মহাবীর জয়ন্তী 2023 (Mahavir Jayanti 2023 Date Time and Significance) 2023 মহাবীর জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন মহাবীর জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? মহাবীর জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য মহাবীর জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়ে সৃষ্টি আমাদের এই ভারত বর্ষ। সকলে মিলে মিশে থেকে সকলের উৎসব অনুষ্ঠানে সামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন প্রতিটি মানুষ। তেমনি একটি উৎসবের মধ্যে রয়েছে মহাবীর জয়ন্তী উৎসব। যিনি আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা শেখানোর জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন। সারা বিশ্বে জৈন ধর্মের অনুসারীরা তার দর্শনকে সম্মান জানাতে এই দিনটি পালন করে থাকেন।
জৈন সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মহাবীর জয়ন্তী অথবা মহাবীর জন্ম কল্যাণনক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সব থেকে বড় উৎসব হিসেবে পরিচিত। মহাবীরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহাবীর জয়ন্তী পালন করা হয়। জৈন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে তিনি ছিলেন এই ধর্মের ২৪ তম এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্কর অথবা ধর্মগুরু। মহাবীরের পিতা ছিলেন রাজা সিদ্ধার্থ এবং মাতা ছিলেন রানী ত্রীশলা।
তাহলে এবার জানা যাক, মহাবীর জয়ন্তীর ইতিহাস সম্পর্কে:
মহাবীর ছিলেন জৈন ধর্মের সব থেকে বড় গুরু এবং ২৪ তম এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্কর। আনুমানিক প্রায় ৫৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি বিহারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জৈনদের আধ্যাত্মিক গ্রন্থ অনুসারে চৈত্র মাসের ১৩ তম দিনে মহাবীর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, ভগবান মহাবীর কে জন্ম দেওয়ার সময় রানী কোন বেদনা অনুভব করেন নি। মাত্র ৩০ বছর বয়সে মহাবীর রাজকীয় জীবনযাত্রা, সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ পরিত্যাগ করে গৃহ ও পরিবার ত্যাগ করেছিলেন এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অনুসন্ধানে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন।
মহাবীর জয়ন্তীর তাৎপর্য ও গুরুত্ব:
জৈন মন্দির গুলি এই দিন অর্থাৎ মহাবীর জয়ন্তীর দিনে পতাকা দিয়ে সাজানো হয় এবং মহাবীরের মূর্তিকে অভিষেক করা হয় দুধ অথবা জল উৎসর্গ করে। তারপরে পালকিতে অথবা ঘোড়ার গাড়িতে সেই মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়াও ভক্তরা পবিত্র কবিতা পাঠ করে থাকেন।
ভগবান মহাবীর অহিংসা, প্রেম এবং মমতাবোধকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন তার ভক্তদের। এছাড়া পুরোহিতরা এই দিনে ভগবান মহাবীর এর শিক্ষা সম্পর্কে বর্ণনা করেন, যা শুনতে অনেকেই ভিড় জমান। ভক্তরা এই দিনটিতে ভগবান মহাবীরের নামে অভাবী এবং দরিদ্র মানুষজন দের খাবার খাইয়ে থাকেন।
জৈন মন্দির গুলি এই দিন দান, ধ্যান মূলক অনেক কাজ করে থাকে। তাছাড়া মহাবীরের ভক্তরা সততা এবং সাধারন জীবনযাত্রার পথ অনুসরণ করার শপথ গ্রহণ করেন এই দিন। এই দিনে ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করা হয় ঘরে ঘরে।
যে সমস্ত বিখ্যাত জায়গা গুলিতে মহাবীর জয়ন্তী উদযাপন করা হয়:
মহাবীর জয়ন্তী সমগ্র দেশ জুড়ে পালন করা হয়। তবে কয়েকটি জায়গা রয়েছে, যেখানে খুবই উৎসাহের সাথে এবং ধুমধাম ভাবে মহাবীর জয়ন্তী পালন করা হয়। সেই জায়গা গুলি নিচে দেওয়া হল:-
- গুজরাটের গিরনার জুনাগড় এবং পালি টানা,
- বিহারের ভাগলপুর এবং নালন্দা জেলায়,
- পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পরেশনাথ মন্দির,
- বিহারের পাওয়াপুরি,
- রাজস্থানের মাউন্ট আবু,
- রাজস্থানের শ্রী মহাবীর রাজাজি মন্দির
অন্যদিকে আবার মহাবীরকে বর্ধমান ও বলা হত। সংসারের সমস্ত মায়া ত্যাগ করে তিনি গৃহ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ১২ বছর ধরে তীব্র ধ্যান ও গুরুতর কঠোর অনুশীলন করেছিলেন। ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৭২ বছর বয়সে তিনি মোক্ষ লাভ করেন। আর এই কারণেই তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন।
বলা যেতে পারে তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা শেখানোর জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মহাবীর সারা বিশ্বের জৈন ধর্মের অনুসারীরা তার দর্শনকে সম্মান জানাতে এই দিনটি খুবই ভক্তির সাথে পালন করে থাকেন।
জীবনের পাঁচ গুন উপায়:
মহাবীর তিনি ছিলেন সকল মানুষের প্রেরণা। সারাজীবন তিনি তার শিষ্য দের কাছে পাঁচটি উপায় প্রচার করেছিলেন। সেগুলি হল:- অহিংসা (অহিংসা), অস্তেয় (অ- চুরি), সত্য (সত্য), ব্রহ্মচর্য (সতীত্ব) এবং অপরিগ্রহ (অসংসর্গ)। এবং তিনি যে শিক্ষাদান করেছেন সেই শিক্ষাকে জৈন আগাম বলা হয়।
সমগ্র ভারত জুড়ে এই মহাবীর জয়ন্তী কিভাবে পালন করা হয়?
মহাবীর জয়ন্তী যেহেতু জৈন সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রধান তাৎপর্য পূর্ণ উৎসব এবং ভারত সহ সারা বিশ্বে আধ্যাত্মিক উদ্দীপনা এবং উৎসবের চেতনায় পালন করা হয়।
মহাবীর জয়ন্তী ভক্তদের দাতব্য কাজ স্থাপন, পাঠ, রথে মহাবীরের শোভাযাত্রা এবং জৈন মুনি ও সাধ্বীদের আধ্যাত্মিক বক্তৃতা এই অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ বলা যেতে পারে। রথযাত্রার নামে ভগবান মহাবীরের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়।
ভক্তরা এই সময় ভজন পাঠ করেন। শোভাযাত্রা করার ঠিক আগে মহাবীরের মূর্তিকে বিশেষভাবে অভিষেক করা হয়, আনুষ্ঠানিক স্নান করার মধ্য দিয়ে। এছাড়া এই দিনে জৈনরা জৈন মন্দির গুলিতে গিয়ে থাকেন প্রার্থনা করার জন্য।
মহাবীর জয়ন্তী, এই দিনটি মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে পড়ে, গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে। তিনি রাজার ঘরে জন্মগ্রহণ করা সত্বেও সমস্ত ধন-সম্পত্তিকে সরিয়ে রেখে দিয়ে জীবনে জ্ঞান লাভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মোক্ষ লাভ করার জন্য গৃহ ত্যাগ করেছিলেন, অবশেষে তিনি তা অর্জন করতেও পেরেছিলেন।
মহাবীর যেহেতু খুবই উদার মনোভাবের ছিলেন, সকল মানুষকে উদারতার শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। সেই কারণে তার জন্মতিথিতে অর্থাৎ মহাবীর জয়ন্তীতে জৈন ধর্মের মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের দান করে থাকেন, পূন্য অর্জন করার জন্য। মনকে শান্ত করতে আর জীবনে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া লাগাতে সততা এবং সাধারণ জীবনযাত্রার পথ অনুসরণ করার শপথ নিয়ে থাকেন এই মহাবীর জয়ন্তীর দিন।
বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয় এই দিন উপলক্ষে। এই দিনটি খুবই শ্রদ্ধার সাথে এবং ভালোবাসার সাথে জৈন সম্প্রদায়ের মানুষেরা উদযাপিত করে থাকেন এবং তাদের কাছে মহাবীর জয়ন্তী হল একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সবথেকে বড় উৎসব।
তার জন্য জৈন মন্দির ও মঠ গুলিতে সারা বছর ধরে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকা হয়। মহাবীরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই জীবনে শান্তি ফিরে পেয়েছেন আর তাই তো মহাবীরকে তারা এতটা শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে থাকেন।