আমরা সবাইই চাই আমাদের চেহারায় সারাজীবন তারুন্য ধরে রাখতে। কিন্তু অনেকেরই ধারনা এটা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ বয়সের সাথে চেহারায় ভাজ, বলিরেখা দেখা দেবেই। কিন্তু এটা সত্য নয়। আপনি যদি ত্বকের সঠিক পরিচর্যা করেন তাহলে বৃদ্ধ বয়সেও চেহারার তারুন্য ধরে রাখা সম্ভব।
অনেকেই আছেন বিয়ের পর, বাচ্চা হওয়ার পর, বা বয়সের ৩০ এর বেশী হয়ে যাওয়ার পর আর রুপচর্চায় আগ্রহী হন না। তারা ভাবেন তাদের বয়স হয়ে গেছে, তাই চেহারায় বুড়োটে ভাব চলে এসেছে। কিন্তু আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনার ত্বকের তারুণ্য আজীবনই ধরে রাখতে পারবেন।
তবে এটা মোটেও খুব সহজ নয়, তারজন্য প্রয়োজন সময় ও যত্ন নেওয়ার ইচ্ছা। আপনি হয়ত ভাবছেন এটা অনেক ব্যয়বহুল কিনা। না, আপনার ঘরে থাকা জিনিস দিয়েই এমন কিছু প্যাক বানানো সম্ভব যা চেহারার তারুন্য ধরে রাখবে। সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আলোচনায় থাকছে চেহারা সর্বদা তারুন্যদীপ্ত রাখার কিছু ঘরোয়া প্যাক সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন প্যাকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
চেহারার তারুণ্য ধরে রাখার ঘরোয়া প্যাক
১. দুধের সর ও লেবু
প্রাচীনকাল থেকেই ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে এবং ত্বকে টানটান ভাব আনতে দুধের সরের ব্যবহার হয়ে আসছে। লেবুতে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচ উপাদান এবং ত্বক উজ্জ্বল করার বিশেষ ক্ষমতা। আপনি চেহারার তারুণ্য সর্বদা ধরে রাখতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন দুধের সর ও লেবুর ফেসপ্যাক। একটি বাটিতে এক চা চামচ দুধের সর ও দুই চা চামচ লেবুর রস নিয়ে দুইটি উপাদান মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন।
এরপর ত্বকে লাগান, এরপর অপেক্ষা করুন ১৫-২০ মিনিট। তারপর একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিন। তারপর কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন দিনে দিনে ত্বক হয়ে উঠবে ফর্সা ও উজ্জ্বল। ত্বকে কোন ভাজ বা বলিরেখা থাকবে না। ত্বক থাকবে তারুন্যদীপ্ত। সবচেয়ে ভাল ফল পেতে সপ্তাহে তিনদিন স্নানের আগে প্যাকটি ব্যবহার করুন। চেহারা থাকবে সর্বদা তারুন্যদীপ্ত ও উজ্জ্বল।
২. শসার রস
শসাতে রয়েছে বয়সের ছাপ দূর করার গুন। আপনি শসা ও মধু একসাথে মিক্স করে মাখতে পারেন মুখের ত্বকে অথবা শুধু শসার রস মাখতে পারেন। শসার ৯৫ ভাগই হচ্ছে পানি, তাই এটা ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আপনার যদি শসার রস সরাসরি ব্যবহারে সমস্যা থাকে তাহলে শসার রস বরফের কিউব করে রাখতে পারেন।
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিউবটি মুখে ২-৩ মিনিট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করবেন। বিশেষ করে যেসব স্থানে বেশী ভাজ পড়ে, যেমন চোখের কোনায়, ঠোটের দুপাশে। প্রতিদিন এটা ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বকের বয়স্কভাব অচিরেই গায়েব হয়ে যাবে। চেহারা সবসময়ই তারুন্যদীপ্ত দেখাবে।
৩. নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল
চেহারায় বয়স্কভাব দূর করতে নারকেল তেলের কোন জুড়ি নেই। যখনই মনে হবে চেহারায় অয়েলের পরিমান কমে গেছে, শুষ্কভাব দেখা দিয়েছে তখনই অল্প করে নারলেল তেল ও অলিভ অয়েল একসাথে মিক্স করে হালকা কুসুম গরম করে দুই হাতের তালুতে নিয়ে ত্বকের সহনীয় তাপে মুখে ম্যাসাজ করুন।
যেসব স্থানে বলিরেখা বেশী, সেসব স্থানে বেশী করে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন চেহারার তারুন্য ফিরে আসবে। বলিরেখা গায়েব হয়ে যাবে। অলিভ অয়েল ব্যবহারের কারনে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃন। খুবই ভাল ফলাফলের জন্য এই মিশ্রনটি সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করতে পারেন। স্নানের আগে ব্যবহার করলেই ভাল হবে।
৪. পাকা কলা ও মধুর ফেসপ্যাক
পাকা কলায় রয়েছে ত্বকের বলিরেখা দূর করার ক্ষমতা, এছাড়া কলা ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। মধুতে রয়েছে ত্বক মসৃন ও দাগ দূর করার শক্তি। তাই পাকা কলা ও মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। একটি বাটিতে তিন চামচ মধু ও একটি পাকা কলার অর্ধেক নিয়ে ভালভাবে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এরপর মুখে লাগিয়ে যেসব স্থানে বলিরেখা এবং ভাজ পড়ে যাচ্ছে সেসব স্থানে ভালভাবে ম্যাসাজ করুন।
এরপর প্যাকটি লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর উষ্ণ গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পছন্দের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করুন। চেহারা থাকবে তারুন্যদীপ্ত।
৫. চাল ধোয়া জলের আইসকিউব
চাল ধোয়া জলে প্রচুর ভিটামিন থাকে, এছাড়াও এ জলের রয়েছে ত্বক মসৃন, সুন্দর এবং ভাজমুক্ত করার ক্ষমতা। চাল ধোয়া জলের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে আইস কিউব জমিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
এক্ষেত্রে ত্বকের যেসব স্থানে বলিরেখা বেশী সেসব স্থানে বেশী করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আইসকিউব লাগাবেন। তাহলে ত্বকের বলিরেখা কমে যাবে। রক্ত চলাচলের মাত্রা বেড়ে যাবে। বলিরেখা থাকলেও দূর হয়ে যাবে। প্রতিদিন রাতেই আইসকিউব রাব করতে পারেন। এভাবে প্রতিদিন করলে আপনার চেহারার বুড়োটে ভাব দূর হয়ে যাবে।
উপসংহার
চেহারার তারুণ্য ধরে রাখতে দামী কোন প্রোডাক্ট দরকার নেই। আপনি চাইলে বাড়িতেই ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন।
আপনি যদি নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেন তাহলে বলিরেখা ও ভাজ পড়া, শুষ্কতার সমস্যা সবকিছুই দূর করা সম্ভব।কিন্তু আপনাকে সময় দিতে হবে, অলসতা না করে আপনাকে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। উপরিউক্ত প্যাক ও উপাদানগুলি দ্বারা আপনার চেহারার তারুণ্য সর্বদা ধরে রাখতে পারবেন।
আশা করি পোস্টটি আপনার চেহারার তারুণ্য সর্বদা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে কোন মতামত ও প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।