এই প্রকৃতির একটা নিজস্ব নিয়ম অনুসারে প্রতিটি মেয়েরই প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুস্রাব (পিরিয়ড) এর মতো এই সাধারণ ঘটনা নিশ্চয় কারো অজানা নয়। তবে এমন সময়ে অনেকেই বিষয়টাকে খুবই স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকেন। আলাদা কোন খেয়াল অথবা যত্ন রাখা হয় না বললেই চলে।
তবে এটা যতটা সামান্য মনে করা হয় ততটা সামান্য কিন্তু নয়। এটা যদি অবহেলার মধ্যে দিয়ে কাটানো হয়, তাহলে অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত সচেতনতা অবলম্বন করাটা বিশেষ জরুরী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে এই সময় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায় অনেকটা।
এছাড়া অন্য সময় নারীদের শরীর যতটা না শক্তিশালী থাকে, এই সময়ে তার থেকে অনেক গুণ বেশি নরম আর সংক্রমণের ক্ষেত্রে একেবারে উপযুক্ত থাকে। বলা যেতে পারে এই সময় সংক্রমনের ঝুঁকিটা অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
যেকোনো সংক্রমণ স্বাভাবিকভাবে চোখে পড়ে না, তবে সেটা ধীরে ধীরে যখন শরীরে প্রভাবিত হয়, তখন তার প্রভাব বড় আকার ধারণ করতে পারে, প্রতিনিয়ত এই অবহেলার কারণে।
এই সময় এমন কিছু নিয়ম এমন কিছু সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরী যার মধ্যে দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি কোনরকম সংক্রমণ ঘটবে না শরীরে।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু সচেতনতা সম্পর্কে, যা এই বিশেষ সময়েও আপনাকে দেবে এক সুন্দর অনুভূতি:
১. স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা:
সম্পূর্ণ পৃথিবীতে সব নারীরা স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার না করলেও অনেক ক্ষেত্রেই এই স্যানিটারি প্যাড বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিছু বছর আগে থেকে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যদি আপনি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন, তাহলে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা রাখা যেতে পারে, এর বেশি নয়।
চার থেকে ছয় ঘন্টা পর সেটা পরিবর্তন করাটা জরুরী। তার সঙ্গে অন্তরবাসও বদলে ফেলাটাও স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে খুবই ভালো। যত বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তত বেশি সংক্রমণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা।
২. হাত ভালো করে ধুয়ে নেওয়া:
যতবারই স্যানিটারি প্যাড অথবা মেন্সট্রুয়াল কাপ যাই ব্যবহার করে থাকেন না কেন, সেটা পরিবর্তন করার পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে অথবা হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবেন।
এই পরিচ্ছন্নতা সবসময়ের জন্য বজায় রাখাটা জরুরী। তাহলে ঋতুস্রাবের এই দিন কটি আপনার কাছে অস্বস্তিকর মনে হবে না।
৩. বিশেষ অঙ্গ পরিষ্কার রাখা:
এই সময়টা যদিও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে হয়, তবে ভ্যাজাইনা (যোনি) পরিষ্কার রাখতে সাবান অথবা কোন হাইজিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা ভ্যাজাইনা নিজে থেকেই তার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা খেয়াল রাখে।
এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরিষ্কার জলই যথেষ্ট। আর যদি এরকম কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে সচেতনতা দিক থেকে বলা যেতে পারে এক্ষেত্রে কিন্তু সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে।
কেননা এই সমস্ত প্রোডাক্টের মধ্যে অনেক কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তাই সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে এবং সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ জল দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং ভ্যাজাইনার এলাকাটি সবসময় শুষ্ক রাখুন।
৪. সুগন্ধি ন্যাপকিন একেবারেই নয়:
অনেক মেয়েদের এমন নেশা থাকে যে, সুগন্ধিযুক্ত কোন ন্যাপকিন তাদের যেন খুবই ভালো লাগে। কেননা এই সমস্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন অথবা প্যাড এর মধ্যে থেকে একটা সুন্দর গন্ধ বের হয়।
তাই সেটি অনেকের কাছে মাইন্ড ফ্রেশ করার মত একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই ধরনের সুগন্ধিযুক্ত ন্যাপকিন একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়। এই ধরনের স্যানিটারি প্যাড ক্যান্সারের বাহক হয়ে থাকে। সেই কারণে এই সমস্ত ন্যাপকিন থেকে দূরে থাকুন।
৫. ক্লথপ্যাড অথবা কাপড়ের তৈরি ন্যাপকিন:
এগুলি আবার পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এগুলির মধ্যে কোনরকম রাসায়নিক পদার্থ ও মেশানো থাকে না। তাই এটি শরীরের জন্য যতটা ভালো, তার সাথে সাথে সংক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
তাছাড়া ন্যাপকিনে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের কারণে ভ্যাজাইনা অঞ্চলে সংক্রমণ, চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্ত ন্যাপকিন থেকে যত দূরে থাকবেন ততই কিন্তু ভালো। এর পরিবর্তে কাপড়ের তৈরি প্যাড অথবা ন্যাপকিন ব্যবহার করা যেতে পারে নিঃসন্দেহে।
এটি স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে খুবই ভালো তার পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধবও। কেননা এটি একবার ব্যবহার করা শুরু করলে তা একটানা তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর এটি সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে সরাসরি রোদে শুকিয়ে আবার পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই কারণেই সংক্রমনের চিন্তা তো থাকছেই না, আর আপনিও থাকছেন সুরক্ষিত। এগুলি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় তাই নিশ্চিন্তে এগুলি ব্যবহার করা যেতেই পারে।
৬. বেশি রাত পর্যন্ত না জেগে থাকা:
বর্তমান সময়ে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকাটা যেন জলভাত হয়ে গিয়েছে। তবে এই ঋতু স্রাবের সময়ে বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকা কোন ভাবেই উচিত নয়। আমাদের সম্পূর্ণ শরীর কোন না কোন হরমোনের কারণে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন, চিন্তা ধারা এগুলি নিয়ন্ত্রিত হয়।
তাই ঋতুস্রাবের সময় যদি রাত জাগা হয় তাহলে সম্পূর্ণ ধকল টা গিয়ে পড়ে ডিম্বাশয় এ। আর এতে অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, তাই এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
৭. ঠান্ডা জিনিস খাওয়া উচিত নয়:
এই ঋতুস্রাবের সময়ে শরীর থাকে একেবারে নিস্তেজ এবং গায়ে হালকা জ্বরও থাকে। সেই কারণে ঠান্ডা জিনিস খাওয়া একেবারে উচিত নয়। এক্ষেত্রে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ঋতুস্রাবের উপরে একটা বিশেষ প্রভাব পড়ে। যতটা সম্ভব শরীরকে গরম রাখার চেষ্টা করা উচিত।
এই সমস্ত বিষয় গুলির ক্ষেত্রে যেগুলি মেনে চলা দরকার সেগুলি মানার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া টা জরুরী। পরিবেশ দূষণ বেড়ে গিয়েছে অনেক হারে, আর এর মধ্যে থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা খুবই কষ্টকর বিষয়। তবুও যতটা সম্ভব নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিজেকেই তৎপর হতে হবে।
বিশেষ করে প্রতিটি নারীর এই বিশেষ দিনগুলিতে নিজের যত্নটা নেওয়া জরুরি। তার সাথে সাথে প্রিয় মানুষটি এবং পরিবারের আরো অন্যান্য সদস্যরাও এক্ষেত্রে সহযোগিতা করলে খুবই ভালো হয়।