গঙ্গা দশেরা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Ganga Dussehra 2024: History and Significance

গঙ্গা দশেরা 2024 (Ganga Dussehra 2024 Date Time and Significance) 2024 গঙ্গা দশেরা ইতিহাস এবং জানুন গঙ্গা দশেরা কেন পালন করা হয়? গঙ্গা দশেরা তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গঙ্গা দশেরা গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

প্রতিটি উৎসব, প্রতিটি পুজো পার্বণ, মানুষের মনে প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসে। এছাড়া বিভিন্ন রকমের উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের জীবন অতিবাহিত করে থাকেন। এমনই একটি উৎসব হলো গঙ্গা দশেরা উৎসব, যা কিনা গঙ্গা দশহরা নামেও অনেকে জানেন। প্রতিটি মানুষের বিশ্বাস গঙ্গা দশেরার দিনে গঙ্গা স্নানে সমস্ত পাপ মুক্তি ঘটে।

গঙ্গা দশেরা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ganga Dussehra History and Significance
2024 গঙ্গা দশেরা ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Ganga Dussehra History and Significance

জৈষ্ঠ মাসের শুক্ল দশমী তিথিতে গঙ্গা দশেরা উৎসব পালন করা হয়। কথায় আছে ভগিরথ তার পূর্বপুরুষদের আত্মাকে বাঁচাতে এই তিথিতেই গঙ্গা কে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন, আর সেই কারণে গঙ্গা কে ভাগীরথী ও বলা হয়।

গঙ্গা দশরা উৎসব পালন করার মধ্য দিয়ে অনেকখানি তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। এই দিন হস্ত নক্ষত্র ও ব্যতিকপথ যোগও থাকে। এই দিনে গঙ্গাস্নান ও দান করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।

গান্ধী জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

গঙ্গা দশেরার ইতিহাস 2024:

প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী দশহরা তিথিকে পূর্ণ তিথিও বলা হয়েছে। গঙ্গা পাপনাশিনী, কলি – কলুষ নাশিনী, আর সেই কারণে ফল দিয়ে দেবী গঙ্গার পূজার বিধি গুলি সম্পন্ন করা হয়। যাতে দেবী সন্তুষ্ট হয়ে সমস্ত রকম পাপ কাজ থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারেন। এছাড়া এই দিনে মনসা পূজাও দেখা যায় অনেক জায়গায়। আবার এই দিনের বটুক ভৈরবের আবির্ভাব তিথি ও রয়েছে।

শাস্ত্র অনুসারে এবং কাহিনী অনুসারে মনে করা হয় যে, এই পৃথিবীতে গঙ্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমন করেছিলেন। এর ফলে রুক্ষ পৃথিবী হয়ে উঠেছিল শস্য শ্যামলা। আর গঙ্গার প্রভাবে পৃথিবী যাতে ধ্বংস না হয় তার জন্য মহাদেব গঙ্গাকে নিজের জটায় আবদ্ধ করে আস্তে আস্তে পৃথিবীর প্রয়োজন অনুসারে জল ছেড়েছিলেন। না হলে গঙ্গা পৃথিবীকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যেত।

মে দিবস ইতিহাস ও তাৎপর্য

দশহারা অথবা দশেরার কথার অর্থ: 

দশহরা কথার অর্থ হলো দশটি পাপ হরণ করা। এই দিন গঙ্গায় ডুব দিয়ে মানুষের সমস্ত পাপ মুক্তি ঘটে বলে মনে করা হয়। প্রচলিত আছে যে, দশহরা দিন গঙ্গায় দশবার ডুব দিলে দশটি পাব মুক্তি ঘটানো সম্ভব।

এই তিথিতে যে দশটি পাপ হরণ করা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:- পরের জিনিস চুরি করা, হিংসা, ঈর্ষা, অযথা প্রাণী হত্যা, অবৈধ প্রণয়, এগুলি দেহগত পাপ। তারপর রয়েছে পরনিন্দা, পরচর্চা, অহংকারী কথা, মিথ্যা কথা বলা এবং ভুল কথা বলা, এই চারটি বাক্য গত পাপ

তারপর রয়েছে অন্যের ক্ষতি বা অনিষ্ট করার চিন্তাভাবনা করা, পরের জিনিস পাওয়ার জন্য কামনা করা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি এই তিনটি হল মানসিক পাপ। যেগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবাই গঙ্গা দশেরার পূজা পালন করে থাকেন।

দশেরা পুজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

গঙ্গা দশেরা পূজার নিয়ম – রীতি:

  • এই দিন খুবই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গঙ্গা স্নান করতে হয়। যদি গঙ্গা স্নান করা সম্ভব না হয় তাহলে ঘরেতে স্নানের জলে গঙ্গা জল মিশিয়ে স্নান করতে পারেন।
  • যদি গঙ্গায় স্নান করা সম্ভব হয়, তাহলে স্নান করার পর গঙ্গা জলে কাচা দুধ অর্পণ করুন।
  • দশ রকম ফুল ও দশ রকম ফল সহযোগে গঙ্গা পূজা করতে হবে।
  • গঙ্গা দেবীর সামনে দশটি প্রদীপ জ্বালাতে হবে।
  • জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে এই দিনে ব্রত পালনের পাশাপাশি দশ সংখ্যার কিছু দান করা উচিত। তার পাশাপাশি গঙ্গা পূজার জন্য আনা জিনিসের সংখ্যাও যেন ১০ রকম হয়।
  • গঙ্গা দশেরার দিন গঙ্গাস্নান করা, দান করা এবং কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়।
  • এর পাশাপাশি রয়েছে সংসারে অর্থ লাভ এবং জীবনে আসে সমৃদ্ধি।

