গুরু পূর্ণিমা 2023 (Guru Purnima 2023 Date Time and Significance) 2023 গুরু পূর্ণিমা ইতিহাস এবং জানুন গুরু পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়? গুরু পূর্ণিমা তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গুরু পূর্ণিমা গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
কোন না কোন তিথিতে কোন না কোন উৎসব পড়েই থাকে। তাছাড়া অমাবস্যা, পূর্ণিমা এই তিথিতে ও অনেক রকম পূজা পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। তেমনি হল গুরু পূর্ণিমা। শাস্ত্র অনুসারে বেদের রচয়িতা মহর্ষি বেদ ব্যাস আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
বেদ এর প্রথম শিক্ষা দিয়েছেন মহর্ষি বেদ ব্যাস তাই তাকে হিন্দু ধর্মে প্রথম গুরুর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর এই কারণেই গুরু পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমা বলেও অনেকে জানেন। এই দিনটি গুরুদেব অথবা গুরূদের পূজার জন্য নিবেদিত করা হয়।
হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মে গুরু পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে এই তিথিতে মনি পরাশর ও সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এই দিনে বেদ ব্যাসের জন্ম জয়ন্তী হিসেবেও পালন করা হয়।
গুরু পূর্ণিমার ইতিহাস 2023:
বৌদ্ধ ধর্ম মতে অধিকার লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাতে সারনাথের প্রথম শিষ্যদের উপদেশ দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ, ভগবান শিব অথবা দেবাদিদে মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষি সাতজন ঋষি হলেন তার প্রথম শিষ্য।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
অত্রী, বশিষ্ট, পুলস্থ, অঙ্গীরা, মরীচী, পূলহ এবং কেতু, তবে নাম নিয়েও মতভেদ রয়েছে। শিব এই তিথিতে আদি গুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাত ঋষিকে মহা জ্ঞান প্রদান করেন। আর তাই জন্য এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
গুরু পূর্ণিমার উৎপত্তি বৈদিক যুগে পাওয়া যায়, এই অনুষ্ঠানটি হিন্দু, জৈন এবং বৌদ্ধরা গুরুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য একটি দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। গুরু পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি শুভ উপলক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে ভগবান বুদ্ধদেব উপদেশ দিয়েছিলেন। কারণ এই দিনেই মহাভারতের লেখক বেদ ব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব 2023:
গুরু শব্দের অর্থ হল, এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয়, যিনি অন্ধকার দূরীভূত করেন অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যান সাধারণ মানুষকে। গুরু আমাদের মনের সব রকম সংশয়, সন্দেহ, অন্ধকার দূর করেন এবং নতুন পথের দিশা দেখান। যে পথে গেলে মানুষের জীবনে উন্নতি সাধন ঘটে।
এছাড়া ভারত হলো ঋষি মুণিদের দেশ। যেখানে তাদের ঈশ্বর তুল্য বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তদের প্রতি ভগবান রুষ্ট হলে গুরুই কিন্তু রক্ষার পথ দেখাতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশে গুরুদেব দের সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়েছে।
গুরুর দেখানো পথে চললে কোন ব্যক্তি আনন্দ, শান্তি এবং মোক্ষ লাভ করতে পারেন। সেই কারণে গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকে এই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই পূর্ণিমার দিন গুরুর পূজা অর্চনা করলে অক্ষয় আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
