শনি জয়ন্তী 2023 (Shani Jayanti 2023 Date Time and Significance) 2023 শনি জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন শনি জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? শনি জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য শনি জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
শনি মহারাজের পূজা অনেকেই করে থাকেন। সূর্যদেবের পুত্র এবং তিনি প্রত্যেকের কর্ম অনুসারে পুরস্কার অথবা শাস্তি প্রদান করে থাকেন। আর সেই কারণে শনি মহারাজকে সবসময় এর জন্য খুশি রাখতে হয়। প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয়ে আসছে শনি জয়ন্তী।
শনিদেবকে কর্মফলের দেবতা হিসেবে নিয়োজিত করেন স্বয়ং মহাদেব। যারা খারাপ কাজ করবেন তারা শনির রোষের মুখে পড়বেন, এমনটাই জানা যায়। সেই কারণে অনেকেই নিষ্ঠা ভরে শনি মহারাজের ব্রত পালন করেন।
শনি জয়ন্তীর ইতিহাস ও কাহিনী 2023:
অনেকের ধারণা অনুসারে অথবা জ্যোতিষ অনুসারে শনি একবার যদি কারোর উপরে রুষ্ট হয়ে যান, তাহলে তার জীবন একেবারে সম্পূর্ণ রূপে ছারখার হয়ে যেতে পারে। কারণ শনির রোষ খুবই ভয়ানক।
সেই কারণে তাকে প্রসন্ন করা খুবই জরুরী, আর তাই তো প্রতি শনিবার শনি মন্দির গুলির বাইরে উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মত, তাই না ! শনি মহারাজের বাবা হলেন সূর্যদেব এবং মায়ের নাম ছায়াদেবি, শনি জয়ন্তী কে সোমবতি অমাবস্যা ও বলা হয়ে থাকে, সেদিন সাবিত্রী ব্রত ও পালন করা হয়।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
বিশ্বকর্মার কন্যা ছায়ার পুত্র হলেন শনিদেব। তিনি ছায়া পুত্র বলেও অনেকের কাছে পরিচিত। মধ্যযুগীয় গ্রন্থ মতে শনি হলেন একজন দেবতা, যিনি দুর্ভাগ্যের অশুভ বাহক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সূর্যোদয়ের আগে অশত্থ গাছের পুজো করলে শনিদেবের আশীর্বাদ পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।
শনি জয়ন্তীর শুভ যোগে কোন শুভ কাজ করার জন্য অত্যন্ত ভালো বলে মনে করা হয়। এই সময় যেকোনো শুভ কাজের ভালো ফল খুবই ভালোভাবে লাভ করা যায়। একই সঙ্গে কোন কিছু দান করলে সেটা সংসারে আয় উন্নতি হিসেবে ফিরে আসে।
শনি জয়ন্তী তে কি কি করণীয়?
- এদিন সকালে স্নান সেরে মন্দির পরিষ্কার করুন। তারপর ফুল দিয়ে মন্দিরটি সুন্দর করে সাজান।
- সারাদিন উপবাস করতে পারেন, যদি আপনি উপবাস করতে চান তো, নির্দিষ্ট দিন তিথিতে সব নিয়ম মেনে পুজো করুন শনি দেবতার।
- শনি জয়ন্তীর দিন শনি চালিশা পাঠ করুন। সরষের তেল এর প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতার সামনে রাখুন। এতে জীবনের সকল দুর্বলতা কেটে যাবে।
- শাস্ত্র মতে শনিদেবের কৃপা পেলে সব কাজে সফল হওয়া যায়। তার সাথে সাথে মুক্তি পাওয়া যায় সমস্ত রকম জটিলতা থেকে।
- এছাড়া শাস্ত্রমতে জানা যায় যে, বিভিন্ন গ্রহের শুভ এবং অশুভ প্রভাব আমাদের জীবনের উপরে পড়ে। গ্রহের ভালো প্রভাবে যেমন সব সময় শুভ হয়, তেমনি খারাপ সময় শুরু হয় অশুভ প্রভাব। এর জন্য মেনে চলতে পারেন যথেষ্ট টোটকা।
- তেমনি নিষ্ঠা ভরে দেবতার পূজা করতে হবে। এই তিথিতে পালন করতে পারেন বিশেষ ব্রত।
- যেদিন শনি জয়ন্তী উৎসব পালন করবেন সেদিন স্নান করার পর পরিষ্কার পোশাক পরে গঙ্গাজল এবং তেল বা ঘি ব্যবহার করে সেই শনি প্রতিমাকে স্নান করানো উচিত।
- এরপর নয়টি মূল্যবান রত্ন অথবা নবরত্ন দিয়ে তৈরি করা কন্ঠহার অর্পণ করুন দেবতাকে।
- নীল অথবা কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণের ঘট, ফুল, বস্ত্র, লোহা, মাষ কলাই, দুধ, কালো তিল, গঙ্গাজল, সরষের তেল প্রভৃতি বস্তু শনিদেবের ব্রতের জন্য অবশ্যই অবশ্যই প্রয়োজন।
- এরপর শনিদেবের কাছে প্রার্থনা করুন এবং আপনার অন্যায় কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
- আপনার পরিবারকে রক্ষা করতে এবং কঠিন সময় আপনাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য প্রার্থনা করতে পারেন।
- প্রার্থনা করার পর শনি স্তোত্র তব করুন। এর অনেক শক্তি আছে বলে মনে করা হয়।
- যারা প্রচুর সমস্যায় ভুগছেন তারা এই দিনে যজ্ঞের আয়োজন করতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে দরিদ্র দের কালো কাপড়, কালো তিল বীজ, অথবা সরিষার তেল দান করতে পারেন।
শনি জয়ন্তীর তাৎপর্য 2023:
