ডার্ক সার্কেল নিয়ে আর চিন্তা নেই, ঘরোয়া উপাদানে চিরবিদায় করুন

আমরা সকলেই চাই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন, তার সাথে সাথে সুন্দর ত্বক ও রূপ সৌন্দর্য। তবে বর্তমান সময়ে সেটা আর পেয়ে ওঠা হচ্ছে না। কর্মব্যস্ত এই জীবনে প্রতিনিয়ত দৌড়ঝাপ করতে করতে নিজের প্রতি এতটুকু খেয়াল রাখার সময় নেই।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, ক্লান্তি, যত্নের অভাব, এই সমস্ত বিষয়গুলি একেবারে চেপে বসে আমাদের উপরে। একাধিক কারণে চোখের নিচে কালি পড়ে যা ডার্ক সার্কেল হিসেবে আমরা জানি। এটা সৌন্দর্যে কতটা বাধা প্রদান করে তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই।

ডার্ক সার্কেল নিয়ে আর চিন্তা নেই, ঘরোয়া উপাদানে চিরবিদায় করুন
ডার্ক সার্কেল নিয়ে আর চিন্তা নেই, ঘরোয়া উপাদানে চিরবিদায় করুন

এই ডার্ক সার্কেল মেকআপ দিয়ে কোন রকমের ঢাকা তো যায়, তবে সব সময় তো আপনি মেকআপ করে থাকতে পারেন না, তাই না ! সুন্দর- প্রাকৃতিক- স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য সামান্য কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই এই ডার্ক সার্কেল কেও টাটা বাই বাই করা যায়।

আবার নিজের সৌন্দর্যও ফিরিয়ে আনা যায়। সমস্যার সমাধান করতে নিজেকে একটুখানি কষ্ট করতে হবে, না হলে এই ডার্ক সার্কেল এর দাগ ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠবে, যা কোনোভাবেই আপনি ঢাকা দিতে পারবেন না।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপাদান, যেগুলি অবলম্বন করে আপনার ডার্ক সার্কেল কে একেবারে সারিয়ে তুলতে পারেন: 

প্রতিদিন যে কাজ গুলি করলে মানসিক চাপ কমবে নিমিষেই

#১) শসা দিয়ে করুন পরিচর্যা:

ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে শসা দিয়ে করুন পরিচর্যা
ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে শসা দিয়ে করুন পরিচর্যা

শশা একটি ঠান্ডা খাদ্য উপাদান। যা শরীরের জলের অভাব পূরণ করার পাশাপাশি ত্বকের খেয়াল রাখতে ম্যাজিকের মত কাজ করে। শসার শীতলতা এবং এতে থাকা বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের তলায় কালি ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে বহু গুনে।

ব্যবহার করার পদ্ধতি:

বাজার থেকে সবজি কিনে আনার সময় অবশ্যই শসা হয়তো প্রায় ঘরে আসে। তাই একটি শসা ভালো করে ধুয়ে নিন, ফ্রিজে রাখা শসা নিলে আরো ভালো। কেননা এর গুনাগুন আরো বেশি বেড়ে যায়। এবার সেটি স্লাইস করে কেটে নিন। এবার দুটি স্লাইস আলাদা করে রাখুন, বাকি স্লাইস গুলি ফ্রিজে তুলে রাখুন।

এবারে মুখ ধুয়ে নিন তারপর শসার টুকরো দুই চোখের উপরে রাখুন। ডার্ক সার্কেলের জায়গাটিও যেন শসা দিয়ে ঢাকা থাকে, সেদিকটা খেয়াল রাখবেন। এবারে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ওভাবে রেখে দিন, তারপর সময় পেরিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

রাতের জন্য বিউটি টিপস যেগুলি আপনার জানা দরকার, জেনে নিন

#২) লেবুর রস ও শসার রস:

ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে লেবুর রস ও শসার রস দিয়ে করুন পরিচর্যা
ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে লেবুর রস ও শসার রস দিয়ে করুন পরিচর্যা

