হরতালিকা তীজ 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Hartalika Teej 2024: History and Significance

হরতালিকা তীজ 2024 (Hartalika Teej 2024 Date Time and Significance) 2024 হরতালিকা তীজ ইতিহাস এবং জানুন হরতালিকা তীজ কেন পালন করা হয়? হরতালিকা তীজ তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য হরতালিকা তীজ গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

কতই না উৎসব আমাদের জীবনে, প্রতি মুহূর্তে কোন না কোন উৎসব অনুষ্ঠান আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রুতভাবে জড়িত। প্রায় প্রতিটি তিথিতেই কোন পূজার ব্রত পালন করা হয়। তেমনি একটি ব্রত হল হরতালিকা তীজ।

হরতালিকা তীজ ইতিহাস ও তাৎপর্য - Hartalika Teej History and Significance
2024 হরতালিকা তীজ ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Hartalika Teej History and Significance

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে হিন্দুদের বিশ্বাস যে, হরতালিকা তীজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি তীজ এবং এই দিনে ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর পূজা করলে দাম্পত্য সুখ এবং সংসারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে।

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, নির্জলা ব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে ভগবান শিব ও পার্বতীর নামে একটি সংকল্প গ্রহণ করার পর এই হরতালিকা উৎসব শুরু হয়। এই দিন মাটি থেকে প্রতিমা তৈরি করে পূজা করা হয়।

আবার অনেকেই হরতালিকা তীজকে বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানানোর উৎসব হিসেবে মনে করেন। বর্ষার আগমনে আকাশে বাতাসে উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায়। এই বর্ষাতে বিভিন্ন রকমের পূজা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। অঝোর ধারায় বৃষ্টির সাথে বাঙালির মন পূজা-পার্বণ ও উৎসবে মেতে ওঠে।

চারিদিক শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে পৃথিবী, যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই দেখা যায় সবুজে সবুজে ভরা। আর এমনই বর্ষার মধ্যে ভাদ্র মাসে অনুষ্ঠিত এই জনপ্রিয় হরতালিকা তীজ উৎসব। বর্ষা সুমধুর পরিবেশকে আরো বেশি সুন্দর করে তোলে এই উৎসব।

এই উৎসব রাজস্থান, বিহার, উত্তরাখন্ড, ছত্রিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড এবং মধ্যপ্রদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।

শিশু দিবস ইতিহাস ও তাৎপর্য

হরতালিকা তীজ উৎসব কেন পালন করা হয়?

ভারতে তিন ধরনের তীজ উৎসব পালন করা হয়। শ্রাবনী তীজ, কাজরী তীজ এবং হরতালিকা তীজ। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে হিন্দু দের বিশ্বাস যে, হরতালিকা তীজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীজ এবং এই দিনে ভগবান শিব, দেবী পার্বতীর পূজা করা হয়। যার ফলে সংসারে ফিরে আসে সুখ-সমৃদ্ধি। তীজ শব্দের অর্থ হলো তৃতীয়, ভাদ্র মাসে শুক্ল পক্ষে তৃতীয়া তিথিতে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রত পালন করা হয়।

বিবাহ পঞ্চমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

হরতালিকা তীজ তে পালনীয় বিষয় গুলি:

  • এই দিনে খুবই ভোরে অর্থাৎ একেবারে কাক ভোর, সূর্য উদয়ের কয়েক ঘন্টা আগে উঠতে হবে। তারপর স্নান সেরে পরিষ্কার কাপড় পড়ে, উপাসনালয়ে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেটি সাজাতে হবে অর্থাৎ মন্দির সাজাতে হবে।
  • এটা বিশ্বাস করা হয় যে, বিবাহিত মহিলাদের অবশ্যই তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য এই হরতালিকা তীজ এর উপবাস পালন করা প্রয়োজন।
  • আর সেই কারণেই তো মহিলারা সুন্দর পোশাক পরেন এই দিনে, তারপর গয়না, মেহেন্দি দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন।
  • তারপর ভগবান শিব ও পার্বতীর পূজা করেন। নির্জলা ব্রত করণের জন্য ভগবান শিব ও পার্বতীর নামে একটি সংকল্প গ্রহণের পর এই ব্রত শুরু হয় অর্থাৎ পূজা শুরু হয়।
  • এই দিন মাটি থেকে প্রতিমা তৈরি করে পূজা করা হয়।
  • আবার এই দিনে মহিলারা সবাই মিলে একত্রিত হয়ে লোকগীতি এবং নৃত্য পরিবেশন করেন।
  • স্তত্র গান, মন্ত্র জপ, করেন এবং উৎসাহের সঙ্গে এই হরতালিকা তীজ এর দিনটি উদযাপন করে থাকেন।

