(Karnat Shakti Peeth in Bengali) কর্ণাট শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? কর্ণাট শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে দেব দেবীর সংখ্যা নিহত কম নয়। তবে বিশেষ বিশেষ তীর্থস্থান গুলি হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের জীবনকে অনেক খানি সমৃদ্ধ করে তুলেছে। সারা জীবন ধরে অপেক্ষা করে থাকেন কোন একটা সময়ে এই তীর্থস্থান ঘুরে এসে জীবনকে ধন্য করবেন, পুণ্য অর্জন করবেন।
আর স্বর্গ লাভের আশায় সেখানে মান করবেন। এছাড়া আরো অন্যান্য কাজের জন্য এবং মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য এই সমস্ত তীর্থস্থানে গিয়ে অনেকেই মানত করে আসেন, মনের ইচ্ছা পূরণ হলে আবার সেখানে গিয়ে পূজা দিয়ে আসেন।
এমন ভাবে চলে আসছে অনেক প্রাচীন কাল আগে থেকে। ৫১ টি শক্তি পীঠের মধ্যে এটি হল একটি অন্যতম শক্তি পীঠ। আর সেই জন্যই এই সমস্ত তীর্থস্থানে যদি ভক্তি ভরে পূজা দেওয়া যায়, মনের সকল আশা পূর্ণ হয়ে জীবন আরো বেশি সহজ হয়ে ওঠে।
কর্ণাট শক্তিপীঠ:
শক্তিপীঠের নাম | কর্ণাট শক্তিপীঠ |
স্থান | চামুন্ডেশ্বরী মন্দির, চামুন্ডেশ্বরী পাহাড়ের উপরে, মহীশূর, কর্ণাটক |
দেশ | ভারত |
দেবীর অংশ | উভয় কর্ণ ( দুটি কান) |
শক্তির নাম | জয়দুর্গা |
কর্ণাট শক্তিপীঠের ভৌগোলিক গুরুত্ব:
এমনি সব তীর্থস্থান এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো সতীর ৫১ টি সতীপীঠ অথবা শক্তিপীঠ। দেবীর খন্ডবিখণ্ড দেহ অংশগুলি যখন একান্ন টি স্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল সেই ৫১টি স্থানে গড়ে উঠেছে পবিত্র তীর্থস্থান সতী পীঠ, তার মধ্যেও একটি অন্যতম সতী পীঠ হল কর্ণাট সতীপীঠ।
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের চামুন্ডেশ্বরী পাহাড়ের উপরে এই শক্তিপীঠ অবস্থিত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় এই স্থানে দেবীর উভয় কর্ণ অথবা কান পতিত হয়েছিল।
এই কারণ অনুসারে এই রাজ্যের নাম কর্ণাটক হিসাবে জানা যায়। এই শক্তি পীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম জয়দুর্গা এবং পিঠরক্ষক ভৈরবের নাম অভিরূক।
কর্ণাট শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী:
প্রতিটি শক্তিপীঠ অথবা সতী পীঠের পেছনে রয়েছে এক একটি পৌরাণিক কাহিনী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অনেকখানি ইতিহাস। তেমনি এই কর্ণাট শক্তিপীঠের ক্ষেত্রেও রয়েছে পৌরাণিক কাহিনী।
কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সতী যখন বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের পছন্দমত স্বামী নির্বাচন করেছিলেন, সেই ক্ষেত্রে তিনি স্বামী হিসেবে মহাদেবকে মেনে নিয়েছিলেন।
আর এই বিবাহ তিনি সম্পন্ন করেছিলেন সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়, আর জানা যায় তিনি মহাদেবকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যাও করেছিলেন এবং তা বাবার অমতে। সেই কারণে সতির বাবা দক্ষরাজা খুবই ক্রুদ্ধ হন।
এরপর দক্ষ রাজা বাড়িতে দক্ষযজ্ঞের আয়োজন করে সেখানে আরও কন্যা ও জামাতের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তার পাশাপাশি সমস্ত দেব-দেবী দের নিমন্ত্রণ করা হলেও শুধুমাত্র নিমন্ত্রিত ছিলেন না মহাদেব ও পার্বতী অর্থাৎ সতী।
