই মেয়াদ অনুযায়ী সেবন করুন। এতে ওই রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পরবর্তীতে সহজে উক্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকবে না।
৪. সূর্যের আলো সেবন
সূর্যের আলোয় রয়েছে ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাতের জন্য উপকারী। ভিটামিন ডি এর অভাব হলে হাড় ক্ষয় ও শরীরে দূর্বলতা দেখা দেয়।
এজন্য সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ১৫-২০ মিনিট করে রোদে তেল মেখে শুয়ে থাকুন অথবা বসে থাকুন।
এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে ও ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করবে।
৫. খালি পায়ে মাটিতে হাটুন
খালি পায়ে মাটিতে হাটার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যারা খালি পায়ে মাটিতে হাটেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী। কারণ মাটিতে হাটলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা রক্তশুন্যতা কমায়।
রক্তের জমাট বাধা রোধ করে রক্তের ঘনত্ব কমায়, এতে করে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়। পায়ে ব্যথা হলেও মাটিতে হাটলে তা পায়ের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
মাটিতে খালি পায়ে হাটলে তা মানসিক অস্থিরতা কমায়, মনে শান্তি আনে। যাদের ইনসোমোনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আছে তারা নিয়ম করে মাটিতে হাটতে পারেন, এতে করে ঘুমের সমস্যা দূর হবে। রাতে ভাল ঘুম হবে।
এছাড়াও মাথাব্যথা কমাতে এবং শক্তি বাড়াতে রোজ নিয়ম করে খালি পায়ে মাটিতে হাটতে পারেন।
৬. রুটিনমাফিক জীবন-যাপন
আপনি যদি রুটিনমাফিক জীবন-যাপন করেন তাহলে অনেক রোগের হাত থেকে এমনিতেই রক্ষা পাবেন।
কারণ বেশিরভাগ অসুখ দেখা দেয় পরিচ্ছন্নতার অভাব, অপর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রামের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভাস ও পর্যাপ্ত জল পানের অভাবে।
এজন্য খাদ্যতালিকায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। প্রচুর ফল, সবজী, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান, নিয়মিত স্নান করুন, কাজের পর হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান, এক্সারসাইজ করুন। অনিয়ম করবেন না। এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি তেমন কোন অসুখে সহজে আক্রান্ত হবেন না।
আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
৭. ঔষধি উপাদান সেবন করুন
যেসব খাদ্যে ঔষধিগুণ রয়েছে সেসব খাবার, সবজী, ফল, এগুলো বেশী বেশী খান। যেমন দুধে হলুদ মিশিয়ে খান, চায়ে আদা, তুলসী, লবঙ্গ মিশিয়ে খান৷
প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও সবজী খান। এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সহজে কোন রোগ হবেনা।
অসুখ হলে ঔষধ সেবন করে তা নির্মূল করার চেয়ে উত্তম হচ্ছে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। করোনা মহামারীতেও দেখা যাচ্ছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী তারা সহজে আক্রান্ত হচ্ছেনা, হলেও সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
এজন্য আমাদের এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যাতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সুপ্রিয় পাঠক আশা করি এই মহামারীকালীন সময়ে পোস্টটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনাদের উপকারে আসবে।
পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।