Kojagori Puja 2023: কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় যে কাজ গুলিতে প্রসন্ন হবেন দেবী লক্ষ্মী

বিজয়া দশমীর পরেই খুব তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নিতে হয় কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার জন্য। এই দিন দেবী লক্ষ্মী কে সন্তুষ্ট করার জন্য কত কিছুই না করতে হয়। তাঁকে নিজের ঘরে সারা জীবনের জন্য বেঁধে রাখার জন্য কোন নিয়মের কমতি রাখা হয় না।

ভক্তি, শ্রদ্ধা সবকিছু দিয়েই দেবীকে প্রসন্ন করার অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু এমন অনেক বিষয় রয়েছে যে সেগুলি সম্পর্কে হয়তো আপনি অবগত নন, যা দেবী লক্ষ্মী কে প্রসন্ন করতে পারে।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় যে কাজ গুলিতে প্রসন্ন হবেন দেবী লক্ষ্মী
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় যে কাজ গুলিতে প্রসন্ন হবেন দেবী লক্ষ্মী

কোজাগরি লক্ষ্মী পূজাতে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ, নৈবেদ্য, ভোগ অর্পণ করার পাশাপাশি এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলি আপনি নিজেই করতে পারবেন এবং যেহেতু বাড়িতে আপনি পুরোহিত ছাড়াই পূজা করতে পারবেন তাই এগুলি খুব সহজেই আপনি সম্পন্ন করতে পারবেন আর এই কাজ গুলির জন্য আপনি দেবী লক্ষ্মী কে খুব সহজে এবং অল্পতেই সন্তুষ্ট করতে পারবেন।

পুজোর পর ঠাকুর ঘর বা মন্দিরের দক্ষিণ দিকে প্রসাদ অর্পণ করা হয়, এই লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে লক্ষ্মী পূজায় তুলসী পাতা একেবারেই নৈব নৈব চ অর্থাৎ অন্যান্য পূজায় তুলসী পাতার ব্যবহার হলেও লক্ষ্মী পূজায় তুলসীপাতার কোন স্থান নেই।

শুভ কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

তুলসীর সঙ্গে শাল গ্রাম শিলার বিবাহ হয়েছিল আর এছাড়া নারায়ণের পূজা করা হয় তুলসী পাতা দিয়ে এবং তুলসী গাছ কে নারায়নের আরেকটি স্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেব অনুসারে তুলসী কে দেবী লক্ষ্মীর সতীন বলা যেতে পারে, সেই কারণে তাঁর পূজাতে কোন ভাবেই তুলসী পাতার জায়গা নেই।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সঠিক পদ্ধতি:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজাতে এমন কিছু নিয়ম, যেগুলি দিয়ে আপনি সন্তুষ্ট করতে পারবেন দেবী লক্ষ্মীকে:

কোজাগরী পূর্ণিমা, পূর্ণিমার চাঁদ আকাশ জুড়ে জ্বলজ্বল করছে। শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে শহর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা। চারিদিকে ধানের ক্ষেত ভরে উঠেছে যা হাওয়া লেগে দুলতে শুরু করেছে, তার উপরে যদি চাঁদের আলো পড়ে সে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

এরই মাঝে প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে দেবী লক্ষ্মীর আগমন, পূর্ণিমার চাঁদ, শঙ্খ ধ্বনিকে সাক্ষী রেখে মা লক্ষ্মী সাদা প্যাঁচার পিঠে চড়ে আগমন করেন ধরাধামে আশ্বিনের শেষে ঠিক কোজাগরী তিথিতে। তবে এই পুজোর বেশ কিছু নিয়ম নিষ্ঠা রয়েছে। যা পালন করা প্রতিটি গৃহস্থ বাড়ির গৃহকর্তী অথবা স্ত্রীদের কর্তব্য।

চঞ্চলা লক্ষ্মীকে প্রসন্ন করুন লক্ষ্মী পূজায় এই ভোগ নিবেদন করে

১) লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা:

কথিত আছে এবং আপনি হয়তো শুনে থাকবেন যে মা লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা, তিনি এক জায়গায় বেশিক্ষণ স্থির হয়ে থাকতে পারেন না। তাঁকে স্থির করে রাখতে হলে অবশ্যই সব নিয়ম পালন করতে হয় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে।

তাহলেই তাঁর কৃপায় ভরে ওঠে সংসার এবং সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে সকলের জীবন, পূর্ণ হয় মনের সকল আশা, ধন-সম্পদে ভরে ওঠে সকলের সংসার।

২) বিভিন্ন তিথিতে লক্ষ্মী পূজা:

দেবী লক্ষ্মী শুধুমাত্র কোজাগরি লক্ষ্মী পূজাতেই বা কোজাগরী পূর্ণিমাতেই পূজিতা হন না, তিনি সারা বছর বিভিন্ন তিথিতে পূজিতা হয়ে আসছেন।

পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, এমনকি দীপাবলিতেও মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়ে থাকে অনেক বাড়িতে। এছাড়া প্রত্যেক বৃহস্পতিবার নিয়ম করে লক্ষ্মী পূজার আয়োজন করা হয় প্রায় সমস্ত গৃহস্থ বাড়িতে।

কোন কোন জায়গায় ঘট স্থাপন করে পূজা করা হয়, আবার কোন কোন জায়গায় মূর্তিতেও পূজা করা হয়ে থাকে তাছাড়া অনেক জায়গায় সরা অথবা পটের ঠাকুরে লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থ কষ্ট দূর করতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় এই কাজগুলি করুন

৩) দেবীর পছন্দের রং এর ফুল:

