সৌন্দর্যচর্চায় গোলাপজলের ৬টি ব্যবহার – 6 Benefits and Uses of Rose Water

গোলাপজল আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। ফুলের রাণী গোলাপের পাপড়ি থেকে তৈরি করা হয় গোলাপজল। এটা রান্নাসহ রুপচর্চার কাজে সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

গোলাপের পাপড়ি যেমন নরম, কোমল ও সুগন্ধযুক্ত তেমনি গোলাপজলের সঠিক ব্যবহারে ত্বক, চুল ও অন্যান্য অঙ্গও হয়ে উঠবে, নরম, কোমল ও সুন্দর। গোলাপজল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

6 Benefits and Uses of Rose Water in Bangla
6 Benefits and Uses of Rose Water in Bangla

বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের গোলাপজল রয়েছে, এরমধ্যে আপনার পছন্দমত গোলাপজল বেছে নিতে পারেন। তবে যদি বাজারের গোলাপজলের প্রতি বিশ্বাস না থাকে,তবে নিজে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন গোলাপজল, এবং তা বাজারের কেনা গোলাপজলের চেয়ে কম নয় বরং বেশী কার্যকর হবে।

গোলাপজল বানাতে প্রয়োজন হবে কয়েকটি গোলাপের পরিষ্কার পাপড়ি, ও পরিমাণমত জল। জলের ভিতর পাপড়িগুলো দিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। জলের রঙ পরিবর্তন হয়ে পাপড়ি হালকা হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে পাত্রটি নামিয়ে নিন।

এরপর পাপড়ি ছেকে জল আলাদা করে বোতল বা স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। বেশীদিন ব্যবহার করতে চাইলে পাত্রটি ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করুন। গোলাপজল তৈরি করার কাজ তো শেষ হল।

এবার চলুন সৌন্দর্যচর্চায় এর কার্যকর ৬ টি ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

 

১. ওপেন পোরস স্বাভাবিক করে

যাদের ত্বক তৈলাক্ত এবং ব্রণের সমস্যা আছে, তারা সবাই ওপেন পোরসের সমস্যায় ভুগে থাকেন। ওপেন পোরস চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে, বয়স বেশী দেখায়, লোমকূপ খোলা থাকায় ত্বকে ধুলা-ময়লা ও তেল জমে ব্রণ,র‍্যাশ ও ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা দেখা দেয়।

তাই ওপেন পোরস সময় থাকতেই মিনিমাইজ করা উচিত। একবার পোরস ওপেন হয়ে গেলে তা একেবারে স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়না, তবে অনেকটাই স্বাভাবিক করা সম্ভব। আর এই কাজটি করতে পারেন গোলাপজলের মাধ্যমে।

ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর মুখ মুছে নিন। তারপর গোলাপজল তুলার সাহায্যে সারা মুখে লাগিয়ে নিন অথবা স্প্রে করুন। একটু শুকিয়ে গেলে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন।

এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন। ত্বক হয়ে উঠবে আরো তারুণ্যদীপ্ত।

২. ব্রণ ও ডেডসেলস দূর করতে

ব্রণের সমস্যা থাকলে ত্বকে ঠিকভাবে স্ক্রাবিং করা সম্ভব হয়না। ফলে ত্বকে ময়লা ও ডেডসেলস জমে ব্রণের প্রকোপ, তৈলাক্তভাব আরো বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্যার কার্যকর সমাধান দেবে গোলাপজল।

গোলাপজল দিয়ে বানানো প্যাক স্ক্রাবিং ছাড়াই ত্বকের ডেড সেলস অর্থ্যাৎ মৃতকোষ এবং অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করবে। এরজন্য একটি পাত্রে অর্ধেক পাতিলেবুর রস ও তিন টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগায়ে রাখুন।

এরপর ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ব্রণের আকার কমে আসবে, ডেডসেলস ঝরে যাবে। আরও ভালো ফল পেতে মুলতানি মাটি বা চন্দনগুড়ার সাথে গোলাপজল ও মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।

এরপর হালকা হাতে ঘষে তুলে ফেলুন। এরপর হালকা কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। এতে ব্ল্যাকহেডস ও ব্রণ দূর হবে। ডেডসেলস ঝরে গিয়ে ত্বক উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় হয়ে উঠবে।

 

৩. কন্ডিশনার হিসেবে

চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতার সমস্যায় আমরা প্রায় সবাই ই ভুগে থাকি। অনেকেরই বাজারে প্রচলিত কন্ডিশনার ব্যবহারে সমস্যা থাকে, চুল আরও রুক্ষ হয়ে যায়।

সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। এটা সব ধরনের চুলেই ভাল কাজ করবে। স্নানের পর একমগ জলে এককাপ চায়ের লিকার ও আধাকাপ গোলাপজল মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

এরপর চুলে আর জল দেবেন না। চুল শুকালে দেখবেন এটা কন্ডিশনারের মত চুল নরম ও উজ্জ্বল করে তুলবে।

 

৪. বয়সের ছাপ দূর করে

বর্তমান ভেজাল খাদ্য আর পরিবেশ দূষণ আর অনিয়মিত জীবন-যাপনের ফলে আমাদের ত্বকে অকাল বার্ধক্য চলে আসে। অল্প বয়সেই বলিরেখা, চোখের কোনে কালি, ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দেয়।

পার্লারের দামী ট্রিটমেন্ট এবং লেজার ট্রিটমেন্টও এসবের স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনা। এজন্য বয়সের ছাপ দূর ক্রতে ঘরোয়া এবং কার্যকর উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন গোলাপজল।

ফেসওয়াশ বা সাবান দিয়ে মুখ ধোওয়ার সময় মুখ ধোয়ার জলে মিশিয়ে নিতে পারেন গোলাপজল। মুখ ধোওয়ার পর টোনার হিসেবে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন।

এতে করে পোরস মিনিমাইজ হবে, চেহারা তারুণ্যদীপ্ত থাকবে। গোলাপজলে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না, ত্বকের তারুণ্য, উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ধরে রাখে।

ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ও লোশনের সাথেও গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ভাল ফল পাবেন।

 

৫. ঠোটের যত্নে

সুন্দর নজরকাড়া ঠোট পেতে সবাই চায়। কিন্তু অতিরিক্ত লিপস্টিক ব্যবহার এবং অযত্নের কারণে ঠোটের চামড়া ওঠে, ঠোট কালচে ও শুষ্ক হয়ে যায়।

এই সমস্যা দূর করতে ঠোটে গোলাপজল ও পেট্রোলিয়াল জেলি মিশিয়ে লাগাতে পারেন। তারপর ৩০ মিনিট রেখে নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে নিলে ঠোটের মৃতকোষ ও আলগা চামড়া উঠে যাবে, ঠোট সুন্দর হবে।

নিয়মিত যত্ন নিতে গোলাপজল ও মধু মিশিয়ে ঠোটে লাগাতে পারেন। এতে ঠোটের গোলাপিভাব বজায় থাকবে।

৬. ত্বকের দাগ দূর করতে

মানুষের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে চেহারায়, আর চেহারায় যখন দাগ পড়ে যায় তখন আত্নবিশ্বাসও যেন সৌন্দর্যের মতই কমে যায়। অনেকেই চেহারার দাগের জন্য হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন।

অথচ আপনার হাতের কাছেই রয়েছে কার্যকর সমাধান।ব্যবহার করতে পারেন লেবু ও গোলাপজলের প্যাক। গোলাপজলে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা যেকোনো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি ও সাইট্রিক এসিড যা দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। অর্ধেক লেবুর রসে তিন টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন। তারপর মুখের দাগের স্থানে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট।

এরপর কুসুম গরমজলে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের দাগ হালকা হয়ে যাবে। ত্বক হবে উজ্জ্বল ও নজরকাড়া সুন্দর।

 

অন্তিম কথা

সৌন্দর্যচর্চা আমাদের সময় নষ্ট করে বা এসব করা ঠিক নয় এমন ধারণা আজও অনেকেই পোষন করেন। কিন্তু সৌন্দর্যচর্চা আমাদের ত্বক ও স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখে যা বিভিন্ন কারণে আমরা প্রতিনিয়ত হারিয়ে ফেলি।

আর সৌন্দর্যচর্চায় ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফল এনে দেয় সাথে প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার ভয়ও থাকেনা। যারা খরচের কথা ভেবে সৌন্দর্যচর্চায় আগ্রহী হননা তাদের জন্য কোন খরচ ছাড়াই ঘরোয়া রুপচর্চা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

শুধু সঠিক নিয়ম জানলেই যে কেউ তার ত্বক, চুল ও অন্যান্য অঙ্গের সৌন্দর্য ধরে রাখতে গোলাপজলের ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি আজকের পোস্টটি সৌন্দর্যচর্চায় আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top