এই খবর নারদ মুনি কৈলাসে গিয়ে জানিয়ে আসার পর পার্বতী বাপের বাড়িতে আসার কথা বলেন, কিন্তু মহাদেব জানান যে, বিনা নিমন্ত্রণে তার বাপের বাড়ি যাওয়াটা উচিত হবে না।
কিন্তু কেন তারা নিমন্ত্রিত নন সেটা জানার জন্য সতী দেবী মহাদেবের কথা না শুনে নন্দী কে সাথে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে হাজির হন। সেখানে এসে বাবাকে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা এই দক্ষ যজ্ঞের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত নয় কেন।
এমন পরিস্থিতিতে দক্ষ রাজা বিভিন্ন ভাবে তাদেরকে অপমান করতে শুরু করেন। তার সাথে সাথে মহাদেব কেও ভীষণভাবে অপমান করতে থাকেন। স্বামীর সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে দেবী সতী দক্ষ যজ্ঞের সেই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিজের প্রাণ ত্যাগ দিয়েছিলেন। এই খবর কৈলাসে মহাদেবের কাছে পৌঁছাতেই তিনি পাগল হয়ে যান।
তারপর সেই যজ্ঞ স্থলে পৌঁছে প্রথমে দক্ষ রাজাকে বধ করেন, তারপর সতীর সেই মৃতদেহ দেখে তিনি আরো উন্মাদ পাগল হয়ে যান। এরপর দেবীর মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন, শিবের সেই তাণ্ডব নৃত্য তে পৃথিবীতে শুরু হয় মহাপ্রলয়।
এমন মহাপ্রলয়ে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়, পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য আর মহাদেবকে শান্ত করার জন্য আর কোনো রকম রাস্তা না পেয়ে শ্রী বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহকে খন্ড বিখন্ড করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
তারপর তিনি দেবীর সেই দেহকে ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত করে ছড়িয়ে দিলেন। খণ্ড বিখন্ড সতীর দেহাংশ গুলি পৃথিবীর বুকে যে যে জায়গায় পতিত হয়েছিল, মাটিতে পড়া মাত্রই সেই দেহ অংশগুলি প্রস্তর খন্ডে পরিণত হয়।
পরবর্তীতে সেই সব জায়গায় তৈরি হয়েছে এক একটি সতী পীঠ অথবা শক্তিপীঠ। যা কিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে অনেকখানি পবিত্র তীর্থভূমি। যেখানে শিব ও পার্বতী অধিষ্ঠিত রয়েছেন, বলা হয় এই মন্দিরগুলি খুবই জাগ্রত, এখানে ভক্তি ভরে কোন কিছু চাইলে দেবী কাউকে খালি হাতে ফেরান না।
সারা বছর ধরে এখানে ভক্তদের আনাগোনা চলে তো বটেই, তাছাড়া বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে যেমন ধরুন দূর্গা পূজা, কালী পূজা, শিবরাত্রি আর অন্যান্য অমাবস্যাতে এখানে খুবই আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে দেবীর পূজার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় মানুষজন দের দ্বারা দেবী প্রতিনিয়ত পূজিতা হন, এছাড়াও আশেপাশে থেকে ভক্তদের সমাগম লেগেই রয়েছে।
মন্দিরের চারিদিকের পরিবেশ এবং দেবীর দর্শন করতে পর্যটকদের ভিড় ও চোখে পড়ার মতো। ফল, ফুল, নৈবেদ্য এবং আরও অন্যান্য সাধ্যমত ভোগ দিয়ে দেবীর পূজা অর্চনা করা হয় প্রতিদিন। কর্ণাট শক্তিপীঠ আরো অন্যান্য শক্তি পীঠের মধ্যে একটি অন্যতম শক্তিপীঠ।
সারা বছর ধরে পূজা অর্চনার পাশাপাশি এখানে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে মন্দির ও মন্দির চত্বর বিশেষভাবে সেজে ওঠে। তার সাথে সাথে এখানে উৎসবের আয়োজন করা হয় খুবই ধুমধাম ভাবে। যেখানে স্থানীয় মানুষজন খুবই ভালোভাবে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন এবং মায়ের পূজা দিয়ে নিজেদের মনস্কামনা পূরণ করেন।