বিজয়া দশমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

গঙ্গা দশহারা উৎসবের তাৎপর্য 2024: 

বিশ্বাস করা হয় যে, মা গঙ্গা দেবী যেদিন পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সেদিন খুবই অনন্য এবং খুবই সৌভাগ্যশালী মুহূর্ত ছিল, আর ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে দেবী গঙ্গার পূজা করলে মানুষ ১০ প্রকার পাপ থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হতে পারেন।

গঙ্গা পূজার দিন মায়ের ধ্যান ও স্নানের দ্বারা কোন ব্যক্তি কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ এ ছাড়াও হিংসা, ছলনা, হত্যা, জালিয়াতির মত গুরুতর পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গঙ্গা মায়ের পূজার পাশাপাশি এই দিনে দান এর মতো পুণ্যের কাজও করে থাকেন অনেকেই।

এই তিথিতে যে নিয়ম গুলো মেনে চললে আপনার জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে: 

  • গঙ্গার প্রবাহ যাতে পৃথিবী ধ্বংস না হয় তার জন্য দেবাদিদেব মহাদেব গঙ্গাকে তার নিজের জটায় ধারণ করে ধীরে ধীরে গঙ্গাকে প্রবাহিত করেছিলেন। তাই এই দিন শিব পূজারও বিশেষ প্রচলন রয়েছে।
  • এই দিন শিবলিঙ্গ কে গঙ্গাজল দিয়ে অভিষেক করলে  তাতে মহাদেব খুবই সন্তুষ্ট হন এবং ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ হয়।
  • দশহরা গঙ্গা পূজার দিন গঙ্গা স্নান করা এবং আপনার সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যাওয়া একইসাথে সম্ভব, আপনি পূন্য অর্জন করতে পারবেন।
  • দশটি ফল দিয়ে দেবী গঙ্গার পূজা করুন, দেবী কর্মফল হরণ করে মুক্তি বা মহাফল প্রদান করবেন।
  • এই তিথিতে দান, ধ্যান করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এই দিনে দান করলে যে পূন্য অর্জন করা যায়, তার ফল শত জন্মে প্রবাহিত হতে থাকে।
  • সমস্ত রকম পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে গঙ্গা দশেরার দিন পূজা অর্চনা করতে হয়।
  • এই তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করুন এবং পূজার পরে নারকেল, কলা, ডালিম, বেদানা,  ডাল দান করুন। এর ফলে আপনার শত জন্মের পাপ ধুয়ে মুছে যাবে।
  • হিন্দু শাস্ত্র মতে এই দিন গঙ্গা স্নান করে দশটি প্রদীপ জ্বালিয়ে, ১০ টি ফল, দশটি ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীকে পূজা করলে আপনি দশটি পাপের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

রাধা অষ্টমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

গঙ্গা দশেরা পূজার দিন বাংলায় উৎসব ও মেলা: 

যেকোনো উৎসব অনুষ্ঠান এবং পূজা-পার্বণ উপলক্ষে অনেক জায়গাতেই অনুষ্ঠান, মেলা, উৎসব লেগেই থাকে। তেমনি গঙ্গা দশেরা পূজা উপলক্ষে অনেক জায়গাতে স্থানীয় মানুষদের তৎপরতায় মেলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

  • নদীয়া জেলার নাকাশিপাড়া থানার ডেকোআইল গ্রামে জৈষ্ঠ মাসে দশহারা তিথিতে খুবই ধুমধাম ভাবে পঞ্চানন্দ ঠাকুরের পূজা ও বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
  • এছাড়া নদীয়া জেলার অন্তর্গত চাপরা থানার জলকর মথুরাপুর গ্রামে জৈষ্ঠ মাসের দশহরা তিথিতে মনসা পূজা ও করা হয়ে থাকে।
  • বীরভূম জেলার অন্তর্গত দুবরাজপুর থানার বিরোরী গ্রামে গঙ্গা দশহারা উৎসব উপলক্ষে শ্রী শ্রী মনসা দেবীর পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
  • বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত ওন্দা থানার অমরপুর গ্রামে তিন দিনব্যাপী খুবই ধুমধাম ভাবে শ্রী শ্রী মনসা দেবীর পূজা করা হয় এবং সেই উপলক্ষে মেলা ও বসে।
  • তাছাড়াও বাঁকুড়া জেলার জয়পুর থানার ফুটকরা গ্রামে মনসা দেবীর পূজা ও মেলা হয়।
  • হুগলি জেলার অন্তর্গত আরামবাগ থানার রসুলপুর গ্রামে দুই দিন ধরে মনসা পূজা ও মেলা হয়ে থাকে। স্থানীয় মানুষজন এখানে খুবই আনন্দের সাথে সেগুলি উপভোগ করেন।
  • এছাড়া আরামবাগ এর কাছাকাছি মনসাডাঙ্গা গ্রামের শ্রী শ্রী মনসা পূজার শতাবৃতি চণ্ডীপাঠ ও মহামেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠান মানুষকে আনন্দ প্রদান করে থাকে। আর এমনই পূজা পার্বণের পাশাপাশি যদি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তার কথাই নেই। সেখানকার স্থানীয় মানুষজন, ছোট থেকে বড় সকলেই সেই উৎসবে গা ভাসিয়ে থাকেন। আর সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন সেই দিনটির জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top