লেবু আমাদের ত্বক, শরীর, চুল সবকিছুতেই বিশেষভাবে উপকার করে থাকে। শসা টুকরো করে কেটে নিয়ে সেটি গ্রেট করে নিন। এবারে শসার রস বের করে নিন। তারপর একটি পাত্রে ৪:১ অনুপাতে শশা এবং লেবুর রস মিশিয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা হতে দিন।

সম্পূর্ণ ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজ থেকে মিশনটি বের করে পরিষ্কার তুলোর বল সেই মিশ্রণে ভিজিয়ে ডার্ক সার্কেল এর জায়গায় পুরু করে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি কিন্তু আপনার চোখকে শান্তি ও আরাম প্রদান করার পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখবে। যা চোখ দুটিকে আরো বেশি সুন্দর করে তুলবে।

ছেলেদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর কয়েকটি কার্যকারী উপায়

#৩) আলুর রস ও শসা দিয়ে করুন রূপচর্চা:

ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে আলুর রস ও শসা দিয়ে করুন রূপচর্চা
ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে আলুর রস ও শসা দিয়ে করুন রূপচর্চা

আমাদের রান্নাঘরে প্রতিনিয়ত আলু টা থাকবেই থাকবে। কেননা এই আলু ছাড়া কোন রান্নাই যেন সম্পূর্ণ হয় না। সেই জন্য কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই ত্বকের দাগ ছোপ দূর করতে আলোর রস ব্যবহার করতে পারেন বিনা দ্বিধায়।

ত্বকের দাগ ছোপ এর সঙ্গে মোকাবেলা করতে আলুর রসের গুণ সম্পর্কে অনেকেই কিন্তু জানেন। আলুতে ব্লিচিং করার ক্ষমতা রয়েছে এই ব্লিচিং এর প্রভাব ত্বকের জন্য খুবই কার্যকারী। ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে আলুর রস অনেকেরই পছন্দের।

ব্যবহার করার পদ্ধতি:

আলু টুকরো করে কেটে সেটি ভালো করে গ্রেট করে নিন। এবার হাত দিয়ে চেপে চেপে রস বের করে ছেঁকে নিন। এই একই পদ্ধতিতে শসা ও গ্রেট করে নিতে পারেন। শসার রস ও আলুর রস একসাথে মিশিয়ে নিন।

এই মিশ্রণটি মুখে প্রয়োগ করার আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। যেকোনো ফেসপ্যাক ব্যবহার করার আগে মুখের ধুলোবালি পরিষ্কার করে সুন্দর করে ধুয়ে নেওয়াটাই প্রয়োজন। না হলে কোনরকম কাজ হবে না।

তুলোর বল দিয়ে ভালো করে চোখের কালো দাগের উপরে মিশ্রণটি প্রয়োগ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন তারপরে সাধারণ ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেললে আপনি তার ফলাফল কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন।

কিভাবে সহজেই আপনার স্টাইলিশ লুক বজায় রাখবেন? জেনে নিন

#৪) চালের গুঁড়ো:

চালের গুঁড়ো খুবই সহজে এবং ঘরেতেই পাওয়া যায়, আর এই উপাদান আপনার ত্বকের জন্য অমৃত সমান। আতপ চাল হলে খুবই ভালো হয়, সেটি ভিজিয়ে গুঁড়ো করে ভালো করে সেটা আবার রোদে দিয়ে কাঁচের জারে রেখে দিতে পারেন।

এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ হলুদ, গোলাপ জল দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে সারা মুখে ও ঘাড়ে ব্যবহার করুন, তারপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। আপনি নিজেই কিন্তু দেখতে পাবেন আপনার ত্বক কতটা পরিবর্তন হয়েছে।

#৫) কেশর অথবা সাফরান / জাফরান:

এটি এমন একটি উপাদান যা খুবই কম পরিমাণে উৎপাদিত হয়, আর সেই কারণে এর গুনাগুন হিসাবে এটি খুবই দামী হয়ে থাকে। তাছাড়া এটি খুবই অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হয় বা খেতে হয় না হলে বেশি পরিমাণে এর অনেক সাইড এফেক্ট থাকে। তবে রূপচর্চায় কেশরের গুণ খুবই উপকারী। কেশরের স্বাদ ও গন্ধ সম্পর্কে সকলেই হয়তো জানেন।

