নাগ পঞ্চমী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Nag Panchami 2024: History and Significance

নাগ পঞ্চমী 2024 (Nag Panchami 2024 Date Time and Significance) 2024 নাগ পঞ্চমী ইতিহাস এবং জানুন নাগ পঞ্চমী কেন পালন করা হয়? নাগ পঞ্চমী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য নাগ পঞ্চমী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

নাগ পঞ্চমী, এই উৎসবের কথা সকলেই শুনে থাকবেন। এই দিন বাড়ির দরজায় আটটি সাপের মূর্তি তৈরি করে অনেকেই পূজা অর্চনা করে থাকেন। আমাদের দেশে সাপের দংশনে মৃত্যুহার প্রায়ই চোখে পড়ে।

নাগ পঞ্চমী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Nag Panchami History and Significance
2024 নাগ পঞ্চমী ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Nag Panchami History and Significance

আর শাস্ত্র মতে সাপের দের দেবী হলেন মনসা ও নাগ দেবতাও রয়েছেন, তাই জীবনকে সাপের বিষমুক্ত করে রাখার জন্য নাগ এর দেবী ও দেবতাদের তুষ্ট করে রাখতে হয়। তাছাড়া এই নাগ পঞ্চমী উৎসবটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত দিক থেকে।

প্রাচীনকাল থেকেই নাগ দেবতার পূজা হয়ে আসছে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই নাগ পঞ্চমী উৎসব পালন করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই নাগ পঞ্চমীর দিন নাগদেবী, নাগদেবতার পূজা করলে তার আশীর্বাদ লাভ করা যায়।

এই ঐতিহ্য আজও বিদ্যমান এবং নাগ পঞ্চমীর দিন নাগদেবীর পূজার আয়োজনও করা হয়। পুরান মতে জানা যায় যে, নাগলোক অথবা পাতাল থেকে সর্পকুল এদিন মর্ত্য বাসীকে আশীর্বাদ করেন।

অনন্ত চতুর্দশী ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগ পঞ্চমী উৎসবের ইতিহাস 2024:

প্রতিটি উৎসবের কোন না কোন ঘটনা রয়েছে। আর সেই ঘটনা অনুসারে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত উৎসবটি খুবই ভক্তির সাথে পালন করা হয়। মহাভারতে কথিত আছে যে, অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা পরীক্ষিত একসময় হরিণ শিকার করতে গিয়ে খিদে ও তৃষ্ণা তে কাতর হয়ে শমিক নামে এক ঋষির আশ্রমে গিয়ে জল এর জন্য প্রার্থনা করেন।

শমিক সেই সময় মৌন ব্রত পালন করছিলেন। তাই তিনি রাজার কোন কথার উত্তর দিতে পারেন নি। সেটা বুঝতে না পেরে পরিক্ষিত এক মরা সাপ সেই ঋষির গলায় জড়িয়ে দিয়ে আসেন। কিন্তু এদিকে পিতার এই অপমানের কথা জানতে পেরে ঋষি শৃঙ্গী অর্থাৎ শমিকের পুত্র অভিশাপ দেন যে তক্ষক নাগের দংশনে রাজার মৃত্যু হবে।

রাজা পরীক্ষিতের দেহাবাসনের পর তার পুত্র জয়মেজয় খুবই রেগে যান এবং সর্প জাতির ধ্বংস সাধনে একটি মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। যেখানে জরৎকারু পুত্র আস্তিকের মাধ্যমে জয়মেজায় সেই সর্প যজ্ঞের বিরতি দেন। সেই থেকে নাগজাতির প্রতি সম্মান এবং তাদের বংশবৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে নাগ পঞ্চমী উদযাপনের রীতি প্রচলিত হয়েছে।

শনি জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগ পঞ্চমী উদযাপন করার বিধি ও নিয়ম নীতি:

এই পুণ্য তিথিতে একটি সাপের প্রতিরূপ তৈরি করে তাকে ঘরের চৌকাঠে রাখতে হয়। অর্পণ করতে হয় কুশ ঘাস, আতপ চাল, ফুল, হলুদ, কুমকুম, দুধ। তারপরের দিন ষষ্ঠী তিথিতে সেই প্রতিরূপকে দুধ দিয়ে স্নান করাতে হয়। অনিচ্ছাকৃত অপরাধের মার্জনের জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। ভোগ অথবা নৈবেদ্য হিসেবে দিতে হয় পায়েস এবং মিষ্টান্ন।

