অক্ষয় তৃতীয়া 2023 (Akshaya Tritiya 2023 Date Time and Significance) 2023 অক্ষয় তৃতীয়ার ইতিহাস এবং জানুন অক্ষয় তৃতীয়া কেন পালন করা হয়? অক্ষয় তৃতীয়ার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য অক্ষয় তৃতীয়ার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
প্রতিটি উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের জীবনে অনেক খানি পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে, এবং খারাপ জিনিসগুলি বর্জন করতে সাহায্য করে। অশুভকে বিনাশ করে শুভ বিষয়ের আগমন ঘটানোর উদ্দেশ্যেই পূজা, পার্বণ উৎসব জীবনকে আরো বেশি সুন্দর করে তোলে।
তেমনি একটি জনপ্রিয় উৎসব হল অক্ষয় তৃতীয়া। বিশ্বাস অনুযায়ী আমরা সবাই জানি যে, জীবনের সৌভাগ্য নিয়ে আসতে অক্ষয় তৃতীয়া উদযাপন করা হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকে।
তাছাড়া প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই দিনে সোনা, সম্পত্তি, যেমন ধরুন জমি, বাড়ি, গাড়ি, ইত্যাদি কিনলে ভবিষ্যতে সম্পদ আসে বলে মনে করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া এমন একটি উৎসব যা কিনা সমস্ত বিশ্বের হিন্দু এবং জৈন ধর্মালম্বীরা পালন করে থাকেন।
এই দিনটিকে সবচেয়ে শুভ অনুষ্ঠান বলে মনে করা হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অক্ষয় তৃতীয়া বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় তিথিতে অর্থাৎ চন্দ্র দিনে পড়ে। আর গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে এই অক্ষয় তৃতীয়া এপ্রিল এবং মে মাসের কাছাকাছি কোন একটা সময় পড়ে।
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আচার অনুষ্ঠান বলে মনে করা হয়। কেননা এই দিন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম এর জন্ম হয়েছিল। অক্ষয় তৃতীয়ার সংস্কৃত অর্থ যা কিনা দুটি শব্দ অনেকখানি গুরুত্ব বহন করে থাকে, অক্ষয় কথা অনুযায়ী যা কখনো কমবে না এবং তৃতীয়া শব্দটি বৈশাখ মাসের আলোকিত অর্ধেকের তৃতীয় দিনকে বোঝায়। তাই সব মিলিয়ে অক্ষয় তৃতীয়া মানুষের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি বহন করে আনে যা কখনো কমার নয়।
অক্ষয় তৃতীয়ার ইতিহাস ও কাহিনী:
অক্ষয় তৃতীয়ার অনেক ঘটনা আছে, আর এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটি একটি শুভদিনে পরিণত হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে চারটি যুগের মধ্যে দ্বিতীয় ত্রেতা যুগ, অক্ষয় তৃতীয়া শুরু হয়েছিল যখন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম হয়েছিল।
2023 অক্ষয় তৃতীয়া শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস
এই দিনটিতে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদ ব্যাস ভগবান গণেশ কে মহাকাব্য বর্ণনা করতে শুরু করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এই উপলক্ষে ভগবান কৃষ্ণ তার ছোটবেলার বন্ধু সুদামার কাছে ছুটে যান। অক্ষয় তৃতীয়ায় স্বয়ং গঙ্গা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন।
তবে বর্তমানে যেমন অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সোনা কেনার ধুম পড়ে যায়, শুধুমাত্র হালখাতা বা সোনা কেনার উৎসব কিন্তু অক্ষয় তৃতীয়া নয়, এই বিশেষ দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস।
চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া অর্থাৎ শুক্ল পক্ষের তৃতীয় তিথি। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সত্য যুগ শেষ হয়ে ত্রেতা যুগের সূচনা হয় বলে মনে করা হয়। আর এই দিন রাজা ভগিরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
আবার অন্যদিকে কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মহাদেব কুবের কে অতুল ঐশ্বর্য দান করেছিলেন আর সেই কারণেই ধন-সম্পত্তির দেবতা হিসাবে কুবেরকেই আমরা জানি।
এই দিন টিতে বৈভব লক্ষ্মীর পূজাও করা হয়। এছাড়া এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই পুরীতে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ শুরু হয়েছিল। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে গিয়েছিলেন এবং তখন সখি দ্রৌপদিকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। আবার জানা যায় যে, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাবও হয়েছিল।
