গুরু রবিদাস জয়ন্তী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Guru Ravidas Jayanti 2024: History and Significance

গুরু রবিদাস জয়ন্তী 2024 (Guru Ravidas Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 গুরু রবিদাস জয়ন্তীর ইতিহাস এবং জানুন গুরু রবিদাস জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? গুরু রবিদাস জয়ন্তীর তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গুরু রবিদাস জয়ন্তীর গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বিভিন্ন রকমের উৎসব অনুষ্ঠানের মত পালিত হয়ে আসছে গুরু রবিদাস জয়ন্তী। যেটা মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয়। গুরু রবিদাস ভারতের সেই বিশেষ মহাপুরুষদের মধ্যে একজন যিনি তার আধ্যাত্মিক বাণীর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের কাছে আত্মজ্ঞান, ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন।

গুরু রবিদাস জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Guru Ravidas Jayanti History and Significance
2024 গুরু রবিদাস জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Guru Ravidas Jayanti History and Significance

১৫ থেকে ১৬ শতাব্দীতে নামদেব, মীরাবাই এর মতো শ্রী হরির ও রামকৃষ্ণের মত বৈষ্ণব অবতারের ভক্তি আন্দোলনের একজন মরমী কবি সন্ত ছিলেন তিনি এবং তিনি রবিদাসী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাও।

এছাড়াও রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা অঞ্চলে গুরু হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন। তিনি ছিলেন একজন কবি সাধক, সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব।

শিক্ষক দিবস ইতিহাস ও তাৎপর্য

শ্রী গুরু রবিদাস এর জীবনী সম্পর্কে কিছু জানা যাক:

  • জন্ম: ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ বারাণসী
  • ধর্ম: বৈষ্ণব হিন্দু ধর্ম
  • উল্লেখযোগ্য কাজ: রবিদাসী বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা
  • সম্মান: একজন গুরু হিসেবে সম্মানিত, সাহেবের মধ্য স্তত্র গুলি অন্তর্ভুক্ত
  • মৃত্যু: ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ

গুরু রবিদাস রাইদাস নামে ও পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারানসীর কাছে সির গোবর্ধনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্মস্থান এখন শ্রীগুরু রবিদাস জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত। তার পিতা মাতা চামড়া কর্মী, চামার সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিল যা তাদেরকে অস্পৃশ্য জাতি বানিয়েছিল।

যদিও তার আদি পেশা ছিল চামড়ার কাজ, তিনি তার বেশিরভাগ সময় গঙ্গার তীরে আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্যয় করতে শুরু করেন। এরপর তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সুফি, সাধক, সাধু এবং তপস্বীদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন।

মহাবীর জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

গুরু রবিদাস জয়ন্তীর ইতিহাস 2024:

গুরু রবিদাস হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই প্রতি বছর মাঘ পূর্ণিমায় রবিদাস জয়ন্তী পালন করা হয়। তিনি নির্গুণ সম্প্রদায়ের একজন বিখ্যাত সাধক ছিলেন। যিনি উত্তর ভারতে ভক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার পিতার নাম ছিল সন্তখ দাস এবং মায়ের নাম ছিল কলসান।

ছোটবেলা থেকেই রবি দাস প্রতিটি কাজ খুবই ভক্তি সহকারে এবং মনোযোগ দিয়ে করতেন, বাবার কাজে সবসময় সাহায্য করতেন। তার মিষ্টি কথাবার্তা এবং মিষ্টি আচার-আচরণের জন্য তার ব্যবহারে সবাই খুবই খুশি হতেন।

পন্ডিত সদা নন্দ তার এবং তার আচরণে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একদিন রবিদাস আধ্যাত্মিকভাবে আলোকিত হবেন এবং একজন মহান সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত হবেন।

রবিদাস খুবই অল্প বয়সে লোনা দেবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি একজন ভদ্র ধার্মিক মহিলা ছিলেন, সন্ত রবি দাস মানুষকে শিখিয়েছিলেন যে, কেউ যদি তার জাত ধর্ম বা ঈশ্বরের বিশ্বাস না করে তবে সে কেবলমাত্র তার মহান কর্মের জন্য পরিচিত হতে পারবেন। তাছাড়া সমাজে উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা নিম্ন বর্ণের মানুষের জন্য অস্পৃশ্যতার প্রথার বিরুদ্ধেও তিনি কাজ করেছিলেন এবং বিরোধিতা করেছিলেন।