দেবী লক্ষ্মীর পছন্দের রং এর ফুল দিয়ে আরাধনা করতে হয়। সাদা ফুল নয়, লাল, হলুদ, গোলাপি, রঙের ফুল ব্যবহার করা হয় লক্ষ্মী পূজায়।

তবে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় শ্বেত পদ্ম ও শ্বেত চন্দন দিয়ে, তাই পূজার ক্ষেত্রে এই বিষয়ের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

৪) চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা:

ধান, চাল, চালের গুঁড়ো এইসবের মধ্যে দেবী লক্ষ্মীর সম্পর্ক কতখানি তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে লক্ষ্মী পূজাতে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা দেওয়ার এই প্রথা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

দুয়ারে দুয়ারে মা লক্ষ্মীর পায়ের আলপনা দেওয়া হয় যেন মা লক্ষ্মী ঐ পথে বাড়িতে প্রবেশ করছেন। আর এটা অবশ্য পালনীয় একটি রীতি। আলপনাতে আঁকা হয় মা লক্ষ্মীর পায়ের চিহ্ন। লক্ষ্মী দেবীর ১০৮ টি নাম জপ করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয় এবং লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়া অবশ্যই প্রয়োজন।

ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে ঘরের বাইরে ও বিভিন্ন জায়গায় যেখানে আলপনা দেওয়া সম্ভব সেখানেও সুন্দর সাদা রংয়ের আলপনা পরিবেশটাকে আরো বেশি সুন্দর করে তোলে আর লক্ষ্মী পূজার এই রীতি সকলের খুবই পছন্দেরও।

লক্ষ্মী পূজায় ঘন্টা বাজাতে নেই কেন? জানুন কারণটা

৫) যে রংয়ের আসন ব্যবহার করবেন:

পূজায় বসতে গেলে একটি পবিত্র আসনের প্রয়োজন হয়, সেটা তৈরি হতে পারে কোন কাপড় দিয়ে বা অন্য কোন উপকরণ দিয়ে।

আসনে সাদা বা কালো কাপড় কখনোই ব্যবহার করবেন না। পরিবর্তে ব্যবহার করুন লাল অথবা গোলাপি রঙের আসন।

৬) শব্দ কোলাহল একেবারেই নয়:

শ্রী লক্ষ্মী অধিক শব্দ পছন্দ করেন না, শান্ত প্রকৃতি, মধুর কন্ঠ এগুলি তিনি খুবই পছন্দ করেন, সে ক্ষেত্রে দেবীকে সন্তুষ্ট করতে তাই ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘন্টা এই ধরনের বাদ্যি বাজানো একেবারেই নিষিদ্ধ।

শুধুমাত্র শঙ্খ ধ্বনিতে তাঁকে আরাধনা করা হয়। মা লক্ষ্মীর ঘটের সামনে কড়ি রেখে পূজা করার নিয়ম রয়েছে।

কোজাগরী পূর্ণিমায় এভাবে রাত জাগলেই লক্ষ্মী লাভ করতে পারবেন

৭) পাশা খেলা:

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আরো একটি বিশেষ তাৎপর্য হলো সারারাত জেগে যদি আরাধনা করা হয় তাহলে খুবই শুভ ফল লাভ করা যায়।

এই পূজার অন্য একটি রীতি হল পূজা শেষ হওয়ার পর সারা রাত জেগে পাশা খেলার রীতি অর্থাৎ রাত জাগার কাজটাও সম্পন্ন করতে পারবেন দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং এটি পূজার একটি অংশ তাই পাশা খেলেও আপনার সময়টাও খুব সহজেই পার হয়ে যাবে, কষ্ট অনুভব হবে না।

৮) লক্ষ্মী পূজার চাল:

লক্ষ্মী পূজাতে আরো অন্যান্য নৈবেদ্য উপকরণের পাশাপাশি চাল হলো গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ। এই চাল পূজাতে যেমন প্রয়োজন পড়ে তেমনি সেই চাল যখন তুলে রাখা হয়, তা ধন-সম্পদ হিসেবেই কিন্তু তুলে রাখা হয়। মনে করা হয় যে দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ এই চালের মধ্যে রয়েছে।

তাই যদি কাউকে কোনদিন কোনো চাল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে এই তুলে রাখা চাল থেকে কখনোই দেবেন না, এটি অশুভ বলে মনে করা হয়। কেননা লক্ষ্মী পূজায় তুলে রাখা চাল থেকে অন্য কাউকে চাল দিতে নেই।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

৯) লক্ষ্মী পূজার প্রসাদ:

এবার আসা যাক প্রসাদ প্রসঙ্গে, জানা যায় যে পূজার পর ঠাকুর ঘর বা মন্দিরের দক্ষিণ দিকে প্রসাদ অর্পণ করতে হয়। ফল প্রসাদের পাশাপাশি চিড়ে এবং নারকেল লক্ষ্মীপূজায় আবশ্যিক প্রসাদের মধ্যে পড়ে, বাড়িতে তৈরি নারকেল দিয়ে নাড়ু, খই এবং গুড়ের নাড়ু দেওয়া হয় নৈবেদ্য হিসাবে।

⭐ তো এই ছিল কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আয়োজনে বিশেষ কিছু কাজ এবং নৈবেদ্য নিবেদন, যেগুলি দিয়ে আপনি দেবী লক্ষীকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন আর রাত জেগে লক্ষ্মী পূজার এই আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি নিজের ঘরে দেবীর এর বসবাস পাকা করতে পারেন।

দেবী লক্ষ্মী খুবই অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। খুবই সাধারণ বিষয়ে তিনি ভক্তদের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ প্রদান করেন আর সেই স্বাভাবিক এবং অল্প আয়োজনই আপনার সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top