তবে অক্ষয় তৃতীয়ার পিছনে যাই ইতিহাস থাকুক না কেন, হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন কোন ভালো কাজ করলে সব সময় অক্ষয় পূন্য লাভ করা যায়। অন্যদিকে খারাপ কাজে লিপ্ত হলে অক্ষয় পাপ লাভ হয়। সেই কারণে অনেকেই এই দিনটিতে খুবই সাবধানে প্রতিটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। অনেকেই এই দিনে খুবই শুভ কাজ করার জন্য সুযোগ খুজে থাকেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার আচার অনুষ্ঠান এবং উদযাপন:
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সবাই একদিনভর উপবাস পালন করেন এবং ভক্তরা পূজা করেন এবং ভগবান বিষ্ণুকে অর্পণ করার জন্য হলুদ ও কুমকুম দিয়ে লেখা অবিচ্ছিন্ন চাল প্রস্তুত করে রাখেন।
আবার অনেক ব্যক্তি যাদের একটু সামর্থ্য ভালো সেই সমস্ত ব্যক্তি সোনা, রুপো, সম্পত্তি সেটা যে কোন সম্পত্তি হতে পারে, গাড়ি-বাড়ি, জমি, জায়গা এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিস কিনে থাকেন। বিবাহের জন্য এই দিনটি শুভ বলে মনে করা হয়। ভগবান কুবেরের উপাসনা একটি শুভ অনুষ্ঠান কেননা কুবের হলেন অফুরন্ত ধন-সম্পত্তির দেবতা।
আজও এমন ভাবে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বিশেষ করে কোন কিছু কেনা হোক বা না হোক সোনা কেনার ধুম পড়ে যায়। মনে করা হয় এমন সম্পত্তি কিনলে তা অক্ষত থাকবে এবং দিন বদলের সাথে সাথে সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে ঘর।
অক্ষয় তৃতীয়ার তাৎপর্য:
অক্ষয় তৃতীয়া বাঙালিদের জীবনে কতখানি পরিবর্তন ঘটিয়েছে সেটা এই দিনে শুভকাজ করার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় কেননা বিশ্বাস অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যদি ভালোভাবে ভালো কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তাহলে সেটা অক্ষয় হয়ে থাকে। এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন স্নানের পর ব্রাহ্মণকে কোন কিছু দান করলে সেটা অক্ষয় পূন্য অর্জন করা যায় বলে মনে করা হয়।
সেই ধারণা থেকে অনেক কৃপণ মানুষও একেবারে মুক্ত হস্তে দান ধ্যান করতেন। যদিও নাস্তিকদের মতে এটা ব্রাহ্মণ্যবাদ, পাপ পুণ্যের লোভ দেখিয়ে সাধারণের থেকে দানের সামগ্রী আদায় করার কৌশল ব্রাহ্মণদের।
সমস্ত রকম শুভ কাজ করার জন্য বাঙালিরা এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিকে বেছে আসছেন অনেকদিন আগে থেকে। তাছাড়া পয়লা বৈশাখের পাশাপাশি বাঙালির একাংশ হালখাতার অনুষ্ঠান কিন্তু এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই করে থাকেন।
তাছাড়া শুভ দিন এবং শুভ কাজ এই দুটি মিলিয়ে বর্তমানে সোনা কেনার রেওয়াজ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে তা চোখে পড়ার মতো। এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সোনার ব্যবসায়ীদের অনেক রকম ছাড় রাখতে হয় সোনার উপরে। কেননা এই দিন প্রচুর মানুষ সোনা কিনে থাকেন।
যেহেতু অক্ষয় তৃতীয়া হিন্দু এবং জৈন ধর্মের একটি বিশেষ উৎসব, সেক্ষেত্রে জৈন ধর্মে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ভগবানের ঋষভ দেবকে সম্মানিত করা হয়, প্রথম তীর্থঙ্কর যিনি কিনা আখের রস খেয়ে তার এক বছরের উপবাস সম্পন্ন করেছিলেন। এই দিনে যে সমস্ত মানুষ সারা বছরব্যাপী বিকল্প উপবাসের দিন বর্ষি টক অনুশীলন করে তারা আখের রস পান করে তাদের তপস্যা শেষ করে।
হিন্দু ধর্মের মানুষ এবং জৈন ধর্মের মানুষ সৌভাগ্যের আশায় সোনা কিনে থাকেন। আবেগ এবং আনন্দের সাথে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটি খুবই সুন্দরভাবে উদযাপন করেন। এই দিনটি এতটাই শুভ বলে মনে করা হয় যে, এই দিনে ক্রেতা, বিক্রেতা সকলেই একটি সফল লেনদেনের জন্য প্রস্তুত থাকেন।
অক্ষয় তৃতীয়া ঘরে ঘরে বিশেষভাবে পালন করা হয়, এর ফলে পূজা পার্বণ, ফল, ফুল, মিষ্টি, ঈশ্বরকে অর্পণ করার মধ্যে দিয়ে এটি একটি সুন্দর উৎসব। এই দিনটির জন্য অনেকে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন কেননা অনেকেই অনেক শুভ কাজ এই দিনটিতেই করার জন্য অপেক্ষা করেন।