ধুন্দল একটি অতি সাধারন সবজি। এটি বহুল পরিচিত একটি সবজি। এর শাস নরম ও সুস্বাদু। আর এক ধরনের বন্য ধুন্দল আছে যাকে তিত পল্লা বলা হয়। এর ফল শুকিয়ে খোসা তৈরি করা হয়ে থাকে যা দিয়ে গায়ে সাবান মাখা হয়।
আজ আমরা আপনাদের সাথে ধুন্দল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই ধুন্দল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
জমিঃ
ধুন্দল চাষে জমি উচু হতে হবে। জমিতে জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে। জমি প্রচুর আলো বাতাস যুক্ত হতে হবে এবং জমিতে কোন ছায়া থাকা যাবে না।
ধুন্দল চাষের জন্য সাধারনত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম। ধুন্দল চাষের মাটি উর্বর হতে হবে।
বীজের পরিমানঃ
সাধারনত প্রতি বিঘায় ৩৩০-৪০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রতি শতকে বীজ প্রয়োজন হয় ১০-১২ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে বীজ প্রয়োজন হয় ১.৫-২ কেজি।
বপনের সময়ঃ
ফেব্রুয়ারি মাস বীজ বপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়ে থাকে। বীজ বপনের জন্য ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস উপযুক্ত সময়।
জমি প্রস্তুতকরণঃ
ধুন্দল চাষে জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে। জমি ৩-৪ বার চাষ দিয়ে ও মই দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
জমি ভালো ভাবে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর মাদা তৈরি করতে হবে।
মাদা হবে ১ ফুট গভীর, ২.৫ ফুট লম্বা, ২ ফুট চওড়া। এক মাদা থেকে অন্য মাদার দূরত্ব হবে ৮-১০ ফুট।
জমি থেকে মাদা কিছুটা উচু করে দিতে হবে। মাদা কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি উচু করতে হবে।
চারা তৈরিঃ
জমিতে চারা বপন করার আগে চারা তৈরি করে নিতে হবে। চারা তৈরির জন্য ভালো মানের বীজ বাছাই করতে হবে। বীজ বপন করার আগে ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
সাধারনত পলি ব্যাগে, কলার খোলে, বা বেড তৈরি করে চারা তৈরি করে নিত হবে। তাছাড়া মাদায় ও বীজ পুতে চারা তৈরি করা যায়। তবে পলিব্যাগে তৈরি করা চারা উন্নত মানের হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে চারা তৈরি নিরাপদ। পলিব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে মাটি তৈরি দিয়ে ব্যাগ ভরতে হবে। এক্ষেত্রে অর্ধেক গোবর সার ও অর্ধেক মাটি দিয়ে পলিব্যাগ ভরাট করতে হবে।
পলিব্যাগে মাটি ভরাট করার পর কিছুদিন রেখে দিতে হবে তারপর উপরে ছাউনি দিতে হবে যেন রোদ বা বৃষ্টি না পড়ে। তবে মাঝে মাঝে পলিব্যাগের মধ্যে জল সেচ দিতে হবে ঝাঝরি দিয়ে।
পলিব্যাগের মাটিতে জো আনতে হবে। তারপর প্রতিটি ব্যাগ থেকে ২-৩ টি চারা নিয়ে রোপন করতে হবে। চারায় দুইটি করে পাতা গজালে প্রতিটি পলিব্যাগে একটি করে চারা রেখে বাকি সব চারা তুলে ফেলতে হবে।
এছাড়া সরাসরি মাদায় বীজ বুনে ও চারা লাগিয়ে ও ধুন্দলের চাষ করা যেতে পারে।
চারা রোপনঃ
ধুন্দল চাষের জন্য বেড তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝে সারি করে মাদা তৈরি করে দিতে হবে।মাদার দূরত্ব হবে ২ মিটার দূরে দূরে এবং ৫০ সেমি মাপে গর্ত তৈরি করতে হবে।
মাদা তৈরি করে সেখানে সরাসরি বীজ বুনে দিতে হবে। প্রতিটি মাদায় দুইটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজ একটু গভীর করে বুনতে হবে। চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন নষ্ট না হয়।
পলিব্যাগ থেকে চারা বের করার সময় জল সেচ দিয়ে নিতে হবে তাহলে শিকড় নষ্ট হবে না। চারা সাধারনত বিকেল বেলা রোপন করতে হবে। তাহলে চারার মৃত্যুহার কম হয়।
চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে। তারপর জল সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। ধুন্দলের ফলন বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার দিতে হবে। প্রতি মাদায় গোবর সার, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে।
গোবর সার ৫-৬ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমপি সার ৬০-৭০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
তবে ১৫-২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে ৫০ গ্রাম করে।
সেচ ও জল নিষ্কাশনঃ
উন্নত ফলন পেতে জমিতে জল সেচ দিতে হবে ঠিকমত। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
জমিতে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছ বাড়ার সাথে সাথে গাছের গোড়ায় বাশের কাঠি পুতে দিতে হবে । তাহলে গাছ সহজে মাচায় উঠতে পারবে। মাচার উচ্চতা ৩-৪ ফুট হতে হবে।
পোকা মাকড় ও রোগ বালাইঃ
জমিতে পোকা মাকড় ও রোগ আক্রমণ করলে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপন করার ৪০-৪৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যেতে পারে। সাধারনত শরৎকাল পর্যন্ত ফসল তোলা যাবে।
ফলের বোটা থেকে কেটে সংগ্রহ করতে হবে। ধুন্দল সাধারনত কচি অবস্থাতেই সংগ্রহ করা উচিত। ফলের রং সবুজ থাকতে সংগ্রহ করতে হবে। খোসা শক্ত হয়ে গেলে আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে প্রতি শতকে ১২০-১৪০ কেজি ধুন্দল পাওয়া যায়।