আপনি কি নিজের ফ্যাশন স্টাইলকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখতে চান? তাহলে দীর্ঘমেয়াদে ফ্যাশন কে টিকিয়ে রাখার দারুন উপায়গুলি এখনি জেনে নিন।
অনেকেই চান যে নিজেদের ফ্যাশনকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখার জন্য। যেকোনো ফ্যাশনেবল ড্রেস কে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে অনেকের মধ্যে।
ফ্যাশন এমন একটা জিনিস যা সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। ট্রেন্ডি জামা কাপড় পরার প্রবণতা সকলের মধ্যে কম বেশি থাকে। ফ্যাশনের দুনিয়া এক অদ্ভুত দুনিয়া, তার সাথে মজারও।
প্রতিনিয়ত কোম্পানি গুলো তাদের ব্র্যান্ড অনুযায়ী ফ্যাশনের দিকে খেয়াল রেখে প্রতিনিয়ত ফ্যাশন চেঞ্জ করে চলেছে। তার মধ্যে আমাদের চাই বাজেটের মধ্যে ট্রেন্ডি জামাকাপড়।
তবে এক্ষেত্রে আপনার দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাশন কে টিকিয়ে রাখার জন্য “সাস্টএনেবেল ফ্যাশন” অনেক উপকারে আসবে।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু সাসটেইনেবল ফ্যাশন এর টিপস সম্পর্কে –
১) সাসটেইনেবল ফ্যাশন কে আপন করে নিন :
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোন কিছুর ক্ষেত্রে লক্ষ্য স্থির করে রাখা। অহেতুক উল্টোপাল্টা খরচের দিকে মন না দিয়ে নিজের প্রয়োজনমতো সব কিছু কেনাকাটার এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছা কে গুরুত্ব দিয়ে নিজের বাজেটের নিজের আয়ত্তের মধ্যে কেনাকাটা করা সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ।
আমাদের খামখেয়ালীপনার জন্য মাঝে মাঝে এমন জিনিসপত্র কিনে ঘর ভর্তি করে ফেলি, যার ফলে আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে শুরু করে। এমন কিছু অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড় কিনে আমরা আমাদের ওয়ারড্রব গুলো ভর্তি করে ফেলি। আর এখনতো কেনাকাটার কথা বলাই যাবে না, সবকিছু একেবারে আঙুলের ডগায়, একটা ক্লিক করলেই জিনিসপত্র ঘরের দরজায়।
তাই কেনাকাটা তে লাগামছাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কিছু না ভেবে কেনাকাটা করাটা এখন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। “সাস্টেনেবেল ফ্যাশান” এর আসল লক্ষ্য হলো পোশাকের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পোশাক এর বাছাই করা।
একটা উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক, ধরুন আপনি এক বছর কোন নতুন জামা কাপড় না কিনে শুধুমাত্র আপনার যা আছে তা যদি ব্যবহার করেন তাহলে আপনি কার্বনের ব্যবহার, শক্তির অপচয়়, বর্জ্য র্পদার্থের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারেন। তার পাশাপাশি আপনার অনেকটা টাকা বেঁচে যাওয়ারও সুবিধা আছে।
২) জামাকাপড়ের সম্পর্কে ধারণা বদলাতে হবে :
ফ্যাশন মানে অনেকেই যত ছোট জামা কাপড় কেই বোঝেন। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারনা। জামা কাপড়ের বাছাই এবং আমাদের পছন্দের রং তার লুক আমাদের ব্যক্তিত্বের পরিচয় ঘটায়।
আমাদের সমাজ, সংস্কৃৃ সংস্কৃতির প্রতীফলন ঘটে আমাদের পরিহিত জামাকাপড়ে। এটি আমাদের সত্তার আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। আর সেই কারণে ফ্যাশন সম্পর্কে আমাদের ধারণাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া আমাদের পরিহিত জামাকাপড়ের বরজ্র পদার্থ পৃথিবীতে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ কতটা বাড়াবে তা হয়তো ধারণারও বাইরে।
“সাসটেইনেবল ফ্যাশন” এর অর্থ হল ফ্যাশনের সামাজিক এবং পরিবেশগত অবস্থান বোঝা। তার পাশাপাশি আমাদের কেনাকাটা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
৩) কেনাকাটা টা আপনার প্রয়োজন,নাকি ইচ্ছা :
চোখে ভালো লাগলো বলেই দুম করে কিনে ফেলা, এমন অভ্যেস অনেকের মধ্যে থাকেে। অথচ আলমারি ঘাঁটলে দেখা যাবে এমন অনেক পোশাক তোলা আছে যা হয়তো কোনদিনোও আপনি পরেননি।