গুরু পূর্ণিমার তাৎপর্য 2023:
মহর্ষি যিনি পৌরাণিক যুগের মহান ব্যক্তিত্ব ব্রহ্মসূত্র, মহাভারত, শ্রীমৎ ভাগবত এবং অষ্টম পুরাণের মতো চমৎকার সব সাহিত্য রচনা করেছিলেন। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই জন্য তাকে আদিগুরু হিসেবে মনে করা হয়।
গুরু পূর্ণিমার এই বিখ্যাত উৎসবটি ব্যাস দেবের জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে আমাদের উচিত ব্যাসদেবের অংশ হিসেবে আমাদের গুরুদেব যারা রয়েছেন তাদের পুজো করা।
গুরুর কাছ থেকে মন্ত্র প্রাপ্তির জন্য এই দিনটি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন অনেকেই। আর সেই কারণেই এই দিনে গুরুজনদের সেবা করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সময় এই দিনে অনেকেই দীক্ষা নিয়ে থাকেন।
গুরু পূর্ণিমার পূজার পদ্ধতি 2023:
প্রতিটি পূজার জন্য কোন রীতিনীতি মেনে পূজা করতে হয়। তেমনি এই গুরু পূর্ণিমার দিন যদি আপনি পূজা অর্চনা করতে চান, তাহলে নিচে দেওয়া এই সমস্ত রীতিনীতি গুলি মেনে আপনাকে পূজা করতে হবে:-
- গুরু পূর্ণিমার দিন খুবই ভোরে উঠে ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে স্নান সেরে নতুন এবং পরিষ্কার কাপড় পড়তে হবে।
- একটি পরিষ্কার জায়গায় অথবা উপাসনালয় তে একটি সাদা কাপড় বিছিয়ে একটি ব্যাস পীঠ তৈরি করুন।
- বেদ ব্যাস এর একটি মূর্তি অথবা ছবি সেখানে রাখুন, এরপর চন্দন, ফুল, ফল এবং প্রসাদ নিবেদন করুন।
- এই দিনে বেদ ব্যাস এর সঙ্গে শুক্র দেব এবং শংকরাচার্যের মতো গুরুদেবেরও আবাহন করার যেতে পারে। তাই আপনি এটা করতেও ভুলবেন না।
- শুধুমাত্র গুরুদেবই নয়, পরিবারের যারা বড় হয়েছেন যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন যারা আপনাকে গুরু হিসেবে উপদেশ দিয়ে থাকেন ভালো কাজে, তাদেরকেও আপনি সম্মান জানাতে পারেন এবং তাদের থেকে আশীর্বাদ নিতে পারেন।
হিন্দুদের মত অনুসারে বেদ ব্যাস যিনি মহাভারত বেদ এবং পুরান রচনাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি আষাঢ় মাসে পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন। বেদ কে চারটি বিভাগের বিভক্ত করার জন্য ও পরিচিত, যেমন ধরুন ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ।
এই কারণেই বেদ ব্যাস কে হিন্দুদের দ্বারা জ্ঞানের প্রতীক এবং অন্যতম সেরা গুরু হিসেবে মনে করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ভগবান শিব হিন্দু ভক্তদের দ্বারা মহাবীর এবং ইন্দ্রভুতি গৌতম কে জৈন ধর্মের অনুসারীরা এবং বৌদ্ধদের দ্বারা গৌতম বুদ্ধকে সম্মান করা হয় গুরু হিসেবে।
গুরু পূর্ণিমার উৎসবটি কিভাবে উদযাপন করা হয়?
প্রতিবছর ভারত, নেপাল, ভুটান, প্রভৃতি বৌদ্ধ প্রভাবিত দেশগুলিতে গুরু পূর্ণিমা খুবই উৎসাহ এবং ভক্তি সহকারে উদযাপিত করা হয়। গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে সবাই প্রার্থনা করার মত বিভিন্ন উপায়ে তাদের গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে থাকেন। এছাড়া অনেকেই শিক্ষকদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন গুরু হিসেবে।
তাছাড়া উপবাস করে থাকেন অনেকেই। মন্ত্র জপ করেন, বিশেষ আচার অনুষ্ঠান করাও তো রয়েছেই। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন মানুষের গুরু পূর্ণিমা উদযাপনের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। কিছু মঠ এবং আশ্রমে ছাত্ররা তাদের গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রার্থনা, পাঠের মত বিশেষ আচার অনুষ্ঠান করে থাকেন।