যারা এই ব্রত উদযাপন করতে পারবেন না, তারা কাছাকাছি কোন শিবমন্দিরেও পূজা দিতে পারেন। নাগ তো দেবাদিদেবের আভূষণ তাই তার আরাধনাতেও সুফল পেতে পারেন। পূজার নৈবেদ্য রূপে অর্পণ করতে হয় দুধ, ফল এবং মিষ্টি। এছাড়া নাগ মিঠুনের মূর্তি মন্দিরে উপহার দিলে সংসারে ধনবৃদ্ধি হয় বলে লোকো বিশ্বাস এর পাশাপাশি কেটে যায় কালসর্প দোষও।

নাগ পঞ্চমীর পূজা বিধি অনুযায়ী এই দিনে অনন্ত, পদ্ম, বাসুকি, মহাপদ্ম, তক্ষক, কুলীর, কর্কট, শঙ্খ নামক অষ্ট নাগের পূজা করা হয়। মহাদেবের গলায় যে সাপ আছে তার নাম বাসুকি। যারা নাগ পঞ্চমীর পূজা করেন তাদের চতুর্থীর দিন একবার খাবার খাওয়া এবং পঞ্চমীর দিন উপবাস থাকা উচিত।

নাগ দেবতার মূর্তির সামনে রাখা হয় ফুল, দুধ, চন্দন, হলুদ ও সিঁদুর। মূর্তির সামনে জ্বালানো হয় কর্পূরের প্রদীপ। নাগ দেবতার পূজা করার পরে কাঁচা দুধে ঘি ও চিনি মিশিয়ে অর্পণ করা হয়। তারপর আরতি করতে হয় এবং নাগ পঞ্চমীর ব্রত কথা শুনতে হয়।

গুরু পূর্ণিমা ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগ পঞ্চমী পূজার উপকরণ 2024:

নাগ পঞ্চমী পূজার দিন হলুদের সাথে ময়দা মিশিয়ে এই মিশ্রণের সাহায্যে একটি সাপ তৈরি করা হয় অথবা পরিষ্কার দেওয়ালে নাগ দেবতার ছবি একে পূজা করা হয়। নাগ পঞ্চমীর পূজোর জন্য একদিন আগে মথ ও বাজরা ভিজিয়ে রাখা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় তৈরি করা ঠান্ডা খাবার নিবেদন করে পূজা করা হয়।

নাগ পঞ্চমী পূজার বিধি 2024:

একটি কাঠের প্লেটে আটা বা ময়দা দিয়ে সাপ তৈরি করে সর্প দেবতার উপরে তিলক এবং ভাত লাগানো হয়, জল, কাঁচা দুধ, মথ, বাজরা, ঠান্ডা রুটি, নিবেদন করা হয়। তারপরে নাগ পঞ্চমীর ব্রত কথা শুনুন মথ এবং বাজরা হাতে নিয়ে।

ব্রত কথা শেষ হলে সর্প দেবতা কে মথ এবং বাজরা প্রদান করুন। এরপর বাটিতে মথ, বাজারার সাথে কিছু টাকা রাখুন। উপরে রোলি এবং চাল ছিটিয়ে দেবতার সামনে দুই হাত ভাঁজ করে বাটিটির চারবার ঘুরান। পরবর্তী সময়ে যেকোনো মন্দিরে বাটিটি রেখে দিতে পারেন।

স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগ পঞ্চমীর দিন যে নিয়ম গুলি অবশ্যই অবশ্যই পালন করবেন:

  • এই দিন নির্জলা উপবাসে থাকা বাঞ্ছনীয়, বলা হয় যে তা থেকে বিষের প্রভাব অনেকটাই কমে আসে, দুঃস্বপ্নের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • শিব মন্দিরে পূজা দেওয়া অবশ্যই পালনীয়।
  • নাগ পঞ্চমী পূজার বিশেষ মন্ত্র, নাগ মন্ত্র জপ করতে হবে।

নাগ পঞ্চমীতে যেগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে:

  • নাগ জাতির বংশবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এই দিন হলকর্ষণ, গাছের ডাল কাটা বা এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে সাপের আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে।
  • এই দিন সেলাইয়ের কাজ করা ঐতিহ্য অনুসারে সম্পূর্ণরূপে বারণ।
  • এই নাগ পঞ্চমী তিথিতে লোহার পাত্রে রান্না করা অশুভ বলে মনে করা হয়। সেই কারণে এই সমস্ত কাজগুলি থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন।

গুরু রবিদাস জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগ পঞ্চমীর সাথে কুস্তিগীরদের গভীর সম্পর্ক:

শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে নাগ পঞ্চমী উৎসব পালন করা হয়। সেটা তো আমরা সবাই জানলাম। এই দিনে মহাদেবের পূজাও করা হয়, বিশ্বাস করা হয় যে, এতে সর্প দেবতা তুষ্ট হন এবং মানুষের পরিবারের রক্ষার্থে আশীর্বাদ প্রদান করেন।

অন্যদিকে দেখতে গেলে দেখা যায় যে, এই উৎসবের সঙ্গে কুস্তির অনেকখানি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই নাগ পঞ্চমীর দিনে কুস্তির আখড়া সাজানো হয়। এই দিনে কুস্তিগীররা দৈহিক গঠন প্রদর্শন করেন, তাদের শক্তি প্রদর্শন করেন।

তবে বলা যায় শুধুমাত্র কুস্তিই নয়, বছরের পর বছর ধরে এই নাগ পঞ্চমীর দিন আরো অনেক খেলাধুলাও করা হয়। যেমন ধরুন:- কাবাডি, খো খো, হাই জাম্প, লং জাম্প ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে কুস্তি হল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়, ভারতে এটি দুটি ধরনের ফ্রিস্টাইল এবং গ্রীক ও রোমানরা অলিম্পিক দেখানোর জন্য অনেকেই মুখিয়ে থাকেন।

তবে নাগ পঞ্চমীতে অনুষ্ঠিত এই কুস্তির নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে। এটি ম্যাট এ নয় বরং সংঘটিত হয় আখড়ার মাটিতে একেবারে সাবেকি ধারায়, ধুলো মাটি মেখে। যা দেখতে স্থানীয় মানুষজন ভিড় জমিয়ে থাকেন।

যাদের অবশ্যই নাগ পঞ্চমীর ব্রত পালন করা উচিত:

যে সমস্ত ব্যক্তিরা নাগ পঞ্চমীর ব্রত খুবই নিষ্ঠা ভরে পালন অবশ্যই করবেন, তারা হলেন যাদের কোষ্টি তে কালসর্প দোষ রয়েছে, তাদের অবশ্যই নাগ পঞ্চমী ব্রত পালন করা উচিত। স্বপ্ন তেনযদি সাপ দেখেন বা সাপ নিয়ে মনে অতিরিক্ত ভয় থাকে, তাহলে সঠিক রীতি, নীতি, নিয়ম মেনে এই নাগ পঞ্চমীর দিন নাগ দেবতার পূজা করুন।

এছাড়া শ্রাবণ মাস ভগবান শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত অর্থাৎ শ্রাবণ মাসে মহাদিদেব মহাদেবের পূজা করা হয়। সেই মহাদেবের প্রিয় নাগ দের পূজাও কিন্তু শ্রাবণ মাসেই করা হয়, এই নাগ দেবতাদের পূজা করা হয় নাগ পঞ্চমীতে।

ওনাম উৎসব ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগ পঞ্চমীর মাহাত্ম্য 2024:

নাগ পঞ্চমীর দিন নাগ দেবতার পূজা করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। ভগবান শিব কে বিশেষভাবে প্রসন্ন করা যায়। এই পূজার জন্য সাপের ভয়ের অবসান ঘটে, মৃত্যু ভয় দূর হয়, সম্পদ, ঐশ্বর্য এবং সুন্দর জীবন লাভ করা যায়।

নাগ পঞ্চমীর দিনে অষ্ট নাগ ছাড়াও অনন্ত, বাসুকি, শেশা, পদ্মা, কম্বল, কারকোটক, শঙ্খপাল, অশ্বতারা, ধৃতরাষ্ট্র, কালিয়া, তক্ষক ও পিঙ্গল এই নাগদেবতা দেরও পূজা করার রীতি রয়েছে।

তো বুঝতেই পারছেন যে, স্বপ্নে সাপ দেখা এবং জীবনে সাপের ভয় থেকে দূরে থাকার জন্য নাগ পঞ্চমী ব্রত পালন করা অবশ্যই উচিত। তাছাড়া সংসারের সুখ-সমৃদ্ধি এবং ধনবৃদ্ধি হওয়ার জন্য নাগ পঞ্চমী ব্রত পালন করে থাকেন অনেকেই।

ঘরেতে সবাই সুস্থ ও সুন্দর থাকবে এই নাগ পঞ্চমী ব্রত পালন করার মাধ্যমে। অনেক জায়গায় খুবই বড় আকারে নাগ পঞ্চমী উৎসব পালিত হয়। তবে অনেকেই ঘরে নাগ পঞ্চমী ব্রত পালন করেন এবং পূজা অর্চনা করে থাকেন।

1 thought on “নাগ পঞ্চমী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Nag Panchami 2024: History and Significance”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top