সেইভাবে আপনার আলমারি কিংবা ওয়ারড্রব এ অপ্রোজনীয় জামা কাপড় দিয়ে ভর্তি করা। শুধুমাত্র পোশাকের জায়গাগুলো ভরিয়ে তুলছে সেই জামা কাপড় গুলো, যেগুলো আপনি কোনদিনও আলমারি থেকে বাইরে বের করেনি, পরে দেখা তো দূরের কথা।
এই অভ্যাসটা আমাদের বদলানো প্রয়োজন। “সাস্টেনেবেল ফ্যাশান” এর অন্যতম উদাহরণ হল কম জামাকাপড় আলমারিতে রেখে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা।
৪) সতর্ক হতে হবে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোকে নিয়ে :
এক্ষেত্রে কিন্তু টেকসই ব্র্যান্ড হল অনেক রূপে আসে। যেমন ধরুন নৈতিক উপাদান, ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকদের অধিকার, এবং নিরাপদ কাজের শর্ত। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে এর মধ্যে শিশুশমিক না রাখা এবং পশুর ব্যবহার না করা।
তার সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলা হয়। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে প্রতিবছর ৩.৮ বিলিয়নেরও বেশি গরুর ও অন্যান্য গবাদিপশুর চামড়া দিয়ে পোশাক তৈরি হয়।
সেগুলো দিয়ে জামা কাপড় তৈরীর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে গবাদিপশুর ব্যবহার করা হয় জামা কাপড় তৈরিতে।
৫) রিসাইকেলিং এবং প্রাকৃতিক :
যে কোন কলকারখানা থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের দূষণ ছাড়া ভালো কোনদিনও করেনি। একবার ভেবে দেখুন না, পোশাক তৈরিতে যে পরিমাণ বর্জ্য পদার্থের উৎপন্ন হয় তা পরিবেশে ক্ষতিসাধন করে চলেছেে। পোশাক তৈরিতে যে রং ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক যুক্ত্ত, তাও কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক।
তবে এই পরিবেশ দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য আমরা কি করতে পারি? এই বিষয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো “গ্লোবাল অর্গানিক টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ড্ড” (GOTS)। অনেক টেকসই পোশাকের ব্রান্ড এখন পোশাকের বজ্র অথবা ফেব্রিকের বজ্র পদার্থ রিসাইকেল করছে। তার সাথে সাথে ব্যবহার করছে প্রাকৃতিক রং।
৬) পোশাকের অতিরিক্ত কাপড় :
পোষাক তৈরীর পর অতিরিক্ত যে কাপড়গুলি বেশি হয় সেগুলো এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না ফেলে সেগুলো দিয়ে ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা যায়।
এমনকি অনেক ব্যবসায়ী আছেন এই বজ্র পদার্থ দিয়ে বড় ধরনের রিসাইকেলিং ব্যবসা শুরু করেছেন। তাতে লাভবানও হয়েছেন অনেকেই। অনেকে আবার এগুলো বিদেশে রপ্তানি করছেন যা দিয়ে আরো নিত্য নতুন জিনিস তৈরি করা যায়।
৭) বন্য পশুদের দিয়ে পোশাকের ডিজাইন :
জিন্সের প্যান্টে ছেঁড়া অথবা ফাটা ডিজাইন এখন ছেলেদের বেশ পছন্দের। এক্ষেত্রে কিন্তু মেশিন এবং হিটার ব্যবহার করা হয়়। তবে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে একটি ব্র্যান্ড তাতে ডেনিম পোশাক তৈরি করার জন্য বড় টায়ারের সাথে ডেনিম কাপড় অথবা জিন্স কাপড় জড়িয়ে চিড়িয়াখানায় বাঘ এবং সিংহের খাঁচার মধ্যে দিয়ে আসে।
তারপর তারা সে গুলোকে আঁচড়ে কামড়ে এবং দাঁত দিয়ে ছিলে যে ছেঁড়াফাটা তৈরি করে দেয় তারা, সেটা নিয়েই ফাটা এবং ছেঁড়া জিন্স প্যান্ট তৈরি করছে ওই কম্পানি। এতে জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে তেমনি ইলেকট্রিক মেশিন এর প্রয়োজন হয়নি এবং প্রাকৃতিক ভাবে ফ্যাশনেবল ড্রেস তৈরি করার এক অভিনব পন্থা।
সবদিক দিয়ে বিচার করলে আমরা চাইলে প্রকৃতিকে বিভিন্ন বজ্র পদার্থ থেকে অনায়াসেই বাঁচাতে পারি রিসাইকেলিং পদ্ধতির মাধ্যমে। তার ফলে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ জমা হয়ে পরিবেশ দূষণের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয় না।