ঋষি পঞ্চমী 2023 (Rishi Panchami 2023 Date Time and Significance) 2023 ঋষি পঞ্চমী ইতিহাস এবং জানুন ঋষি পঞ্চমী কেন পালন করা হয়? ঋষি পঞ্চমী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য ঋষি পঞ্চমী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
ঋষি পঞ্চমীর যে উৎসব অথবা ব্রত পালন করার কথা বলা হয়েছে সেটি কোন ঋষিকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তবে এই উৎসব ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষে পঞ্চমী তিথিতে পালন করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানব জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে সাত ঋষি কেনপাঠিয়ে ছিলেন ব্রহ্মা। সেই কারণে ঋষি দের কে সর্ব জ্ঞানী বলা হয়।
এমনই কথিত আছে যে, সেই সাতজন বেশি হলেন কাশ্যপ, ভরদ্বাজ, অত্রি, বিশ্বামিত্র, গৌতম মহর্ষি, বৈশিষ্ট্য, জমদগ্নী। বেদ শাস্ত্র মতে এই সাতজন ঋষি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে জ্ঞান দান করেছিলেন এবং ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষার আলো। মানব সভ্যতায় তাদের অবদান ছিল অসীম। তাই এই সকল ঋষি দের স্মরণ করে তাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পালিত হয়ে আসছে ঋষি পঞ্চমী।
এই দিনে সমস্ত ভক্তরা, মহিলা, পুরুষ সকলেই কিন্তু উপবাস করে থাকেন। সাতটি ঋষির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তারা পূজা দিয়ে থাকেন। এই সাতটি পূন্য পুরুষ ছাড়াও শ্রী শ্রী গণেশ এবং নবগ্রহ এবং অরুন্ধতী কে ও পূজা করা হয়। অরুন্ধতী হলেন সব দেবতার মা। নবগ্রহ হল: সূর্য, চন্দ্র, বুধ, শুক্র, শনি, মঙ্গল, বৃহস্পতি, রাহু ও কেতু।
গুজরাতে এই ঋষি পঞ্চমীর দিনটিকে সম পঞ্চম বলা হয়। তাছাড়া চাষ এর সঙ্গে যুক্ত মানুষজন এই দিনটিতে শুধুমাত্র এক ধরনের ঘাস ও সেই ঘাসের শস্য খেয়ে থাকেন। মহিলারা নদীতে স্নান করে কীর্তন করেন। অনেক জায়গায় আবার এই দিনে রজসলা দশা কাটাতে ব্রত পালন করে থাকেন মহিলারা।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
অনেকেই আবার ঋষি পঞ্চমীর দিন হোম, যজ্ঞ করে থাকেন।
ঋষি পঞ্চমীর তাৎপর্য 2023:
এর তাৎপর্য বলতে গেলে, জ্ঞানের আলোকে আরো বেশি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঋষিদের কৃতজ্ঞতা জানানো হয়ে থাকে ঋষি পঞ্চমীর মধ্যে দিয়ে। শিক্ষাই একমাত্র আমাদের অন্ধকার জগত থেকে আলোর জগতে নিয়ে যেতে পারে।
সেই কারণে সমস্ত জগৎ বাসীকে শিক্ষিত করার জন্য এই সপ্ত ঋষিকে প্রতি বছর ঋষি পঞ্চমীর দিন বিশেষভাবে স্মরণ করে তাদের উদ্দেশ্যে ফুল, ফল, নৈবেদ্য এবং হোম যজ্ঞ দিয়ে আমাদেরকে জ্ঞানের আলোয় নিয়ে যাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়ে থাকে।
এছাড়া অনেকেই কোন গুরুর কাছে, যদি কোন ঋষির কাছে যদি শিষ্য হয়ে থাকেন বা দীক্ষা নিয়ে থাকেন, সেখানে গিয়েও এমন রীতিনীতি করতে দেখা যায়। এর ফলে যারা আমাদের গুরু তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, যারা আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ঋষি পঞ্চমীর এই উৎসবটি সাধারণ মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে বিশ্বাস করা হয় যে, কোন ব্যক্তি যদি এই দিনে ঋষিদের উপাসনা করে থাকেন তবে তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ঋষি পঞ্চমীর দিন সপ্ত ঋষিদের পূজা করার বিধিও রয়েছে এই শাস্ত্রে।
এছাড়া বিশ্বাস করা হয় যে, ঋষি পঞ্চমীর দিন ব্রত পালন করলে মহিলারা ঋতুস্রাব এ সময় নিয়মিত করা কাজ গুলির ফলে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে, তবে তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আবার মনে করা হয় যে, মহিলারা যদি এই দিনে ঋষি পঞ্চমী ব্রত পালন করে থাকেন, তবে তাদের মাসিকের যে সমস্যা, ত্রুটি রয়েছে সেগুলো থেকে মুক্তি হতে পারে। এছাড়া বলা যেতে পারে যে, এই ব্রত মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী এবং পাপস্খলন এর মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত করা হয়।
ঋষি পঞ্চমীর দিন করণীয়:
ঋষি পঞ্চমীর ব্রত পালন করার জন্য এই দিনে সপ্তর্ষির পূজা করা সমস্ত পুরুষ ও মহিলার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
- তাড়াতাড়ি স্নান সেরে শুদ্ধ মনে সপ্ত ঋষির নাম করে ধ্যান করতে হয়।
- এই সাত জন ঋষির নামে সাতটি আসন পাতুন, তাতে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিন।
- প্রতিটি আসনের সামনে একটি জলের গ্লাস রাখুন এবং একাগ্র মনে এই সাত ঋষির নাম স্মরণ করে জগতের মঙ্গল কামনা করুন।
- এরপর ঋষি পঞ্চমীর দিন আপনার বাড়িতে সাতজন ব্রাহ্মণের নামে আপনার সাধ্যমত সাত রকম ভূজ্য এর ব্যবস্থা করুন এবং সেটা তাদের সামনে সাজিয়ে দিন, তাতে একটি করে পৈতে ও গীতা দিয়ে তা দান করুন।
তো এইভাবে প্রতিবছর ঋষি পঞ্চমী উৎসব জনসাধারণের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। আর খুবই ভক্তির সাথে মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে এই ঋষি পঞ্চমী ব্রত পালন করে থাকেন। আর এর মধ্যে দিয়েই দৈনন্দিন জীবনে করা সমস্ত রকম পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায় বলে অনেকেই ধারণা করেন।