2023 তরমুজ চাষের সহজ পদ্ধতি | 2023 Watermelon Cultivation Method in Bangla

তরমুজ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন ফল। প্রচন্ড গরমে তরমুজ দেহ ও মনে আনে প্রশান্তি। এটি পুষ্টিগুণে  ও ভরপুর। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবন রয়েছে। এর প্রায় ৯৬ শতাংম জল তাই এটি দেহে লবণ ও জলের ঘাটতি পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।


আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।


এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে তরমুজ  চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই তরমুজ চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।


চলুন দেখে নেই তরমুজ চাষের বিস্তারিতঃ 

জলবায়ু ও মাটিঃ 

তরমুজ চাষ করার জন্য প্রচুর পরিমানে সূর্যের আলো প্রয়োজন এবং আবহাওয়া শুষ্ক হওয়া প্রয়োজন। এই ফল ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না। ফল পাকার সময় হলে যদি সূর্যের আলোর অভাব হয় তখন ফলের স্বাদ ও ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। তরমুজ চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ ও বেলে দো আশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।


চাষের সময়ঃ 

তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে মাঘ থেকে ফাল্গুন মাস। তবে যদি হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করা হয় তবে সারা ফাল্গুন মাস ধরেই বীজ বপন করা যায়। তরমুজ চাষ করার আড়াই মাসের মধ্যেই এর ফলন শুরু হয়ে থাকে। 


যদি আগাম ফসল হিসেবে চাষ করতে হয় তবে পৌষ মাস ও মাঘ মাসের দিকে বীজ বুনতে হবে। তখন শীত থাকে তাই শীতের আক্রমন থেকে কচি চারা বাচাতে চারার উপর পলি দিয়ে দিতে হবে।


জমি তৈরিঃ 

তরমুজ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় চাষ দিয়ে ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে।  জমি তৈরি করার পর মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হবে তারপর চারা লাগাতে হবে।


রোপন পদ্ধতিঃ 

তরমুজের বীজ সাধারনত সরাসরি মাদায় বপন করতে হয় তবে সরাসরি বীজ বপন না করে চারা তৈরি করে মাদাতে রোপন করলে ভালো হয়।


বীজ বপনঃ 

প্রতি মাদায় সাধারনত চার থেকে পাচ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ৮-১০ দিন আগে থেকে মাদা তৈরি করে নিতে হবে এবং এর মাটিতে প্রয়োজনীয় সার মিশিয়ে নিতে হবে। দুই মিটার দূরত্ব অনুযায়ী সারি করে প্রতি সারিতে দুই মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করতে হবে।


প্রতিটি মাদা ৫০ সেমি প্রশস্ত এবং ৩০ সেমি করে গভীর হতে হবে। মাদায় চারা গজানোর পর প্রতি মাদার মধ্যে দুইটি করে চারা রাখতে হবে এবং বাকি চারা গুলো তুলে ফেলতে হবে।


চারা রোপণঃ 

তরমুজ চাষে তরমুজের বীজ বপন করার চেয়ে চারা রোপণ করা সবচেয়ে ভালো। তা হলে বীজের অপচয় খুব একটা হয় না।


চারা তৈরি করার জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করতে হবে এবং প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। ৩০-৩৫ দিন বয়সী ৫-৬ টি পাতা বিশিষ্ট একটি চারা মাদার মধ্যে রোপন করতে হবে।


বীজের পরিমানঃ 

সাধারনত প্রতি হেক্টরে ৮৫০ গ্রাম থেকে ১০০০ গ্রাম পর্যন্ত বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে।


সার প্রয়োগঃ 

তরমুজ চাষে সাধারনত চার কিস্তিতে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তি দিতে হবে চারা রোপণ করার ১০-১৫ দিন পরে। দ্বিতীয় কিস্তি দিতে হবে প্রথম ফুল ফোটার পরে। তৃতীয় কিস্তি দিতে হবে ফল ধারনের সময় এবং সব শেষ কিস্তি দিতে হবে ফল ধারনের ১৫-২০ দিন পর।


বীজের অঙ্কুরোদগমঃ 

শীতকালে খুব ঠান্ডা অবস্থায় বীজকে ১২ ঘন্টা  জলে ভিজিয়ে রেখে গোবরের মাদার ভেতরে বা মাটির পাত্রে রাখা বালির মধ্যে রেখে দিলে তাড়াতাড়ি বীজ অঙ্কুরোদগম হবে। বীজ অঙ্কুরিত হতে ২-৩ দিন সময় নিবে। বীজে অঙ্কুর দেখা দিলেই দ্রুত বীজ কে বীজ তলায় বা মাদার মধ্যে স্থানান্তরিত করতে হবে।


পরিচর্যাঃ 

জমিতে শুকনো মৌসুমে জল সেচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে। গাছে খেয়াল রাখতে হবে গাছ প্রতি যেন ৩-৪ টির বেশি ফল না থাকে। গাছের শাখার মাঝখানে গিটে যে ফল ধরে তা রাখতে হবে।


এক একটি শাখায় এক একটি ফল যথেষ্ট। প্রতি ৩০ পাতা অনুযায়ী মাত্র একটি  করে ফল রাখা উচিত। চারা গুলো বড় হলে বিভিন্ন শাখা প্রশাখা বের হয়। কিন্তু এসব শাখা রেখে দিলে ফলন হ্রাস পেতে পারে। তাই অতিরিক্ত শাখা ছাটাই করে দিতে হবে।


রোগ দমনঃ 

তরমুজে একটি পোকার আক্রমন দেখা যায় সেটা হলো কাটুই পোকা। এ পোকা রাতের বেলা চারা কেটে দেয়। এ পোকা দমন করতে হলে কেরোসিন মিশ্রিত জল সেচ দিতে হবে। বা পাখি বসার জন্য জমিতে ডাল পুতে দিতে হবে।


ফসল সংগ্রহঃ 

তরমুজের ফলন সাধারনত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে থাকে। জাত অনুযায়ী বীজ বপন করার পর থেকে  তিন থেকে চার মাস পর এর ফল সংগ্রহ করা যায়।


ফল পাকলে বোটা শুকিয়ে বাদামি রং ধারন করে। তরমুজের খোসার উপর সূক্ষ্ণ লোম মরে যায় ও খোসাটা চকচকে দেখা যায়। আর আঙুল দিয়ে টোকা দিলে ড্যাব ড্যাব শব্দ হয়ে থাকে। এই অবস্থায় তরমুজ সংগ্রহ করতে হবে।


ফলনঃ 

সঠিক ভাবে চাষাবাদ করলে একটি ভালো জাতের তরমুজ থেকে একর প্রতি ৪০-৪৫ টন ফলন পাওয়া যায়। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top