এটা তার কিছু অনুসারীদের দ্বারা বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি তার জীবনের ১২০ অথবা ১২৬ বছর পরে স্বাভাবিক ভাবে মারা যান। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, তিনি ১৫৪০ সালে বারাণসীতে তার নিজস্ব জন্মস্থানে মারা গিয়েছেন।

সরস্বতী পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

গুরু রবিদাস জয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠান: 

এই দিনে মন্দির ও মঠে কীর্তন, ভজন এর বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেক জায়গায় ঢাকিয়া বের করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

এর মধ্যে রবিদাস এর জীবন কাহিনী বর্ণিত করা হয়েছে। সৎ সঙ্গ, ভজন, কীর্তনে সন্ত রবি দাস এর রচনাবলী গাওয়া হয়। মানুষ ভক্তি সহকারে রবিদাস কে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

গুরু রবিদাস জয়ন্তীর তাৎপর্য 2024:

গুরু রবিদাস জয়ন্তী পালন করা হয় তার জন্ম কে চিহ্নিত করে অর্থাৎ তার জন্মদিন পালন করা হয় এই দিনে। তাছাড়া তিনি ভক্তি আন্দোলনে অবদান রেখেছেন এবং কবিরের একজন ভালো বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

অনেকেই তাকে অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যে একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, শুধুমাত্র যারা রবিদাস কে অনুসরণ করে না, অন্যরাও যারা রবিদাসকে কোনো না কোনোভাবে সম্মান করে থাকেন, তারা কিন্তু এই গুরু রবিদাস জয়ন্তী খুবই নিষ্ঠার সাথে পালন করে থাকেন।

নরসিংহ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

গুরু রবিদাস এর লেখা: 

অনন্ত দাস পারকাই লেখাটি বিভিন্ন ভক্তি আন্দোলনের কবিদের প্রথম দিকে জীবিত জীবনী, যার রবি দাসের জন্মের কথা উল্লেখ করে। মধ্যযুগের গ্রন্থ গুলি থেকে বোঝা যায় যে, রবিদাস ছিলেন ব্রাহ্মণ, ভক্ত, কবি রামানন্দের শিষ্য।

তিনি ঐতিহ্যগত ভাবে কবিরের সমসাময়িক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। এছাড়া মধ্যযুগীয় রত্নাবলী শিরোনামে লেখা আছে যে রবিদাস রামানন্দের কাছ থেকে তার আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং তিনি রামানন্দের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অনুসারীও ছিলেন।

গুরু রবিদাস এর সাহিত্যিক কাজ: 

শিখদের আদি গ্রন্থ এবং হিন্দু যোদ্ধা তপস্বী গোষ্ঠী দাদু পন্থীদের পাঁচ ভানি হল রবি দাসের সাহিত্যকর্মের দুটি প্রাচীন উৎস। ডেভিড লরেঞ্জেন বলেন, “রবি দাসের কবিতা ঈশ্বরের প্রতি সীমাহীন প্রেমময়, ভক্তির বিষয় দ্বারা আবৃত। যেখানে এই ঈশ্বরকে নির্গুণ রূপে কল্পনা করা হয়েছে।”

নানকের কবিতার বিষয়বস্তু রবিদাস এবং অন্যান্য প্রধান উত্তর ভারতীয় সাধু কবিদের নির্গুন ভক্তি ধারণার সাথে ব্যাপকভাবে মিল পাওয়া যায়। অধিকাংশ উত্তর আধুনিক পণ্ডিতরা রবিদাসের ভাবনাকে ভক্তি আন্দোলনের মধ্যে নির্গুণ দর্শনের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন।

গুরু রবিদাস এর মৃত্যু হয়েছিল ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ তে বারাণসী তে। গুরু রবিদাসের ভক্তিমূলক শ্লোক বলে গুরু গ্রন্থ সাহেব নামে পরিচিত, যা কিনা শিখ ধর্মগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত ছিল। হিন্দু ধর্মের মধ্যে দাদু পন্থী ঐতিহ্যের পঞ্চবাণী পাঠে রবিদাসের অসংখ্য কবিতা ও শামিল রয়েছে।

তিনি বর্ণ ও লিঙ্গের সামাজিক বিভাজন দূর করার জন্য শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক সুপরিচিত সাধনায় ঐক্য প্রচার করেছিলেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্ডিতদের মত অনুসারে তিনি ১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, তার মৃত্যুর বছরটা ছিল ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ। আর তার জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই রবিদাস জয়ন্তী পালন করা হয়। কেননা তিনি মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই অনুসারে এই দিনটি প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top