গীতা জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

হরতালিকা তীজ এর উৎসবে কি কি খাবার তৈরি করা হয়?

প্রতিটি উৎসবে মিষ্টান্ন হল অতি অবশ্যই প্রয়োজন, তাই তো মিষ্টি ছাড়া ভারতীয় উৎসব এর কথা কল্পনা করাই যায় না, তাই না !  তাই আপনি যদি ফল আহার উপবাস পালন করেন, তবুও কিন্তু এই দিনে সুস্বাদু সাত্ত্বিক খাবার প্রস্তুত করা হয়। বিভিন্ন রকমের ফল, মিষ্টি, প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়। যা পরে পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে।

এই দিনে যে সমস্ত খাবার গুলি প্রস্তুত করা হয় সেগুলোর মধ্যে হল:-  পঞ্চামৃত, ক্ষীর, গুজিয়া, হালুয়া, ডাল বাটি চুর্মা, লাড্ডু, কচুরি এবং মিরচি পকোড়া অথবা কাঁচা লঙ্কার পাকোড়া। উৎসব উপলক্ষে মিষ্টিমুখ, মিষ্টি বিতরণ তো রয়েছেই।

এই উৎসব সাধারণত অন্ধ্রপ্রদেশে গৌরী হাববা নামে পরিচিত। এছাড়াও এটি উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড ও বিহারের মতো দেশের উত্তর এবং জাপানের বিভিন্ন জায়গা গুলিতে পালিত হয়।

গুরু গোবিন্দ সিং জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

হরতালিকা তীজ এর তাৎপর্য 2024:

এটি বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী পার্বতীর পিতা তাকে ভগবান বিষ্ণুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। তবে যেহেতু তিনি ভগবান শিবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলেন তাই তিনি একটি ঘন জঙ্গলে আশায় নেন এবং সেই কারণে প্রতিটি বিবাহিত এবং অবিবাহিত মেয়েরা তার স্বামীর দীর্ঘায়ু জীবনের জন্য সারাদিন জল পর্যন্ত গ্রহণ না করে বলা যায় নির্জলা উপবাস করে থাকেন।

তার পাশাপাশি যে সমস্ত কুমারী মেয়েরা নিজের পছন্দমত স্বামী পাওয়ার জন্য মন কামনা করে থাকেন তারা এই ব্রত পালন করার মধ্যে দিয়ে নিজেদের মনের মতো স্বামী পেতে পারেন।

হরতালিকা তীজ হল একটি শুভ উৎসব, যা কিনা হিন্দু বিবাহিত মেয়েদের দ্বারা উদযাপিত করা হয়। সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য এবং স্বামীর দীর্ঘ আয়ু কামনার জন্য এই ব্রত পালন করা হয় সাড়ম্বরে। বর্ষা যেমন পৃথিবীকে শস্য শ্যামলা করে তোলে, তেমনি বর্ষার আগমনে এই উৎসব হয়, তাই হরতালিকা তীজকে বর্ষা আগমনের উৎসবও বলা হয়।

তাছাড়া পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, হরতালিকা তীজ এর দিনে নির্জলা উপবাস রাখলে মনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয় এবং সংসারের ধনসম্পত্তি বৃদ্ধি হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য তে উন্নতি লাভ করা যায়।

তো এইভাবে প্রাচীনকাল থেকে তিন রকমের তীজ এর মধ্যে হয়তালিকা তীজ উৎসবটি বিবাহিত এবং অবিবাহিত মহিলারা খুবই ভক্তির সাথে পালন করে থাকেন। যেহেতু বর্ষার সময় এই উৎসব পালিত হয়, তাই বর্ষা মুখর দিনে চারিদিকে উৎসব উৎসব আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top