কেননা এটি বিশেষ করে রান্নাতে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। মিষ্টির উপরে কেশর ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবারের সৌন্দর্য বর্ধন করতে এটি ব্যবহার করা হয়। একটু দামি হলেও এই মসলা ত্বকের যত্নে দারুন উপকারি।

আরো অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি কেশর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে ব্যবহারের আগে একবার সেটির প্যাচ টেস্ট করে নিতে ভুলবেন না, কেননা আপনার কোন জিনিসে অ্যালার্জি আছে তা কিন্তু আপনি আগে থেকে নাও জানতে পারেন।

উজ্জল ও ফর্সা ত্বক পেতে কেশরের উপরে ভরসা করতে পারেন ১০০ শতাংশ। প্রাকৃতিক হওয়ার জন্য এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর কেশর ব্যবহারে মিলবে ঝকঝকে জেল্লাদার ত্বক।

ঘি খাওয়ার উপকারিতাগুলি জানলে, প্রতিদিনই ঘি খাবেন

কেশরের ব্যবহারে যে উপকার গুলি আপনি পেতে পারেন:

১) ত্বকের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি:

যে কোন বিউটি প্রোডাক্ট আপনাকে হয়তো ততটা স্বস্তি নাও দিতে পারে যা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে থাকবে। একাধিক গবেষণা থেকে জানা গেছে কেশর ব্যবহার করলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা কমে যায় আর ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশনে খুব সহজেই কাজ করতে পারে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি।

২) ব্রণ থেকে মুক্তি:

অনেকের ত্বকে ব্রণের সমস্যা থেকে যায়, কোন ভাবেই তা সারতে চায় না, ঋতু ও ত্বকের ধরন অনুসারে ব্রণের সমস্যা হয় কেশরে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ প্রবণ ত্বকের খেয়াল রাখতে সাহায্য করে। ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এই কেশর। তাই সহজেই ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৩) ত্বকের বয়স কমিয়ে রাখে:

অনেক সময় দেখা যায় আসল বয়স আপনার রুপ সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে যায়। কেননা যদি আপনার ত্বক ১০ বছর কম বয়সী লাগে আপনার বয়স তুলনায়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার বয়সও কম দেখাবে, তাই না !

কেশরে রয়েছে বেশ ভালো পরিমানে অ্যান্টি এইজিং উপাদান, যা ব্যবহার করার ফলে ত্বকের বয়স ধরে রাখা সম্ভব হয়। তবে তারুণ্য ধরে রাখতে ও ত্বক হাইড্রেট রাখতে কেশর ব্যবহার করুন।

৪) টোনার হিসেবে দারুণ কার্যকরি:

ত্বকের যত্নে টোনার খুবই দারুণ কাজ করে। কেশর দিয়ে তৈরি টোনার ত্বকে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন আপনার ত্বকে ধরা পড়বে নিখাদ উজ্জ্বলতা।

নিজের খারাপ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার সঠিক উপায়

তবে এবার জানা যাক এই কেশর আপনি কিভাবে ব্যবহার করতে পারেন:

ত্বকের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এমন উপাদানের সঙ্গে কেশর মিশিয়ে তাকে প্রয়োগ করতে পারেন। সেটা যে কোন প্রাকৃতিক উপাদান হতে পারে, যা ত্বকে ব্যবহার করা যায়।

যেমন ধরুন অলিভ অয়েল, জল, দুধ, হলুদ, নারকেল তেল, রোজ ওয়াটার, ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে কেশর মিশিয়ে আপনি অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেটা সামান্য পরিমাণে কেশর নিতে হবে।

এই উপাদানটি ত্বকের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতেই পারে। তবে যদি সম্ভব না হয়ে ওঠে অন্তত সপ্তাহে কমপক্ষে তিন থেকে চার দিন এই উপাদানটি ব্যবহার করতে ভুলবেন না, ত্বক এর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top