প্রতিটি উৎসবের কোন না কোন তাৎপর্য তো অবশ্যই থাকে। আর সেই কারণেই মানুষ খুবই ভক্তির সাথে সেই পূজা পার্বণ পালন করে থাকেন। তো চলুন শনি জয়ন্তীর তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক:-
- শনিদেব মানুষের জীবন থেকে সমস্ত বাধা দূর করেন এবং শান্তিপূর্ণ আর সমৃদ্ধিশালী জীবনের জন্য আশীর্বাদ প্রদান করেন।
- যে সমস্ত মানুষ জীবনে প্রচুর চ্যালেঞ্জ, অসুবিধা এবং আরও বিভিন্ন রকম সমস্যায় ভুগছেন, এই শনি জয়ন্তীর দিন অবশ্যই তাদের শনিদেবের পূজা করতে হবে এবং তার আশীর্বাদ চাইতে হবে।
- শনি মহারাজের ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে, শনিদেব মানুষের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলে। আর তাই তার প্রার্থনা করা উচিত এবং তার আশীর্বাদ পাওয়াটা খুবই প্রয়োজন জীবনে।
- শনিদেবের পুজো করলে জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর করা যায় বলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে মানুষের মনে বিশ্বাস রয়েছে।
- শনি জয়ন্তীতে শনি চালিশা পাঠ করলেও শুভ লাভ পাওয়া যায়।
- এছাড়া এদিন কোন শনি মন্দির এ গিয়ে সর্ষের তেলের প্রদীপ জালানো, এছাড়া কালো ছাতা, কালো জুতো, কালো কাপড়, অথবা কালো তিল, সরিষার তেল যদি দান করা যায় তাহলে সেটা সংসারের জন্য, জীবনের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
- শনি জয়ন্তীতে শনিদেবের আরাধনা করার জন্য মন্ত্র পাঠ করলে সকল পাপ ধুয়ে যায় বলে বিশ্বাস। এর ফলে পরিবারে আসে শান্তি, ব্যবসায় আসে শ্রীবৃদ্ধি, এবং ঘরে আসে অর্থ লাভ।
শনিদেবকে অনেকেই গ্রহরাজ বলেই চেনেন। শনি জয়ন্তির পাশাপাশি এই দিনের সোমবতী অমাবস্যা ও কিন্তু রয়েছে। আর এটি বছরের শেষ সোমবতী অমাবস্যা বলে জানা হয়। এছাড়া যদি এই দিন কেউ নদীতে স্নান করে দান করেন, তাহলে খুবই পূন্য অর্জন করা যায় বলে জানা যায়।
সাধারণত শনিদেবকে নিয়ে মানুষের মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক দেখা যায়। এমন অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, শনিদেব শুধুমাত্র মানুষের ক্ষতিই করেন কিন্তু আসলে শাস্ত্র অনুসারে শনি দেব ব্যক্তির কর্ম অনুসারে তার শাস্তি নির্ধারণ করে থাকেন।
তাই আপনি যেমন কর্ম করবেন তেমনটাই তো ফল ভোগ করতে হবে, তাই না ! তাই সেই কারণে যদি আপনি ভালো কাজ করেন এবং শনিদেবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন, তাহলে কোনরকম অসুবিধা আপনার জীবনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এছাড়া শনিদেবকে তুষ্ট না করলে অশুভ শারীরিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিক এবং আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় মানুষকে। তাই শনিদেবকে ন্যায়ের দেবতাও বলা হয়। তিনি অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করে থাকেন। শনিদেবকে সন্তুষ্ট ও খুশি করতে হলে শনি জয়ন্তীর দিন অশ্বত্থ গাছে সর্ষের তেলে একটি লোহার পেরেক অর্পণ করুন।
অশ্বত্থ গাছের চারপাশের সাতবার কাঁচা সুতো জড়িয়ে শনি মন্ত্র জপ করলে শনি দেব আশীর্বাদ করে থাকেন। অশ্বত্থ গাছের নিচে সরিষার তেলের প্রদীপ জ্বালান, এছাড়াও গাছের নিচে শনি চালিশা পাঠ করতে পারেন। এই দিন বা প্রতি শনিবার গরুকে কালো তিল আর গুড় খাওয়ালে শনিদেব ও ভগবতী প্রসন্ন হয়ে থাকেন।
এছাড়া গ্রাম অঞ্চলে শনি মহারাজের মন্দিরে প্রতি শনিবার শনিদেবের পূজার জন্য বাড়ির মেয়েরা ও মায়েরা শনিদেবের পূজার ব্রত করে থাকেন। তবে ছেলেরাও কিন্তু এই পূজাতে অংশগ্রহণ করেন। ফল, ফুল, সিন্নি, মিষ্টি, সহযোগে শনিদেব কে নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়।
শনি মহারাজের পূজার একটি বিশেষ অংশ হল, এই পূজার প্রসাদ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করানো যায় না। ঘরের বাইরে থেকেই সেই প্রসাদ বিতরণ এবং খাওয়ার পর প্রসাদের পাত্র গুলিও ধুয়ে তবেই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়।
এমন পূজাতে সকাল থেকেই তোরজোড় শুরু হয়ে যায়। এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনই চলতে থাকে। সকাল থেকে উপবাস করার পর প্রসাদ বিতরণের পরেই সেই উপবাস ভঙ্গ করা হয়। ছোট থেকে বড় সকলেই শনি মহারাজের প্রসাদ নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন। জীবনে সুখ, শান্তি, বজায় রাখার জন্য ঘরের নারীরা প্রতি শনিবার শনি মহারাজের পূজার জন্য উপবাস করে, ব্রত পালন করে থাকেন।